ঢাকা | নভেম্বর ২৩, ২০২৪ - ৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

সাভারে সাংবাদিককে মারধর ও হুমকির প্রতিবাদে মানববন্ধন

  • আপডেট: Thursday, May 30, 2024 - 7:17 pm

ইউসুফ আলী খান।।

ঢাকার অদূরে সাভারে কারখানা দখলের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও নাশকতা মামলার আসামির তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিককে হুমকির ঘটনার প্রতিবাদে ও হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করেছেন সাভার ও আশুলিয়া কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বেলা ১১টায় সাভার প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।

আহত সাংবাদিক হলো ইংরেজি দৈনিক দ্যা ডেইলি স্টার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল নাগরিক টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি আকলাকুর রহমান আকাশ এবং হুমকির শিকার সাংবাদিক হলো দৈনিক দেশ রূপান্তর ও ডেইলি অবারজারভারের সাভার প্রতিনিধি মোঃ ওমর ফারুক।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা আজ হুমকির মুখে। দেশে সাংবাদিকেরা সংবাদ সংগ্রহ করতে নানান সময়ে পরিকল্পিত হামলার শিকার হচ্ছেন। এতে সমাজের নানান অসংগতি তুলে ধরা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি না হলে অপরাধপ্রবণতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা গেলে দুর্বৃত্তরা নতুন করে অপরাধ করতে ভয় পাবে। পুলিশ বিভাগকে সঠিক তদন্ত করে প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য দাবি জানানো হয়।

সাভার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ আচার্য্য বলেন, আমরা এর আগেও দেখেছি আমাদের অনেক সাংবাদিকের উপর বিভিন্ন মামলা-হামলার ঘটনা ঘটেছে। বেঙ্গল সিরামিক কারখানার মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে কারখানার ভেতর গন্ডগোলের খবর সংগ্রহ করতে গেলে আমাদের সহকর্মী আকাশের উপর হামলা চালিয়ে তাঁকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। আমরা সাংবাদিকরা তো কারখানার মালিক হতে চাইনা আমরা গিয়েছি তথ্য সংগ্রহ করতে। এরজন্য কি আমাদের মার খেতে হবে? অন্যদিকে আমাদের আরেক সহকর্মী ওমর ফারুক এক জামায়াত নেতার তথ্য জানতে চাওয়ায় এক কারখানা মালিক তাঁকে গালাগাল ও পুলিশে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। সাংবাদিকদের তথ্য চাওয়াটা কি অপরাধ? আমরা কি অপরাধী? আমি এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জন্য দাবী জানাচ্ছি।

সাভার প্রেসক্লাবের সভাপতি দৈনিক ফুলকির সম্পাদক ও প্রকাশক নাজমুস সাকিব বলেন, আমরা সাংবাদিকরা তো অপরাধী না। আমরা একটি অপরাধ সংগঠিত হলে সেখানে তথ্য সংগ্রহ করতে যাবো এটাই স্বাভাবিক। আী সাংবাদিকদের কাজই হলো তথ্য সংগ্রহ করে তা প্রকাশ করা। কিন্তু সেখানে গিয়েও যদি আমাদের হামলা ও হুমকির শিকার হতে হয় তাহলে আমরা যাবো কোথায়? আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। যদি দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় না আনা হয় তাহলে আমরা আরো কঠোর আন্দোলনে যাবো।

উল্লেখ্য যে, গত সোমবার (২৬ মে) সাভারের ভাগলপুর এলাকায় বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড নামে একটি কারখানা দখলের অভিযোগ পেয়ে সেখানে তথ্য সংগ্রহে গিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করছিলেন সাংবাদিক আকাশ। এ সময় সেখানে ৩০ থেকে ৪০ জন যুবক তাঁকে মারধর করেন এবং তার মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে তার সহকর্মীরা এসে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। এঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিকের দায়ের করা মামলায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

অন্যদিকে গত ২১ মে সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের রাজফুলবাড়ীয়া এলাকায় একেএইচ নিটিং এন্ড ডায়িং নামে একটি তৈরী পোশাক কারখানার কর্মকর্তা বিস্ফোরক দ্রব্য ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডের মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী আবুল বাশারের বিরুদ্ধে কারখানাটির ভিতরে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি তার নিজ বাসভবনে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করার অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন হাসান মন্ডল নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য কারখানাটির সামনে গেলে কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক রাফি সাংবাদিকদের সাথে অসদাচরণ ও দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থপনা পরিচালক মো. আবুল কাশেমের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনিও সাংবাদিক ওমর ফারুককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেন এবং নিজেকে ক্ষমতাবান দাবি করে থানার ওসির কাছ থেকে তার সম্পর্কে জেনে নিতে বলেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক সাভার মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।