ঢাকা | অক্টোবর ৬, ২০২৫ - ৫:২৬ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

শেখ হাসিনা চেষ্টা করেও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ মুছতে পারেনি: রুহুল কবির রিজভী

  • আপডেট: Sunday, September 21, 2025 - 4:15 pm

জাগো জনতা অনলাইন।। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশকে এক করে ফেলতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা। যে কারণে তিনি বাংলাদেশিদের শুধু বাঙালি বলতেন। শেখ হাসিনা বাঙালি বাঙালি করতে করতে তার মুখে ঘাঁ করে ফেলেছে। কিন্তু এটা ব্যস্তব যে, সে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অপপ্রচার করেও সেটা মুছে ফেলতে পারেননি।

রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ৭’ নভেম্বর প্রজন্ম’ আয়োজিত ড. মারুফ মল্লিকের লেখা “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: নাগরিক ও জাতীয়তাবাদী জাতীয়তাবাদের সংকট” শীর্ষক বইয়ের উপর আলোচনা সভায় প্রধান বক্তার হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার প্রবণতা হচ্ছে জিয়াউর রহমান যা করে গেছে, সেটিকে রাখা যাবেনা। যেমন, সংবিধানে আল্লাহর নাম, আস্থা, বিশ্বাসের কথা বলেছেন, সেটাও বাদ দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে জাতীয়তাবাদ কখনো মুছে দিতে পারেননি। কারণ ওটা মুছতে গেলে বাংলাদেশের আইডেন্টিটি থাকেনা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। ৭ নভেম্বর প্রজন্মের সদস্য সচিব ইয়াছির ওয়াদাদ তন্ময় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কুমিল্লা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো সেলিম ভুইঁয়া।

এছাড়া আরও বক্তব্য দেন ড. মারুফ মল্লিক, সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজি, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হুদা বাবু, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক হারুন উর রশিদ প্রমুখ।

এ সময় রুহুল কবির রিজভি আরও বলেন, আজকের এ রাজনীতিতে এখন আমরা বিভাজনের নানা ষড়যন্ত্রের মধ্যে রয়েছি। ৫ই আগস্টের পরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে যে ধরনের হুমকি হুংকার ক্রমাগতভাবে আসছে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে এবং যে সমস্ত শক্তির উত্থান ঘটছে, তাতে করে আমাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব অটুট রাখার জন্য বড় ধরনের একটি ষড়যন্ত্র পাকিয়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, “সিলেটের পাথর যারা চুরি করেছে সেখানেও জামায়াত নেতার নাম পাওয়া গেছে, নারী ঘটিত বিভিন্ন ঘটনার সাথেও তাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে বিএনপি করছে, বিএনপি করছে। বিএনপির কোন নেতাকর্মী অন্যায় করলে তাদের বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটাও তো ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে না। একটা পরিবারের মাঝে দুষ্ট ছেলে থাকতে পারে— সেই দুষ্ট ছেলেকে বাবা-মা শাসন করছে কিনা, সেটা তো বিবেচনা করতে হবে।

তিনি অভিযোগ করেন, খুব পরিকল্পিতভাবে সরকারের একজন উপদেষ্টা শুরু করলেন, সেই কোরাস এখন গাইছে একটি রাজনৈতিক দল। সেই দলের নেতারা গতকালও চাঁদাবাজি, রাহাজানি নিয়ে কথা বলেছেন— সেখানে তো আপনাদের নামও পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের দলের যারা এগুলোর সাথে জড়িত, আমরা তাদের বহিষ্কার করছি, পদ স্থগিত করছি, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি— সেটা তো বলছেন না। খুব কায়দা করে নানাভাবে একটা বয়ান তৈরি করে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

ডাকসুর ভিপি প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, একজন ভিপিকে কি ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়ার দেওয়া হয়েছে? তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোনটি অবৈধ দোকান তা ফাইন করছেন, আবার সেই ফাইনের টাকা পার্টির বায়তুল মালে জমা দিচ্ছেন— এটার কি কোন আইনগত ভিত্তি আছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হবে জ্ঞানচর্চার বিশাল ক্ষেত্র, সেই জ্ঞানচর্চার দায়িত্ব পালন করবে ডাকসুর ভিপি। সেই জ্ঞানচর্চায় শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ থাকবে। এটা কতটুকু নিশ্চিত করা হয়েছে, সেটা না দেখে আপনি দোকান বৈধ নাকি অবৈধ সেটির ফাইন করছেন— এটা তো আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন আলোচনা দেখছি না।

রিজভী আরও বলেন, আমিও তো রাকসুর ভিপি ছিলাম— বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কে দোকানদারি করছে, কে মার্কেট করছে সেটা দেখার জন্য তো বিশ্ববিদ্যালয়ের অথরিটি আছে, প্রশাসন আছে, তারা দেখবে। সেখানে ছাত্রনেতা গিয়ে বলতে পারে ক্যাম্পাসে যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে। কিন্তু সেটা না করে আপনি গিয়ে ফাইন করে দিচ্ছেন, সেই ফাইনের টাকা যাচ্ছে জামায়াতের বাইতুল মালে— এটা কোন ধরনের বিষয়? বরাবরই আমরা দেখছি এদের কর্মকান্ড রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র গড়ে তোলার চেষ্টা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বাংলাপদেশি জাতীয়তাবাদের চেয়ে মহৎ ও চমকপ্রদ কিছু হতে পারে বলে আমার জানা নেই। এ জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে এ দেশ নতুনভাবে স্বৈরাচার মুক্ত করেছে। সুদীর্ঘ ১৫ বছরের অন্দোলনের মূল ভিত্তি ছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের শক্তি ও মূল মন্ত্রে।

তিনি বলেন, ৭ নভেম্বরের প্রজন্ম, জুলাই-আগষ্টের প্রজন্ম, আমি সবার কাছে আহ্বান করবো আসুন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ-এ আদর্শে অনুপ্রেরিত হয়ে একটি সুন্দর দেশ গড়ি। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শ অনুসরণ করে সুন্দর ভবিষ্যত গড়ি।

মূল প্রবন্ধে ৭ নভেম্বরের প্রজন্মের ইয়াছির ওয়াদাদ তন্ময় বলেন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ: সংকট উত্তরণের একমাত্র দর্শন। আমরা মনে করি এমন বহুমুখী সংকটে সমাধানের একমাত্র পথ হলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। এটি বিভেদ নয়, বরং ভূখণ্ড, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করে। বিদেশি প্রভাবমুক্ত স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথ প্রশস্ত করে। গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও জনগণের ক্ষমতায়নকেই এর মূল লক্ষ্য হিসেবে ধারণ করে। অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটাতে ও বহিঃশক্তির চাপ প্রতিহত করতে এ জাতীয়তাবাদই সক্ষম দর্শন।

তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ শুধু রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সংকটেই নয়, বরং অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র কার্যকর সমাধান হলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে রাষ্ট্র ও সমাজের কেন্দ্রীয় দর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পথচলায় এ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।