ঢাকা | মে ৩০, ২০২৫ - ১২:২৪ অপরাহ্ন

শিরোনাম

রাউজানে কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার তরুণকে প্রাণনাশের হুমকি

  • আপডেট: Wednesday, May 28, 2025 - 1:22 pm

জাগো জনতা অনলাইন।। চট্টগ্রামের রাউজানে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ সাধারণ জনগণ। গত ২৫ মে (রোববার) কিশোর গ্যাংয়ের দুই দফায় মারধরে গুরুতর আহত তরুণ রিমনের (২১) বড় বোন চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রী রুশমি আক্তার একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন রাউজান থানায়।

ওই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা শুধু দুই দফা মারধর করেই ক্ষ্যন্ত হয়নি। আহত তরুণ রিমনকে একেরপর এক প্রাণনাশের হুমকিও দিয়ে যাচ্ছেন তারা। ফলে দুশ্চিন্তায় দিনপাড় করছেন বাবা-মা হারা এতিম তরুণ রিমন।

রাউজান থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মোঃ আব্দুল্লাহ রিমনের সাথে রাউজান থানার ১০ নং পূর্ব গুজরা ইউনিয়ন অলিমিয়া হাট এলাকার বাসিন্দা মীম ফাতেমা ইমু (১৬)-এর প্রেমের সম্পর্ক থাকার এমন প্রেক্ষাপটে গত মার্চ মাসের ৩ তারিখ সকাল আনুমানিক ১১টার সময় অলিমিয়া হাটের স্কুলের রাস্তায় সাক্ষাৎ হয়, সঙ্গে তার বান্ধবীও ছিলেন। সাক্ষাৎ শেষে মীম ফাতেমা ইমু তার বান্ধবী সহো বাড়ীতে চলে যায়। আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা কিশোর গ্যাংয়ের ৬-৭ জন সদস্য রিমনকে অলিমিয়া হাটের রাস্তা থেকে ধরে স্কুল ও মাদ্রাসার মাঠে নিয়ে যায় এবং আটক করে অলিমিয়া হাট মাদ্রাসার ভেতরের একটি খালি কক্ষে নিয়ে মারধর করে। এবং তার কাছ থেকে ২৫,০০০/- টাকা দাবি করে ও ব্যক্তিগত মোবাইল নিয়ে ফেলে।

অভিযোগ সূত্রে আরো জানা গেছে, টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মাদ্রাসার একটি খালি কক্ষে নিয়ে রিমনকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি মেরে মাটিতে ফেলে মাথায় আঘাত করে। এতে রিমনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাথা দাগফুলা জখম হয়। পরবর্তীতে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রিমনের বোন রুশমি আক্তারের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তাকে  ঘটনাস্থলে যেতে বলে।

পরে ঘটনাস্থলে গেলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ও তাদের সহযোগীরা রুশমি আক্তারের সাথেও খারাপ আচরণ করে। এবং রিমনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অনৈতিক কার্যকলাপ করার অপবাদ দিতে থাকে।

একপর্যায়ে কিশোর গ্যাং পরিচালনাকারী নেতা অলিমিয়া হাটের মো: রাশেদের নির্দেশে কিশোর গ্যাং এর  উল্লেখিত সদস্য ও অন্যান্যরা রিমন ও রুশমি আক্তারের কাছ থেকে জোর করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর আদায় করে নেন। পরে রুশমি আক্তারের কাছ থেকে এক হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে নেয় তারা। ভুক্তভোগী রিমনের হাতে থাকা ব্যবহৃত মোবাইল কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রেখে দেয়। মোবাইল ফেরত চাওয়ার জন্য কল দেওয়া হলে কিশোর গ্যাং এর পরিচালক নেতা মো:রাশেদ ভুক্তভোগী বোন রুশমি আক্তারের কাছে থেকে আরো হাতখরচ এর কথা বলে চাঁদা দাবি করে(ভয়েস রেকর্ড সংরক্ষিত)।

প্রথম দফায় রিমন গুরুতর আহত হয়ে বমি,মাথা ব্যথা ও পেঠ ব্যথা হওয়ায় ৫ মার্চ রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করে এবং মাথায় আঘাত হওয়ায় পরীক্ষা দিয়ে চিকিৎসাপত্রে পুলিশ কেইস ফাইল হয়।

পরবর্তীতে পুনরায় বিএনপি নেতা বিদন বড়ুয়ার সাহায্য নিয়ে ৬ মার্চ রাত ১০টার দিকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বাসায় এসে ক্ষমা চেয়ে ভুক্তভোগী রিমনের মোবাইলটি ফেরত দেয়। আসামীরা এসে ক্ষমা প্রার্থনা চাওয়ায় তার পরিবার কোনো আইনী পদক্ষেপ নেয়নি।

রাউজান থানার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রথম ঘটনার পর থেকে রিমনের সাথে ইমু’র কোন যোগাযোগ কিংবা সম্পর্ক নেই। এরপরেও সর্বশেষ গত ২১ মে রাত ৮টার দিকে রিমন বাজার করতে অলিমিয়াহাট বাজারে গেলে একটি অযুহাত দিয়ে  কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রিমনকে অন্ধকারে মাদ্রাসার মাঠের আড়ালে একা নিয়ে যায়। এবং পূর্বের ন্যায় ৫-৭ জন মিলে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি মেরে গুরুতর আহত করে। শুধু তাই নয়, জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য মেরে ভিডিও ধারণ করে। রিমনের আর্তচিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রাণে হত্যা করতে পারেনি। পরে তারা হুমকি দেয় যে, ঘটনার বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিলে রিমনকে হত্যা করে লাশ গুম করা হবে।
এমনকি রিমনের আরেক ভাই মোঃ রায়হান (২৩) বিদেশ থেকে দেশে আসলে তাকেও খুন করা হবে। এমন বাস্তবতায় কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকান্ড ও হুমকির কারণে তরুণ রিমন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এক ধরনের নিরুপায় হয়ে রাউজান থানায় অভিযোগ করতে বাধ্য হয়েছে ভুক্তোগী পরিবার।

রাউজান থানায় করা অভিযোগপত্রে জানা যায়, কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া সদস্যরা হলেন- কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে থাকা প্রথম আসামি অলিমিয়া হাটের ইমাম তালুকদার বাড়ির হায়দার আলীর ছেলে মো:মারুফ, দ্বিতীয় বাচা মিয়ার ছেলে মো: ফাহিম, তৃতীয় আনোয়ার সিকদারের নতুন বাড়ির খোরশেদ আলমের ছেলে মো:রাকিবুল ইসলাম, চতুর্থ আজগর আলী সিকদার বাড়ির জানে আলমের ছেলে মো:তারেক(ফোনে হত্যা ও হুমকি দাতার রেকর্ড সংরক্ষিত), পঞ্চম আসামি আউলাপিতার বাড়ির মৃত শাহ পরানের ছেলে মো: সায়েক। এবং কিশোর গ্যাং পরিচালনাকারী প্রধানের নাম মো:রাশেদ ডাক নাম (জাসসো)।

এ বিষয়ে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। শীঘ্রই তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।