সম্প্রীতি সমাবেশে হাসিনাসহ গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবি
জাগো জনতা অনলাইন।।
গণঅভ্যুত্থানে নির্বিচারে ছাত্র হত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবি ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
বুধবার (১৪ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৪টায় শাহবাগ মোড়ে ‘একতার বাংলাদেশ’ নামক একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বক্তাদের মূল সুর ছিল খুনি হাসিনার বিচার।
সম্প্রতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়কসহ অন্যান্য ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তারা তাদের বক্তব্যে সাম্প্রদায়িক হামলার নিন্দা জানান এবং সম্প্রতির আহবান জানান।
সম্প্রতি সমাবেশে ছাত্র সংগঠক আলী আহসান জোনায়েদ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সকল ধর্ম ও ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিরা একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে সম্প্রতির বাংলাদেশ গড়তে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেন। একই সঙ্গে সমাবেশ থেকে সবাই শপথ গ্রহণ করেন। শপথ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্লাবন তারিক।
শপথ বাক্যে বলা হয়, ‘আমি শপথ করছি যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমার প্রতিটি পদচিহ্ন হবে ন্যায়বিচারকে সমুন্নত রাখার একেকটি প্রতিরূপ। সাম্য এবং মানবিক মর্যাদা হবে আমার রাষ্ট্রের প্রতিটি অংশীজনের সঙ্গে যোগাযোগের সেতুবন্ধন। আমার কাছে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার যথাযথ বাস্তবায়নই হবে ব্যক্তিগত স্বার্থকে সমুন্নত রাখার একমাত্র রক্ষাকবজ। বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে আমার কার্যক্রম এবং চিন্তার পরিসর জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছাকে সবসময় ক্ষমতায়িত করবে। আমি জীবনের যেকোনো পর্যায়ে বাংলাদেশের জাতীয় মর্যাদা এবং সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপোষ করব না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যদি নিপীড়নমূলক হয়ে উঠে বা হয়ে উঠতে চায়, তার বিপরীতে দাঁড়ানো হবে আমার একান্ত দায়িত্ব। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, সব ধরনের বিভাজনের পথ রুদ্ধ করে বাংলাদেশ হবে সব মানুষের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিতকরণের উর্বর ভূমি।’
এদিকে সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব সাহিত্য বিষয়ক অধ্যাপক ড. সাদিক মোহাম্মদ বলেন, আমরা কোনো বৈষম্যের বাংলাদেশ চাই না। সবার ধর্ম পালনের অধিকার চাই। কোনো ভেদাভেদ চাই না। সাম্যের বাংলাদেশ চাই।’
অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, যতদিন দেশ থেকে কুচক্রী মহল বিতাড়িত না হবে, ততদিন আমাদের পাহারায় থাকতে হবে। কোনোভাবেই কুচক্রী মহলকে ছাড় দেওয়া যাবে না। দিল্লিতে পরিত্যাক্ত স্বৈরাচার আছেন, অথচ তার ছেলে জয় বলেন, তার মা পদত্যাগ করেনি। সেখান থেকে তারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সতর্ক থাকতে হবে। অবশ্যই ভেতরের ষড়যন্ত্র আঁচ করতে হবে।
ছাত্র সংগঠক আলী আহসান জোনায়েদ বলেন, আমরা মরতে যখন শিখে গেছি, কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি আমাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারবা না। আমার ভাই-বোনেরা হাসপাতালে কাতরাচ্ছে, শহিদরা কবরে শুয়ে আছে। বাংলাদেশে খুনী হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার নিশ্চিতে কমিশন গঠন করতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসদের বিচার করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রধান কর্তব্য এখন সব ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করা, আহত ভাই-বোনদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, সব ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শহীদ আবু সাঈদের অনুপ্রেরণা থেকে বলতে চাই, আমাদের মানচিত্রে বহিশত্রুর থাবা রুখে দিবো। প্রয়োজনে আমরা বুলেটের সামনে আমাদের বুক পেতে দিতে প্রস্তুত আছি।
ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, খুনী হাসিনা ভারতে পালালেও তার দোসর দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে মরিয়া হয়ে আছে। বাংলাদেশব্যাপী আমরা পাহারা বসিয়েছি। সব ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করা হবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের আদর্শই হলো জাতি ধর্ম বর্ণকে সবাইকে ধারণ করা। হিন্দু-মুসলমান,বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কেউ সংখ্যালঘু নয়। আমরা সবাই বাংলাদেশী।
বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, এই বাংলাদেশ সম্প্রতির বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশ একতার বাংলাদেশ। কোন দল, সংগঠন বা ছাত্র এটা বলতে পারবে না যে, আমি একাই এই দেশটাকে স্বাধীন করেছি। দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে দেশের সাধারণ মানুষ, প্রাইভেট, পাবলিক, ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা জীবন দিয়েছে। আমাদের ভাই আবু সাঈদ বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছেন। আমরা আবু সাঈদ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বলতে চাই, আগামীতে যদি কোনো ষড়যন্ত্র হয়, তাহলে আমরা জীবন দিয়ে সে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবো।
জাগপা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রহমান ফারুকী বলেন, শাহবাগকে ব্যবহার করে খুনী হাসিনা এদেশের আলেম সমাজকে জুডিশিয়াল কিলিং চালিয়েছে। এই শাহবাগ থেকেই তোমার পতন ঘণ্টা বেজেছে। যারা এ দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ভাঙতে যায়, তাদের বিষদাঁত ভেঙে দেওয়া হবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, আদরিনা মাহী, কবি সাম্য শাহ, ডিরেক্টর মাহফুজ আহমেদ ও মধুসহ আরও অনেকে।