রাজভিলা থেকে কাঠবোঝাই ট্রাকের দৌরাত্ম্য: রাজস্থলী–বান্দরবান সংযোগ সড়ক পরিণত পাচারকারীদের স্বর্গে
মোঃ সুমন খান, রাজস্থলী
রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলছে নির্বিচারে গাছ কাটা ও অবাধ কাঠ পাচার। পাহাড়ি বনভূমির মধ্যে সক্রিয় একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট প্রতিদিনই শতবর্ষী গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আর এই পাচারের বড় অংশই হচ্ছে দিনের আলোয়, আবার অনেকটাই হচ্ছে গভীর রাতে ফরেস্ট বিভাগের নাকের ডগাতেই। ফলে একসময় সবুজে মোড়া রাজস্থলীর বন আজ বিপন্নতার মুখে।
ঘন পাহাড়ি বনাঞ্চলে রাতের আঁধারেই গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর বিভিন্ন ছোট ছোট রাস্তা ও ঝুপঝাড় ভেতর দিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে মূল সড়কে তোলা হয়, যেখানে ট্রাক বা পিকআপে করে এগুলো বান্দরবান সদর ও রাঙ্গুনিয়া দিকের কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
রাজস্থলীর ইসলামপুর এলাকা থেকে শুরু করে বান্দরবান সদর উপজেলার বালুমুরা, তাইংখালি এবং উদালবুনিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে সক্রিয় কাঠ পাচারের রুট।
স্থানীয়দের মতে—রাতের পর রাত পাহাড়ি ঝিরিপথ ও ঘন জঙ্গল থেকে গাছ কেটে নিচে নামানো হয়, পরে ছোট গাড়ি, ভ্যান ও মোটরসাইকেল দিয়ে কাঠ আনা হয় নির্দিষ্ট পয়েন্টে, এরপর ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানে করে পাচার করা হয় রাঙ্গুনিয়া ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে গোপনে কাঠ পরিবহন করা হয়। পাহাড়ি এলাকার ঘন জঙ্গল কেটে নেওয়া হচ্ছে নির্বিচারে। এতে পরিবেশ, পাহাড়ি জীববৈচিত্র্য ও বনবাসী মানুষের জীবন–জীবিকা আজ হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, ফরেস্ট বিভাগের দায়িত্বহীনতা ও তদারকির ঘাটতির সুযোগে দীর্ঘদিন ধরেই এই রুটে অবৈধ কাঠ ব্যবসা সক্রিয়। কয়েকটি স্থানে চেকপোস্ট থাকলেও কার্যত কোনো নজরদারি না থাকায় পাচারকারীরা নিরাপদেই যাতায়াত করতে পারছে।
রাজবিলা, “ফরেস্ট অফিসের সামনে দিয়েই কাঠবোঝাই গাড়ি বের হয়। এসব দেখেও কিছু বলা হয় না। যেন এই রুটে আইন বলে কিছু নেই।”
রাজস্থলীর সংরক্ষিত বনাঞ্চল—যা আইনের আওতায় কঠোরভাবে সুরক্ষিত থাকার কথা—সেই এলাকাতেই চলছে সবচেয়ে বেশি অপরাধ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বন রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক কর্মী অনুপস্থিত, পাহারা জোরদার করা হয়নি, টহল গাড়ি খুব কম বের হয়, অনেক জায়গায় চেকপোস্ট শুধু নামেই রয়েছে, ফলে পাচারকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, রাজস্থলীর বন উজাড় হয়ে গেলে শুধু পরিবেশই নয়, হারিয়ে যাবে পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্র্য এবং পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর টিকে থাকার সম্বল। তাই দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।











