ঢাকা | সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫ - ১১:৫১ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

রাজধানীর সড়কে খোলা ম্যানহোল আতঙ্ক, বাড়ছে দুর্ঘটনা

  • আপডেট: Saturday, September 13, 2025 - 5:50 am

জাগো জনতা অনলাইন।। রাজধানীতে পথ চলতে গেলে ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলের দেখা পাওয়া খুব সাধারণ দৃশ্য। কোথাও গাছের ডাল, বাঁশ বা কাঠ ঢুকিয়ে তাতে কাপড়ের টুকরো বেঁধে পথচারীদের সতর্ক করার দৃশ্যও দেখা যায়। এসব ম্যানহোলের বেশির ভাগই আবার সড়কের মাঝ বরাবর। প্রতিদিনই নগরবাসীকে ঢাকনাবিহীন ও ভাঙাচোরা ম্যানহোলের ঝুঁকি নিয়ে পথ চলতে হয়। মাঝেমধ্যে এসব ম্যানহোলে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। আহত হওয়ার পাশাপাশি একাধিক মৃত্যুও হয়েছে। তবে সাধারণ নাগরিকের ‘শত্রু’ চেনা হলেও উদাসীন কর্তৃপক্ষ।

রাজধানীতে মূলত ম্যানহোল স্থাপন ও তদারকির দায়িত্ব পালন করে থাকে সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসা। স্যুয়ারেজের ম্যানহোল বসায় ঢাকা ওয়াসা। আর স্টর্ম স্যুয়ারেজের (পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা) ম্যানহোল স্থাপন করে সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তর ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষেরও অল্পস্বল্প ম্যানহোল রয়েছে। সব মিলিয়ে রাজধানীতে ৭৫ হাজারের মতো ম্যানহোল রয়েছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ ম্যানহোল সব সময় ঢাকনাবিহীন থাকে বলে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীলরাই স্বীকার করেন।

তারা বলেন, চোর বা মাদকসেবীরা ম্যানহোলের দামি ঢাকনা চুরি করে ভাঙাড়ির দোকানে ২০০ টাকায় বিক্রি করে দেয়। ঢাকনার নিরাপত্তা দেওয়া সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে পুলিশ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারে।
সড়কের মাঝখানে ম্যানহোল থাকার কারণে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ মোটরসাইকেল ও যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। রাস্তার মাঝখানে ম্যানহোল স্থাপনের কারণ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শহীদ উদ্দিন সমকালকে বলেন, এক সময় ঢাকা ওয়াসার রাস্তাগুলো কম প্রশস্ত ছিল। আশপাশে প্রয়োজনীয় জায়গা পাওয়া যেত না। তখন স্যুয়ারেজের লাইনের ম্যানহোলগুলো রাস্তার মাঝখানে বসানো হয়েছে। সেটি ২০ বছর আগের কথা। এখন আর ওয়াসা কোনো ম্যানহোল সড়কের মাঝখানে বসায় না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য সিটি করপোরেশন পাইপলাইন করে, যাতে বৃষ্টির পানি ওই পাইপলাইন দিয়ে নির্ধারিত খাল বা জলাশয়ে যেতে পারে। রাস্তার মাঝখানে পাইপলাইন বসানো হয়। রাস্তার দুই পাশে কিছু দূরত্বে ক্যাসপিট বা সসার বসানো হয়। যাতে রাস্তার দুই পাশের পানি ওই পাইপলাইনে গিয়ে ঢুকতে পারে। এ ছাড়া অতিবৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমলে সেই পানি ম্যানহোলের ঢাকনার ফাঁক দিয়েও পাইপলাইনে ঢুকে যেতে পারে। এ জন্য সড়কের মাঝ বরাবর পাইপলাইন করা হয়। ২০-২৫ মিটার অন্তর সেই পাইপলাইনের ওপরে ম্যানহোল বসানো হয়।

