ঢাকা | জুলাই ৪, ২০২৫ - ৯:৪১ অপরাহ্ন

শিরোনাম

সুপ্রদীপ চাকমার ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রতিষ্ঠা চেষ্টার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে পিসিসিপির বিক্ষোভ

  • আপডেট: Friday, July 4, 2025 - 3:41 pm

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।। ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার বক্তব্য ও সংস্কৃতি উপদেষ্টার লাগামহীন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যােগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী কর্তৃক “ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা কর্তৃক ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের দাবিতে প্রদত্ত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে  শুক্রবার (৪ জুলাই)  পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পিসিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে পিসিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন এর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সি: সহ-সভাপতি আসিফ ইকবাল।

মানববন্ধনে  আরও বক্তব্য রাখেন কামরুল ইসলাম কাদের,  পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখা, কামাল উদ্দিন।

সমাবেশে পিসিসিপি নেতৃবৃন্দ বলেন, ২৩ জুন অনুষ্ঠিত ঐ সভায় ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০’ সংশোধনের লক্ষ্যে ‘নৃ-বৈচিত্র্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অধ্যাদেশ, ২০২৫ (প্রস্তাবিত)’ বিষয়ে আলোচনা হয় এবং সাতটি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন করে ‘জাতি-বৈচিত্র্য ইনস্টিটিউট’ রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, “আমরা আদিবাসী শব্দটি চাচ্ছি শুধু আমাদের আইডেন্টিফিকেশনের জন্য। তার এই বক্তব্য দ্ব্যর্থবোধক এবং সংবিধানবিরোধী অবস্থানকে উসকে দেয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬(২) অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে: “রাষ্ট্রের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিক হইবে।” একটি দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি কর্তৃক এমন বক্তব্য প্রদান শুধু অনভিপ্রেতই নয়, বরং তা জাতিগত উত্তেজনা এবং বিভাজনের রাজনীতিকে উৎসাহিত করতে পারে।
বাংলাদেশ একটি একক ও অভিন্ন জাতিসত্তাভিত্তিক রাষ্ট্র। বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অধিকারকে সরকার দীর্ঘদিন ধরে সম্মান জানিয়ে আসছে। কিন্তু এই অধিকার চর্চা যদি একক জাতিসত্তার বিপরীতে সংবিধানবিরোধী রাজনৈতিক দাবিতে রূপ নেয়, তাহলে তা ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত।
আমরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন যে, সভায় ৭(ঘ) ধারা সংশোধনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভুক্ত ৬ জন প্রতিনিধির প্রস্তাব সংসদীয় প্রতিনিধিত্বের কাঠামোতে একপাক্ষিকতা তৈরি করতে পারে। এতে পার্বত্য অঞ্চলের বাঙালি জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব সংকুচিত হবে এবং দীর্ঘদিনের সহাবস্থানের চর্চা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
সমাবেশে চারটি দাবি জানায় পিসিসিপি
১. সংবিধানবিরোধী ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার ও প্রচার বন্ধে সুস্পষ্ট রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।
২. কোনো ব্যক্তি যদি দায়িত্বে থেকেই রাষ্ট্রীয় নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তার বিরুদ্ধে যথাযথ প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অধিকার সংরক্ষণ হোক সংবিধানিক কাঠামোর ভেতরে—সাংগঠনিক আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে নয়।
৪. পার্বত্য অঞ্চলে বাঙালি ও অন্যান্যের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহাবস্থান ও সমবিকাশ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

সমাবেশে পিসিসিপি নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা এর আগে বিভিন্ন বরাদ্দে অনিয়ম ও সাম্প্রদায়িকতা করেছেন, তাই সুপ্রদীপ চাকমাকে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে আহব্বান জানাচ্ছে পিসিসিপি। পাহাড়ে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখতে হলে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া বন্ধ করতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার। তারা যদি বিতর্কিত কোন সিদ্ধান্ত নেয় পাহাড়ের বিষয়ে তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) দেশ প্রেমিক ছাত্র-জনতাকে নিয়ে দুর্বার গণ আন্দোলন গড়ে তুলবে।
পিসিসিপি নেতৃবৃন্দরা আরো বলেন, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সশস্ত্র অবস্থায় ঢুকে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে শ্রমিকদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি ও সম্প্রীতি নষ্ট করার দৃষ্টান্ত দেখালো পাহাড়ি চাকমা সন্ত্রাসীরা।
এই সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে পার্বত্য অঞ্চলে কেউ নিরাপদ নয়, পাহাড়ের শান্তি-সম্প্রীতি ও আস্থা-বিশ্বাস ঠিক রাখতে হলে সকল জাতিগোষ্ঠীকে এগিয়ে আসতে হবে, সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কোন জাতিগোষ্ঠী যাতে প্রশ্রয় না দেয় সেজন্য সকলের সজাগ থাকতে হবে।
সেই সাথে রাবিপ্রবিতে সশস্ত্র মহড়া দেওয়া প্রত্যেকটি পাহাড়ি সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছে পিসিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।
এছাড়াও পাহাড়ের সকল জাতিগোষ্ঠীর মানুষের নিরাপত্তায় পিসিজেএসএস ও ইউপিডিএফ এর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে তাদের প্রত্যেকটি সশস্ত্র ক্যাডারকে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছে পিসিসিপি।
এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও নিরাপত্তা যদি আবারো বিঘ্ন করার চেষ্টা করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা তাহলে পিসিসিপি কঠোর আন্দোলন ও প্রতিহত করবে।