ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫ - ৪:০৩ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

সময়ের প্রত্যাশায় বিএনপি ও তারেক রহমান

  • আপডেট: Monday, September 1, 2025 - 6:49 pm

শায়রুল কবির খান।। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অমোঘ নাম সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্বগাথা, স্বাধীনতার ঘোষণা, আর পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র গঠনের দর্শন—সবকিছু মিলে শহীদ জিয়া কেবল একজন রাষ্ট্রনায়কই নন, বরং একটি যুগের প্রতীক। তাঁর হাতে গড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আজও কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার জায়গা হয়ে আছে। সেই ধারাবাহিকতায় রক্তের উত্তরাধিকার ও রাজনৈতিক আদর্শের উত্তরসূরী হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সময়ের বাস্তবতায় হয়ে উঠেছেন দলটির প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু।

তারেক রহমানকে ঘিরে রাজনীতির ভেতর-বাহিরে নানা বিতর্ক থাকলেও অস্বীকার করা যায় না, গত দেড় যুগে দূরদেশ থেকে তিনি যেভাবে বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তা নিছক রাজনৈতিক কৌশল নয়—বরং দীর্ঘমেয়াদি একটি দৃষ্টিভঙ্গির অংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের দমননীতি, মামলা, গ্রেপ্তার আর দমন-পীড়নের মধ্যেও বিএনপি আন্দোলনের রাজনীতিতে টিকে আছে, আর তারেক রহমানের নেতৃত্বকে কেন্দ্র করেই এই স্থিতি বজায় রয়েছে।

২০০৫ সালে ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি যেভাবে তৃণমূলভিত্তিক সাংগঠনিক কাঠামো শক্ত করার উদ্যোগ নেন, তা ছিল এক নতুন দিগন্তের সূচনা। পরবর্তীতে লন্ডনে অবস্থান করেও বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে শুরু করে যুগপৎ আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে তাঁর কৌশলগত নির্দেশনা বিএনপিকে সক্রিয় রেখেছে। বিশেষ করে গত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান—যেখানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনে বিএনপি একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখে—সে আন্দোলনের পেছনে তারেক রহমানের ধৈর্যশীল ও ধাপে ধাপে এগোনো কৌশলই ছিল প্রধান চালিকা শক্তি।

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিএনপির রাজনীতিতে তারেক রহমান ‘ঐকমত্যের প্রতীক’। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস, অসুস্থতা ও কার্যত রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়ার পর বিএনপির ভেতরে কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা যায়নি। নেতাকর্মীরা তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি, যা বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রেক্ষাপটে বিরল। এমনকি তাঁর ওপর নেমে আসা নানা মামলা, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তির আদেশ কিংবা রাজনৈতিক চরিত্রহননের প্রচেষ্টা তাঁকে দলের ভেতর থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। বরং উল্টোভাবে এগুলো নেতাকর্মীদের কাছে তাঁকে আরও অবিচল প্রতীকে পরিণত করেছে।
কেন তারেক রহমান আজ বিএনপির প্রত্যাশার নাম?

কারণ, তিনি শুধু দলের উত্তরসূরী নন, বরং দলের ভবিষ্যৎ কৌশলের নকশাকার। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি কেবল ক্ষমতায় ফেরার জন্য নয়, বরং একটি ‘কল্যাণ রাষ্ট্র’ নির্মাণের লক্ষ্য সামনে রেখে রাজনীতি করছে। তাঁর বক্তৃতা, বার্তা কিংবা রাজনৈতিক রূপরেখায় বারবার ফিরে আসে—বাংলাদেশকে আধুনিক, আত্মনির্ভর ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পুনর্গঠনের অঙ্গীকার।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে তাঁর উপস্থিতি নিয়ে যে আতঙ্ক বিদ্যমান ছিল, সেটিও রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন। তাঁরা জানতেন, তারেক রহমান দেশে ফেরার দিনই রাজনীতির চিত্রপট বদলে যাবে। তাই তাঁকে রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে রাখার জন্য নানা ধরনের আইনগত ও রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল। কিন্তু এর মাধ্যমে তাঁকে রাজনৈতিকভাবে অকার্যকর করার চেষ্টা সফল হয়নি।

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বুঝেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি আর অতীতের ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের ধারায় চলতে পারবে না। শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ, গণআন্দোলনের মধ্য দিয়েই গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা সম্ভব—এই বাস্তবতাকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ফলে বিএনপির আন্দোলন আজ আগের চেয়ে বেশি গণমুখী, বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক।

শেষ পর্যন্ত প্রশ্নটা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়েই। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান যেমন জাতিকে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ দিয়ে নতুন পরিচয় দিয়েছিলেন, তেমনি তাঁর উত্তরসূরী তারেক রহমানও সময়ের বাস্তবতায় নতুন এক প্রত্যাশা হয়ে উঠেছেন। তিনি দলের ভেতরে ঐক্যের প্রতীক, আন্দোলনের কৌশলগত নকশাকার এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের আলোকবর্তিকা। ইতোমধ্যে তিনি ধর্ম, মতাদর্শ, দলনির্বিশেষে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি নির্মাণে রাষ্ট্রের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করছেন। তার কণ্ঠে উচ্চকিত হয়েছে উগ্রবাদবিহীন এক দেশের কথা। যা চিরায়ত বাংলাকে আরও বেশি প্রাণিত করে। সব জাতিগোষ্ঠী নিয়ে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়বে বিএনপি, এই বাক্যটিতেই তিনি ভবিষ্যত রাষ্ট্র নির্মাণে তার সমস্ত স্বপ্নের বিভূতি এঁকেছেন।

তাই বলা যায়, সময়ের বিএনপি মানেই আজ তারেক রহমান। তিনি কেবল দলের নয়, কোটি মানুষের প্রত্যাশার নাম। আগামী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাগ্যনির্ধারণে তাঁর ভূমিকা অনিবার্য হয়ে উঠছে। আর সেই পথেই, হয়তো নতুন করে লেখা হবে বিএনপির ইতিহাস—যেখানে তারেক রহমান হবেন এক অগ্রজ প্রজন্মের নেতৃত্বের প্রতীক।

লেখক:
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী।