হামলা-মামলা দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না: মির্জা ফখরুল
জাগো জনতা অনলাইন: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,হামলা-মামলা দিয়ে আমাদের থামানো যাবে না, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন দমন করা যাবে না।’
শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকের এই মহাসমাবেশ পরিবর্তনের মাইলফলকের বাংলাদেশ গড়ার সমাবেশ। এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এই গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছিল এই আওয়ামী লীগ। জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে তার আদর্শ গণতন্ত্রকে বিলীন করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারই উত্তরসূরী খালেদা জিয়া ৯০-এ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে করেছিলেন।’
‘এখন বক্তব্য দেয়ার সময় নেই, মাঠে আছি। এখন একটাই লক্ষ্য গণতন্ত্রের বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে,’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলেছিল, ১০ টাকা সের চাল খাওয়াবে, কিন্তু এখন চালের দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা। ঘরে ঘরে চাকরি দিবে কিন্তু এখন ২০ লাখ টাকা ঘুষ না দিলে চাকরি হয় না। আবার আওয়ামী লীগ না করলে চাকরি হয় না। আমাদের দেশের মানুষেরা কষ্ট করে ডলার রিজার্ভ বাড়ায় আর তারা তা বিদেশে পাচার করে। এরা অমানবিক সরকার।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকার সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা নির্বাচন ব্যাবস্থা শেষ করে দিয়েছে। এদের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। দফা এক, দাবি এক- শেখ হাসিনার পদত্যাগ। পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গ্রেফতার করে আমাদের থামানো যাবে না, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন দমন করা যাবে না।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এই সরকারের সময় নেই, সময় শেষ।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীরা সারাদেশ থেকে এসেছে। তারা হোটেল উঠেছে। কিন্তু এই সরকারের পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে প্রায় হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে আটক করেছে। তাতে আমাদের থামাতে পেয়েছে? জনসমুদ্র থেকে এক হাজার মানুষ জেলে নিলে কি থামাতে পারবে? না। এবার জনগণ বেরিয়ে এসেছে, থামাতে পারবে না। থামাতে চাইলে একটাই কথা- পদত্যাগ করতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘এ সরকারের প্রতি দেশের মানুষ অনাস্থা প্রকাশ করেছে। বিএনপি কখনো সংঘাতের রাজনীতি করে না। আমরা সংঘাত এড়াতে গতকালের সমাবেশ আজ করছি। আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়েছে। সরকারকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। আমরা এ সরকারের প্রতি অনাস্থা আনছি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই সরকারকে নামাতে যুদ্ধের ময়দানে নামতে হবে। গণতন্ত্রের উদ্ধারের জন্য যারা থাকবে তাদের অবশ্যই যোদ্ধার সার্টিফিকেট দিতে হবে। এ বিষয়টি আমি তুলে ধরবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘কথা এক- শেখ হাসিনার পদত্যাগ। ফয়সালা করতে হবে রাজপথে। শেখ হাসিনাকে বিদায় করে ঘরে ফিরতে হবে। এই সরকারকে কেউ রাখতে পারবে না। দেশের মালিক ভারত, চীন বা রাশিয়া নয়, এ দেশের মালিক জনগণ।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আর খালেদা জিয়াকে কারো দয়ায় নয়, আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করবো ইনশাআল্লাহ।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে শেষ হলে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অডিও কলে মহাসমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।
মহাসমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, মীর নাছির উদ্দিন, নিতাই রায় চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, মোহাম্মদ শাহজাহান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ভিপি জয়নাল, মিজানুর রহমান মিনু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, আব্দুস সালাম আজাদ, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।
এর আগে, দুপুর ২টার পরে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে এ মহাসমাবেশের শুরু হয়।
দুপুর ১টার দিকে বৃষ্টি নামলেও নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে অবস্থান করেন। এখানে জুমার নামাজ আদায় করেন আগত নেতাকর্মীরা। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। নয়াপল্টন হয়ে ওঠে জনসমুদ্র।
মৎস্য ভবন, কাকরাইল, মালিবাগ, মতিঝিল, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, মগবাজার, দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে নেতাকর্মীদের অবস্থান। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে সমাবেশ। নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সমাবেশে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।