ঢাকা | অক্টোবর ১৩, ২০২৫ - ৩:৪৮ অপরাহ্ন

শিরোনাম

সবজির বাজার চড়া, কমেছে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে মাছ-মুরগির

  • আপডেট: Friday, October 10, 2025 - 5:07 pm

জাগো জনতা অনলাইন।। চলমান উচ্চমূল্যের সবজির বাজারে যখন সাধারণ মানুষ হাসফাস করছে বাজার করতে, কেনাকাটা করতে পারছে না হাত খুলে, এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজও সবজির দাম চড়া রয়েছে। হাতেগোনা কয়েকটি বাদে সব সবজির দাম প্রতি কেজি ৮০ টাকার ওপরে। আবার যেসব সবজির দাম কিছুটা কমেছিল, সেগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি সবজির দাম নতুন করে বেড়েছে। তবে হুট করেই বেড়ে যাওয়া কাঁচামরিচের দাম আজ অনেকটাই কমেছে। অপরদিকে বেড়ে গেছে মুরগির মাংসের দাম।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা যায় এই চিত্র।

স্বস্তি ফিরছে না সবজির বাজারে

আকাশছোঁয়া সবজির দামের কারণে বাজারে স্বস্তি ফিরছে না। স্বল্প আয়ের মানুষেরা হাসফাস করছেন। প্রতিনিয়তই তাদের মেলাতে হচ্ছে নিজেদের আয়-ব্যয়ের হিসাব। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এভাবেই ক্রেতাদের চড়াও হয়েছে।

বাজার করতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আজমল হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাজারের যে পরিস্থিতি, তাতে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে টিকে থাকব সেটা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে সবকিছুর দাম বেশি, কম বলে কিছু নাই। যেভাবে আগে কিনতাম সেভাবে এখন কিনতে পারি না। কেন পারি না ? কারণ আমার ইনকাম তো একই আছে সেটা কি বাড়িয়েছে আমার কোম্পানি বা সরকার? কিন্তু জিনিসপত্রের দাম তো ঠিকই বাড়ছে। এভাবে হলে আমরা কীভাবে চলবো?’

আরেক ক্রেতা শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘কোনও কিছু যদি আগে দুই কেজি কিনতাম সেটা এখন কিনি এক কেজি। কারণ দুই কেজি কেনার পয়সা আমার নাই। এটাই সত্য। উচ্চ বাজারমূল্য প্রতিদিন আমার মতো সাধারণ মানুষের ওপর চাপ তৈরি করছে।’

 

আজকের বাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় টমেটো ১৪০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১৩০-১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১২০-১৪০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১৮০ টাকা, শিম ২৬০টাকা, দেশি শসা ১০০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করল্লা ১০০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০-১২০ টাকা, পটল (হাইব্রিড) ৮০ টাকা, দেশি পটল ১৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, মূলা ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৪০ টাকা, ধনেপাতা (মানভেদে) ৩০০ টাকা, শসা (হাইব্রিড) ৭০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০-১২০ টাকা, চাল কুমড়া ৭০ -৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০-৫০ টাকা। এছাড়া, প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা করে।

এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রতি কেজিতে ভারতীয় টমেটো, চায়না গাজর, সাদা গোল বেগুন, কালো গোল বেগুন, শিম, দেশি শসা, ঢেঁড়স, দেশি পটল, ধুন্দলের দাম ২০ টাকা করে বেড়েছে। কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়েছে শসার (হাইব্রিড) দাম। আর কেজিতে ২০ টাকা করে কমেছে মূলা ও কচুরমুখীর দাম। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।

এছাড়া হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া কাঁচামরিচের দাম আজ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সপ্তাহখানেক আগে কাঁচামরিচের দাম হয়ে গিয়েছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। কোথাও সেটা পৌঁছেছিলো ৪০০ টাকায়। আজ এই কাঁচামরিচের নেমে এসেছে ২৪০ টাকায়।

