সৌন্দর্য উপভোগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সূর্যমুখীর মিষ্টি হাসি

এনামুল হক এনা : উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর বাউফল ও দশমিনা উপজেলায় সূর্যমুখীর বাম্পার ফলনে সর্বত্র ফুলের হাসি শোভা পাচ্ছে। আর সে হাসিতে যেন কৃষকের মুখেও ফুটেছে স্বস্তির হাসি। ব্যাপক চাহিদার বিপরীতে কম খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় দিন দিন সূর্যমুখী চাষে কৃষক আগ্রহী হচ্ছে।
দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠে যতদুর চোখ যায়, শুধু সবুজ আর হলুদ ফুলের সমারোহ। বাউফল ও দশমিনা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠ জুড়ে দেখা মেলে চোখ জুড়ানো মনোমুগ্ধকর হলুদের সমারোহ। সবুজ গাছের মাথায় থাকা এসব হলুদ ফুল বাতাসে দোল খাচ্ছে, যেন মনের সবটুকু উঝার করে তারা দুলছে।
সূর্যের দিকে তাকিয়ে হাসিমাখা মুখের এক ফুলের নাম সূর্যমুখী। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজারো সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করার।
পুরো খেত জুড়ে ফুলে ফুলে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে মধু আহরণকারী তথা মৌমাছি আর প্রজাপতি। সেই দৃষ্টিকাড়া ফুলের সৌন্দর্য দেখতে সকাল ও বিকেলে ছবি তুলতে ভিড় করছে সব বয়সের নারী-পুরুষ। বেসরকারি থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তারাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসছেন সূর্যমূখী খেতে।
সূর্যমুখী ফুলের খেতগুলো এখন সৌন্দর্যপ্রেমীদের কাছে দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আসছেন, কেউ বা আসছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। সুখস্মৃতি ধরে রাখতে নানা ভঙ্গিতে মুঠোফোন কিংবা ক্যামেরায় ছবি তুলছেন তারা।
বাউফলের জোড়াপোল এলাকায় সূর্যমুখী বাগানে ঘুরে দেখতে আসা নাজমিন জামান মুক্তি বলেন, ‘সূর্যমুখীর ফুলে-ফুলে ছেয়ে গেছে বাগান। একটু বাতাসেই নজরকাড়া সূর্যমূখি ফুলগুলোর দোল খাওয়ার ব্যাপারটি নিঃসন্দেহে মুগ্ধতা ছড়ায়। এক অন্যরকম আনন্দের প্রভাব ফেলে যে কারো হৃদয়ে। সেজন্য প্রিয়জনদের নিয়ে দেখতে ও মধুর স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি তুলেছি। এখানে এসে ভীষণ ভালো লেগেছে।’
সূর্যমুখী বাগান দেখতে আসা নাজমা আহসান বলছেন, ‘হলুদ রঙের ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন আর মন মাতানো ঘ্রাণ মুখরিত হয়ে উঠেছে এখানকার পরিবেশ। প্রিয়জনদের সাথে একটু মুক্ত হাওয়ায় বেড়াতে ও বাগানভরা ফুল দেখতে এখানে আসা। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব সুন্দর লাগছে। তাই মনোরম দৃশ্য আজন্ম মধুর স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখতে ফ্রেমে বন্দি করছি।’
বাউফল ও দশমিনা উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, দশমিনা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন আর বাউফলের ১৫টি ইউনিয়নের কৃষকরা সূর্যমুখী চাষ করছেন। এই বছর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে উচ্চ ফলনশীল সূর্যমুখী চাষ করা হয়। উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে বীজ, সার ও ওষুধসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হচ্ছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর দশমিনা উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখীর চাষ করা হয়েছিল। আর চলতি বছর ৪৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়। জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা বাউফলে ১৮৮ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখি চাষ করছে কৃষকরা। মূলত: চাহিদা এবং ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছেন। অনেক জমিতে কৃষি চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যে কৃষকদের বাড়তি প্রণোদনা দেয়া হয়।
বাউফল ও দশমিনা উপজেলার সূর্যমুখী চাষি মেহেদি, সুলতান সরদার, জাফর, আলম সরদার, মোতাহার চৌকিদার ও নজরুল মৃধা বলেন, গত বছর পরীক্ষামূলক আমরা ২ একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে ফলন ভালো পেয়েছি। তাই এ বছর ১০ একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। যদিও শুরুর দিকের বৃষ্টিতে কিছু বীজ নষ্ট হয় তবে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ভালো ফলন হয়েছে।
দশমিনার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের গছানী সূর্যমুখী চাষি কাজী কামাল (৪০) বলেন, গতবছরের তুলনায় আবহাওয়া ভালো থাকায় সারা ক্ষেতে ফুল আর ফুল ধরেছে। আশা করি এবার অনেক লাভবান হবো। সূর্যমুখী চাষে আমি ভীষণ খুশি আছি।
এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেদোয়ান উদ্দিন তালুকদার ও দশমিনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাফর আহমেদ জানান, এই বছর দশমিনা ও বাউফল উপজেলায় সূর্যমুখীর ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আর গত বছরের তুলনায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দ্বিগুণ ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।