ঢাকা | ডিসেম্বর ১২, ২০২৪ - ১১:২৯ পূর্বাহ্ন

যানজট নিরসনে ট্রাফিকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ, সুফল পাচ্ছে নগরবাসী

  • আপডেট: Sunday, December 8, 2024 - 3:30 pm

এম এইচ সৈকত : ঢাকায় দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। যার কারণে সড়কজুড়ে যানজট বেড়েই চলছে। ফলে প্রতিনিয়ত যানজট নিরসনে ট্রাফিকসহ সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। নগরবাসীকে যানজটমুক্ত রাখতে সড়কজুড়ে সিগনাল ঘুরিয়ে দেওয়াসহ নানান কৌশল  অবলম্বন করেছে ট্রাফিক বিভাগ। ফলে সুফল পাচ্ছে নগরবাসী।

সরেজমিনে দেখা যায়, যানজনট নিরসনে রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় ও র‌্যাংগস ফ্লাইওভারের তেজঁগাও এলকাসহ বেশ কিছু চৌরাস্তার সিগনাল ঘুরিয়ে দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। ফলে কয়েক লেনের যানবাহন বিকল্প সড়ক ব্যবহার করায়, প্রধান সড়কে কমেছে যানবাহনের চাপ এবং সড়কে আগের তুলনায় যানজট কম দেখা যাচ্ছে।
গণপরিহনের যাত্রীরা জানান, সাইন্সল্যাবে একটি সিগনালের কারণে ব্যাপক সময় বসে থাকতে হতো। ট্রাফিকের পক্ষ থেকে সিগনাল ঘুরিয়ে দেওয়ার ফলে আগের তুলনায় কম সময় যানজটে পড়তে হয়।

ঠিকানা পরিবহনের আসাদ নমের একজন যাত্রী জানান, সাভার থেকে নিউমার্কেট এলাকায় যেতে অনেক সিগনালে ঘণ্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হতো। এসব সিগনালের মধ্যে সংসদ ভবন এলকায় সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় হতো। বর্তমানে বেশ কিছুদিন দেখি গাড়িগুলো সংসদ ভবনের সামনে থেকে ইউর্টান নিচ্ছে। ফলে আগে এই সিগনালে অধিক সময় পার হলেও এখন আর দাঁড়াতেই হয় না।

বলাকা সার্ভিসের লিমা নামের আরেক যাত্রী বলেন, আগে এয়ারপোর্ট থেকে তেজগাঁও ভূমি আপিল বোর্ডে যেতে র‌্যাংগস ফ্লাইওভারের ঢালে তেজঁগাও চৌরাস্তায় অতিরিক্ত যানজটে বিরক্ত লাগতো। বর্তমানে ওই সিগনালে বসে থাকতে হয় না। কারণ যানবাহনগুলো এখন সিগনালে না গিয়ে ভিতরের রাস্তা দিয়ে চলে যায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঢাকায় অতিরিক্ত যানবাহন এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে দিন দিন যানজট বেড়েই চলছে। ফলে প্রতিদিন যানজটের কারণে প্রায় ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। যা অর্থমূল্যে দৈনিক প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা এবং বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা। তাই যানজট নিরসনে এখনই উদ্যোগ না নেওয়া হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। যানজট নিরসনের দায়িত্ব শুধু ট্রাফিক পুলিশের না, এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা জানান, নাগরিকের সেবা আমরা সবসময়ই যানজট নিরসনে কাজ করে থাকি। ওই কাজেরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন চৌরাস্তায় সিগনাল ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি ট্রাফিক বিভাগের এই উদ্যোগে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে নগরবাসি।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন-মহাসচিব লায়ন মো. গনি মিয়া বাবুল জানান, ‘সড়কের শৃঙ্খলা ও যানজট নিরসনে ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজনের অতিরিক্ত গাড়ি ক্রয় করা বন্ধ করতে হবে। ট্রাফিক বিভাগ যে উদ্যোগটি নিয়েছে তা আমি সাধুবাদ জানাই। তবে সব চৌরাস্তায় সুফল পাওয়া যাবে না। কারণ ভিতরের অনেক রাস্তা সংকীর্ণ। ফলে সেখানেও গাড়ি অধিক সময় বসে থাকতে হবে। তাই এ বিষয়ে সরকারে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। সরাকর চাইলে যানজট নিরসনে ঢাকায় যেসব চৌরাস্তা রয়েছে সেখানে আন্ডার পাস কিংবা ওভার পাস করে দিতে পারে। তাহলে যানজট অনেকটাই কমে যাবে।’
ট্রাফিকের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খোন্দকার নজমুল হাসান জানান, ‘আমরা পরীক্ষা মূলক এই উদ্যোগেটি নিয়েছি। যেটাকে আপনারা বাইপাস বলছেন ওটাও মূল রাস্তা। এতোদিন বেশিরভাগ গাড়ি সামনের সড়ক দিয়ে চলাচল করতো আর এখন সিগনাল ঘুরিয়ে দেওয়া কারণে পার্শ সড়ক ব্যবহার করছে। ফলে আগের তুলনায় সিগনালে কম সময় লাগে। তাই এই উদ্যোগে নাগরিকের যদি মিনিমাম তিন মিনিটও বাঁচে তাতেও প্রতিদিন গড়ে অনেক সময় বেঁচে যাবে।’