ঢাকা | ডিসেম্বর ২, ২০২৫ - ৯:২২ অপরাহ্ন

শিরোনাম

শান্তিচুক্তির প্রাপ্তি, প্রত্যাশা পুনর্বিবেচনার দাবীতে পিসিসিপির সংবাদ সম্মেলন

  • আপডেট: Tuesday, December 2, 2025 - 7:44 pm

 

নিজস্ব প্রতিবেদক।
পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তিতে শান্তিচুক্তির প্রাপ্তি, প্রত্যাশা ও পুনর্মূল্যায়ন শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি), ঢাকা মহানগর শাখা। শনিবার ঢাকায় এ আয়োজন করা হয়। এতে বক্তারা বলেন—দীর্ঘ ২৮ বছর পেরুলেও শান্তিচুক্তির মূল লক্ষ্য অর্থাৎ স্থায়ী শান্তি, সমতা ও টেকসই উন্নয়ন এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমান বাস্তবতায় চুক্তিটির পূর্ণাঙ্গ পুনঃমূল্যায়ন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন পিসিসিপির ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি রাসেল মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসান। তারা বলেন, শান্তিচুক্তির পর সরকার আঞ্চলিক পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ড ও তিন জেলা পরিষদের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু এই বিপুল বরাদ্দ সত্ত্বেও পাহাড়ে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটেনি। অনেক দুর্গম এলাকায় এখনও সড়ক অপর্যাপ্ত; স্বাস্থ্যসেবা দুর্বল; শিক্ষা খাতে বৈষম্য রয়ে গেছে; কর্মসংস্থানও সীমিত। বম, চাক, খিয়াং, খুমি, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা—এমনকি বাঙালি জনগোষ্ঠীও উন্নয়ন সুবিধায় বঞ্চনার মুখে পড়ছে।

বক্তারা অভিযোগ করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের অনির্বাচিত চেয়ারম্যান সন্তু লারমা ও সংশ্লিষ্ট সদস্যরা উন্নয়ন কার্যক্রমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। বরং বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগে বাধা সৃষ্টি, প্রশাসনিক অদক্ষতা এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতের কারণে উন্নয়ন অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব জনগণের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি—চুক্তির মর্মবস্তুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই কাঠামোগুলো পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।

সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বক্তারা বলেন—জেএসএস (সন্তু লার্মা গ্রুপ), ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ) ও কেএনএফ-এর সশস্ত্র কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন পাহাড়ের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। অপহরণ, চাঁদাবাজি, হত্যাকাণ্ড, ভীতি ছড়ানো, উন্নয়ন প্রকল্পে বাধা, গ্রাম পোড়ানো এবং বিভাজনমূলক প্রচারণা মানুষের জীবনকে জিম্মি করে রেখেছে। কেএনএফ-এর সঙ্গে উগ্রপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠীর যৌথ প্রশিক্ষণের মতো ঘটনা অঞ্চলের নিরাপত্তাকে আরও ঝুঁকিতে ফেলেছে। বক্তারা বলেন, এসব গুরুতর অপরাধের বিষয়ে দেশের কিছু মানবাধিকারকর্মী ও সিভিল সোসাইটি সদস্যের নীরবতা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একতরফা বর্ণনা তুলে ধরা এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অপরাধকে আড়াল করা জাতীয় নিরাপত্তা ও সম্প্রীতির জন্য হুমকিস্বরূপ।

এসময় বক্তারা বলেন, উন্নয়ন, মানবাধিকার ও সম্প্রীতির নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে বহু এনজিও ও আইএনজিও কাজ করলেও তাদের অনেকের কার্যক্রম অস্বচ্ছ, পক্ষপাতপূর্ণ এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রভাবাধীন। বিদেশি তহবিল ব্যবহারে স্বচ্ছতার অভাব, সুবিধাভোগী নির্বাচন নিয়ে পক্ষপাত, নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে অতিরিক্ত প্রাধান্য এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীদের ন্যারেটিভ প্রচারের অভিযোগ তুলে তারা দায়িত্বশীল তদারকির দাবি জানান। বক্তাদের মতে, এনজিও সেক্টরের কাঠামোগত সংস্কার, জবাবদিহি ও পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন এখন সময়ের দাবি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি জনগোষ্ঠীর—চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, বম, চাক, খুমি, খিয়াং ও বাঙালি—সমান অধিকারের ভিত্তিতেই স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। বিদেশে কিছু গোষ্ঠী Rape as weapon, Occupation, State-sponsored violence ইত্যাদি ভ্রান্ত বয়ান ছড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অপরাধকে আড়াল করছে—এমন অভিযোগও তারা উত্থাপন করেন। তারা এসব প্রচারণা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এ অঞ্চলের শান্তি-উন্নয়ন রাষ্ট্রের সার্বিক অগ্রগতির অংশ। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল ইউসুফ। আরও উপস্থিত ছিলেন স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টির আহ্বায়ক জিয়াউল হক, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের উপদেষ্টা শেখ আহমেদ রাজু, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন ভুইয়া, মো. ইলিয়াস মাতাব্বর, কাওছার আলী, সিংপং ম্রো, ফাতেমা খাতুন রুনা, শাহাদাৎ ফরাজি সাকিব, মো. শামসুদ্দিন, ইসলাম সৌরভ, মো. রহমত আলি এবং আল আমিন।