এদিকে সবজির দাম বাড়ার পেছনে বৃষ্টি ও ঋতুর পরিবর্তনকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছে বিক্রেতারা। তারা বলেন, ‘অসময়ে বৃষ্টি হওয়ার ফলে সবজির দাম বেড়েছে। এছাড়া একটা সিজন থেকে আরেকটা সিজন আসছে। এরকম সিজন পরিবর্তন হলে চলে যাওয়া সিজনের সবজির দাম বাড়তি থাকে।’

দাম বেড়েছে আদা-পেঁয়াজের

আজকের বাজারে বেড়েছে ক্রস পেঁয়াজ, চায়না আদার দাম। এছাড়া কমেছে বগুড়ার আলু, দেশি ও চায়না রসুনের দাম।

আজকে আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। এরমধ্যে ছোট পেঁয়াজ ৭০ টাকা ও বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা করে। দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা, লাল আলু ২৫ টাকা, সাদা আলু ২৫ টাকা, বগুড়ার আলু ৩০-৩৫ টাকা, দেশি রসুন ৮০-১০০ টাকা, চায়না রসুন ১৩০-১৪০ টাকা, চায়না আদা ১৮০-২০০ টাকা, ভারতীয় আদা মান ভেদে ১৬০-১৮০ দরে বিক্রি হচ্ছে।

দেখা যায়, প্রতি কেজিতে ক্রস জাতের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা করে। আর কেজিতে চায়না আদার দাম বেড়েছে ২০ টাকা করে। এছাড়া প্রতি কেজিতে বগুড়ার আলুর দাম কমেছে ৫ টাকা, দেশি রসুনের দাম কমেছে ২০ টাকা, চায়না রসুনের দাম কমেছে ১০-২০ টাকা করে।

বেড়েছে সব ধরনের মুরগির দাম

সপ্তাহ দুয়েক আগে কিছুটা কম থাকলেও আজকের আবার বেড়েছে মুরগির মাংসের দাম। আজ বাজারে বয়লার, কক, লেয়ার ও দেশি মুরগির দাম বেড়েছে। এসব মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।

আজকে বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজি দরে। বয়লার মুরগি ১৭৫-১৮৫ টাকা, কক মুরগি ২৮০-২৯০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি ডজন মুরগির লাল ডিম ১৩০ টাকা এবং সাদা ডিম ১২০ টাকা, হাঁসের ডিম ১৮০-২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

দেখা যায়, আজকে প্রতি কেজিতে বয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৫-১২ টাকা, কক মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা এবং দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাংস ও ডিমের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।

দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে আল-আমিন চিকেন হাউজের বিক্রেতা বলেন, ‘এখন ওয়েদার একটু ঠান্ডা তাই মুরগীর দাম বেশি। কারণ এখন মুরগি মরবে না। তাই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে খামারিরা। যেহেতু এখন মোটামুটি ঠান্ডা ওয়েদার চলে আসছে তাই বলা যায় মুরগির দাম এরকমই থাকবে।’

এছাড়া আজকের বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী রুই মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, কাতল মাছ ৩০০-৬০০ টাকা, কালবাউশ ৪০০-৭০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা, কাচকি মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০-১২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, বেলে মাছ ১০০০-১২০০ টাকা, মেনি মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

অপরিবর্তিত রয়েছে মুদি পণ্যের দাম

আজকের বাজারে মুদি দোকানের পণ্যের দামে কোনও পরিবর্তন আসেনি, রয়েছে অপরিবর্তিত। আজকে প্রতি কেজি প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ৯০-১৩০ টাকা, ছোট মুসরের ডাল ১৫৫ টাকা, মোটা মুসরের ডাল ১০৫ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা মাসকলাইয়ের ডাল ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৭২ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৪৫০ -১৫৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১১০ টাকা, খোলা চিনি ১০০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৩০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এলাচি ৪৭৫০ টাকা, দারুচিনি ৫০০ টাকা, লবঙ্গ ১২৮০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১৩৫০ টাকা ও কালো গোল মরিচ ১১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।