রাঙামাটিতে ভূমি কমিশন বৈঠক নিয়ে পিসিসিপি’র সতর্কবার্তা

মো. হুমায়ুন কবির, রাঙামাটি প্রতিনিধি।
পাহাড়ে অশান্তির আশঙ্কা, ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে রাজপথে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের আসন্ন বৈঠক স্থগিতের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি)। আজ বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান।
পিসিসিপি নেতৃবৃন্দ স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন, আগামী ১৯ অক্টোবর (রবিবার) রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে অবস্থিত কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে একটি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। তবে, তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে পাহাড়ে বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে চরম অসন্তোষ ও অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে।
সংগঠনটি অভিযোগ করে জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন–২০১৬ অনুযায়ী গঠিত কমিশনে পার্বত্য অঞ্চলের ৫২ শতাংশ বাঙালি জনগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি নেই। কমিশনের নয়জন সদস্যের মধ্যে তিনজন সার্কেল চিফ (রাজা), তিনজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, একজন আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যানসহ সাতজনই পাহাড়ি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। বাকি দুই সদস্যের একজন চেয়ারম্যান ও অন্যজন চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার।
পিসিসিপি’র নেতারা বলেন, ভূমি কমিশনে বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব না থাকায় একপেশে সিদ্ধান্ত আসার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পাহাড়ের বৃহৎ বাঙালি জনগোষ্ঠী ভূমিহীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা আরও অভিযোগ করেন, কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার কোনো সুযোগ না রাখায় এই আইন সংবিধানবিরোধী ও বৈষম্যমূলক।
স্মারকলিপিতে পিসিসিপি রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি তাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ মোশাররফ হোসেন, যুব পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূর হোসেন এবং পিসিএনপি’র জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ স্বাক্ষর করেন।
তারা দাবি করেন, পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় পিসিসিপি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু ভূমি কমিশনের বৈঠক নিয়ে বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্মারকলিপিতে পিসিসিপি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, ঘোষিত ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের কোনো বৈঠক তারা মেনে নেবে না। প্রয়োজনে রাজপথে নেমে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে বৈঠক প্রতিহত করা হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, “আমরা পাহাড়ের শান্তি ও সম্প্রীতি চাই। কিন্তু ভূমি কমিশনের পক্ষপাতমূলক গঠন পাহাড়ে নতুন করে বিভাজন ও অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। তাই ১৯ অক্টোবরের বৈঠক স্থগিত করে বাঙালি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।”
পিসিসিপি নেতারা জেলা প্রশাসকের নিকট অনুরোধ জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বজায় রাখতে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের আগপর্যন্ত ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের কোনো বৈঠক না করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন নেতৃবৃন্দ।