উন্নত দেশেও এভাবে সড়কের মাঝখানে পাইপলাইন বসানো হয় কিনা সে প্রসঙ্গে বোরহান উদ্দিন বলেন, সিটি করপোরেশন একবার প্রতিটি সড়কের পাশে ডাক্ট লেন (সেবা সুবিধা লেন) বসানোর বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করেছিল। তখন দেখা গেল এত খরচ যেটি আমাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব না।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উন্নত বিশ্বে সেবা সুবিধার জন্য সড়কের একপাশে পৃথক ডাক্ট লেন থাকে। সেই লেনের মাধ্যমে এ পর্যন্ত এটিই আধুনিক পদ্ধতি। সড়কের পাশে বসালে আর্থিক ব্যয় অনেক বেশি হয়। এ জন্যই মাঝখানে বসানো হয়। এতে যানচলাচলের ঝুঁকি বাড়ে। এ অবস্থার পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
রাজধানীতে ম্যানহোল বসানোর বিষয়ে ঢাকা ওয়াসা ও দুই সিটি করপোরেশন একই নিয়ম মেনে থাকে। প্রতি ৩০ মিটার নালার ওপর একটি ম্যানহোল। সে হিসাবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সাড়ে ৩০০ কিলোমিটার ভূগর্ভের নালা (ড্রেনেজ) এবং ঢাকা ওয়াসার ৮৮০ কিলোমিটার পয়ঃনালার ওপর ম্যানহোল রয়েছে ৪১ হাজার। এ ছাড়া দুই সিটি করপোরেশনের প্রায় এক হাজার কিলোমিটার পাইপলাইনের ওপর রয়েছে প্রায় আরও ৩৪ হাজার ম্যানহোল।

এ ছাড়া বিভিন্ন কলোনিতে গণপূর্ত অধিদপ্তর ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষেরও কিছু ম্যানহোল রয়েছে। মাঝেমধ্যেই এসব ম্যানহোলের ঢাকনা ভাঙে, চুরি হয়। ঢাকনাহীন ম্যানহোলে পড়ে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হয় অনেক পথচারী। ঢাকনাবিহীন পাইপে পড়ে ২০১৪ সালে রাজধানীর শাহজাহানপুরে শিশু জিহাদ মারা যায়। ২০১৫ সালে শ্যামপুরে খোলা নর্দমায় পড়ে মারা যায় আরেক শিশু নীরব।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরতুল্লাহ বলেন, এক সময় ওয়াসার হাতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার দায়িত্ব ছিল। তারা সড়কের মাঝ বরাবর ম্যানহোলগুলো বসাত। সিটি করপোরেশনের অনেক ম্যানহোল রাস্তার মাঝখান থেকে সরিয়ে ফুটপাতে নিয়ে গেছে। যেমন গুলশান এলাকায়। আবার রামপুরা এলাকায় রাস্তার মাঝখানে ম্যানহোল রয়েছে। ব্যয়ের কথা চিন্তা করে এটি করা হয়েছে, যাতে নিকটতম এলাকার পানি একটা পাইপের মধ্য দিয়ে যেতে পারে।

জানা যায়, উন্নত দেশের মতো আধুনিক ও পরিকল্পিত হিসেবে গড়ে তুলতে রাজধানীর পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পে ডাক্ট লেন করার উদ্যোগ নিয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সেখানে প্রতিটি সড়কের পাশে ভূগর্ভে একটি ডাক্ট লেন থাকবে; যার মাঝ দিয়ে পৃথকভাবে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, টেলিফোন, পানি, ইন্টারনেট, ডিশের তার, স্যুয়ারেজসহ অন্যান্য সেবা সুবিধার লাইন থাকবে। পরবর্তীকালে সেটি বাস্তবায়ন করতে না পেরে খুঁটি বসিয়ে বিদ্যুৎ সুবিধা চালু করে রাজউক।
এ প্রসঙ্গে পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পের বর্তমান প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, রাজউক একবার উদ্যোগও নিয়েছিল। তখন দেখা গেল প্লট বেচে যে টাকা আয় হয়েছে, ডাক্ট লেন করতে গেলে তার চেয়ে বেশি টাকা লাগবে। পরে সিদ্ধান্ত হয় আপাতত ভূপৃষ্ঠের ওপরেই করা হবে।