লবণের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কুতুবদিয়ার চাষীরা
এআর. আব্বাস সিদ্দিকী (কুতুবদিয়া)।
লবণের মূল্য সর্বনিম্ন হওয়ায় উদ্বেগ ও হতাশা নিয়ে মাঠে নেমেছে কুতুবদিয়ার চাষীরা। একদিকে লবণের সর্বনিম্ন মূল্য, অপরদিকে পলিথিনসহ আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয় মালামালের মূল্য বৃদ্ধি এসব নিয়ে প্রান্তিক চাষীরা মাঠে নামতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। এ সংকটময় মুহূর্তেও অধিকাংশ কুতুবদিয়ার চাষীরা মাঠে নেমেছে। চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, লাভের আশায় নয়, বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতে লবণ চাষ করছেন। তবে লবণের এই সর্বনিম্ন দামে তাদের বেশিদিন মাঠে টিকে থাকা অসম্ভব। তাই লবণের দাম বৃদ্ধিতে সরকারকে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রান্তিক চাষীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কেউ চাষ করতে জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সমতল করছেন। অনেকেই পানি ধরে রাখতে চারপাশে বাঁধ ও ছোট ছোট গর্ত তৈরি করছেন। কেউ কেউ সমতল করা জমিতে পলিথিন বিছাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ তৈরি করা জমিতে সাগরের পানি ঢোকাচ্ছেন। পরে ওই লবণাক্ত পানিই সূর্যের তাপে ৪-৫ দিনে লবণ তৈরি হয়। এদিকে কুতুবদিয়ায় কানি প্রতি ৩৫০ মণ লবণ উৎপাদন হলেও বর্তমান মূল্য অনুযায়ী চাষীদের ৫৫ হাজার টাকা ঘাটতি থাকবে।
উপজেলার উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের প্রান্তিক লবণ চাষী ছৈয়দ আলম, গিয়াস উদ্দিন ও হারুনসহ অনেকেই জানান, লবণ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় মালামালের দাম বৃদ্ধিতেও চাষীরা শেষ সম্বল দিয়ে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু গত বছরের উৎপাদিত লবণও তারা গর্তে মজুদ রেখেছেন। এর মধ্যে চলতি মৌসুমের উৎপাদিত লবণও বাধ্য হয়ে মজুদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোনো সময় লবণের মূল্য বাড়লে তা বিক্রি করবেন। একেকটি গর্তে আট বা বারোশো মণ লবণ মজুদ করা যায়। এদিকে অতিরিক্ত লবণ মজুদ করায় আর্থিক সংকটে পড়েছেন স্থানীয় চাষীরা। এ সমস্যা সমাধানে লবণের দাম বৃদ্ধি করতে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা। অন্যথায় লবণ উৎপাদন বন্ধ করে চাষীদের সংসার চালাতে ভিক্ষা করতে হবে বলে জানান চাষীরা।
উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের প্রান্তিক চাষী শামসুল আলম, হাফেজ উদ্দিন, শফিকুল মোর্শেদ ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের নাছির উদ্দীনসহ অনেকেই জানান, লবণের মূল্য না থাকায় এখনো পর্যন্ত চাষীরা মাঠে নামেননি। এ শিল্পকে ধ্বংস করতে একটি সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়েছে। দ্রুত লবণের মূল্য বৃদ্ধি না করলে অধিকাংশ লবণ চাষী এ পেশা থেকে সরে যাবেন।
স্থানীয় সাংবাদিক রাইতুল ইসলাম রাহাত জানান, এ বছর লবণের দাম কম। দাম কমে যাওয়ায় চাষীরা উদ্বেগ ও হতাশ হয়ে পড়েছেন। এভাবে লবণের দাম কমতে থাকলে আগামীতে দেশীয় লবণ খাত বড় সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) কুতুবদিয়ার লবণ প্রদর্শনীর পরিদর্শক জাকের হোছাইন জানান, কুতুবদিয়ার অধিকাংশ জমিতে লবণ উৎপাদন শুরু করেছেন চাষীরা। চলতি মৌসুমে দেশের লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে দু’সপ্তাহে কুতুবদিয়ায় লবণ উৎপাদিত হয়েছে ৬০ টন। এছাড়াও গত বছরের উৎপাদিত ১৭ হাজার মেট্রিক টন লবণ এখনও বিক্রি করতে পারেননি চাষীরা।











