ঢাকা | জুলাই ২১, ২০২৫ - ৮:১৮ পূর্বাহ্ন

গ্রাফিতির আল্পনায় ৩৬ জুলাই 

  • আপডেট: Saturday, July 19, 2025 - 2:33 pm
জাগো জনতা অনলাইন।।  “জেন-জি’র প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি: গ্রাফিতির আল্পনায় ‘৩৬ জুলাই” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলরুমে নীতি গবেষণা কেন্দ্র (এনজিকে) উদ্যোগে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নীতি গবেষণা কেন্দ্র এবং শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. খান শরীফুজ্জামান তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “এখানে যারা আজকে উপস্থিত, তারা কোনো দলের নয়, কোনো মতের নয়; তারা হলো জাতির আনসাং হিরো, যাদের কণ্ঠস্বর সচরাচর মিডিয়াতে আসে না। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণআন্দোলনে তাদের নিঃস্বার্থ অংশগ্রহণ ছিল যুগান্তকারী। তাই তাদের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই আমরা বুঝতে পারি জেন-জি’র স্বপ্ন, প্রত্যাশা ও বাস্তবতার ফারাক।”

গ্রাফিতি প্রেজেন্টেশন-এ সাংবাদিক ও গবেষক মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান আন্দোলনের স্মৃতি ও ভাবনাগুলো গ্রাফিতির মাধ্যমে চিত্রিত করেন। তিনি বলেন, “এই প্রজন্মের আন্দোলনের ভাষা রক্ত নয়, রং। দেয়ালের রেখায় তারা লিখেছে প্রতিবাদ, প্রতিশ্রুতি এবং প্রত্যয়ের কথা।”

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুখ্য আলোচক এডভোকেট মানজুর আল মতিন বলেন, “তরুণদের এই আত্মত্যাগ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো। রাষ্ট্র যদি এই কণ্ঠস্বর না শোনে, তবে নীতিনির্ধারণ হবে একচোখা, একমুখী।”

সভায় বক্তব্য রাখেন পাঁচ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সরকারি বিশ্বিবদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি মাধ্যম, বাংলা মাধ্যম এবং মাদ্রাসা শিক্ষাপদ্ধতির শিক্ষার্থীরা। তারা তাঁদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, প্রত্যাশা এবং এক বছরের ব্যবধানে প্রাপ্তির অভাব নিয়ে অকপটে মত প্রকাশ করেন।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম আন্দোলনের পরে প্রশাসন ও রাজনীতি আমাদের কণ্ঠ শুনবে। কিন্তু আজও দুর্নীতি, দলীয়করণ আর নিপীড়ন থেমে নেই।”

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বলেন, “আমরা চাই নিরাপদ, অংশগ্রহণমূলক, এবং শ্রদ্ধাপূর্ণ শিক্ষা পরিবেশ – যেখানে মত প্রকাশ অপরাধ নয়।”

বাংলা মাধ্যমের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আন্দোলনে আমাদের রক্ত ঝরেছে, এখন চোখে পানি ঝরে যখন দেখি কিছুই বদলায়নি। আমরা শুধু নতুন সরকার চাই না, চাই নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি।

ইংরেজি মাধ্যমের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সবসময় রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছিল, কিন্তু ৩৬ জুলাই আমাদের বদলে দিয়েছে। আমরা বুঝেছি, রাজনীতি মানে আমাদের জীবন, মর্যাদা আর স্বাধীনতা। এখন আমরা এমন একটি দেশ চাই, যেখানে আমাদের মতামত লুকিয়ে রাখতে হবে না বা কথা বলার জন্য ভয় পেতে হবে না।
মাদ্রাসা শিক্ষার এক প্রতিনিধি বলেন, “আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে মূলধারায় নিতে হবে। আমরাও সমানভাবে রাষ্ট্রের নাগরিক। আন্দোলনে আমরা সবাই একসঙ্গে ছিলাম, কিন্তু এখনো সমাজ আমাদের আলাদা চোখে দেখে।”

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নীতি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাকিল আহম্মেদ।

তিনি বলেন, “এই প্রজন্ম কেবল প্রতিবাদ করতে জানে না, তারা নীতি প্রস্তাব করতেও প্রস্তুত। আমাদের দায়িত্ব হলো সেই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেওয়া।”
অনুষ্ঠানে আরো অংশ নেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্বকারী শিক্ষার্থীরা, বিশিষ্ট আইনজীবী, গবেষক, শিক্ষক ও মিডিয়া কর্মী।