ঢাকা | অক্টোবর ৬, ২০২৫ - ৩:২২ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

মিরসরাইয়ে মৃত্যুফাঁদ: এক বছরে ৮৮ দুর্ঘটনায় ৫০ জনের মৃত্যু 

  • আপডেট: Sunday, October 5, 2025 - 9:53 am

জাগো জনতা অনলাইন।। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই অংশ যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত এক বছরে এই অংশে ৮৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ জন, আহত হয়েছেন আরও ১৪৬ জন। নিহতদের মধ্যে আছেন পথচারী, মোটরসাইকেলচালক, গাড়িচালক ও যাত্রী—সব শ্রেণির মানুষ।

গত ১৭ জানুয়ারি আবুতোরাব বাজারের নির্মাণসামগ্রীর দোকানের কর্মচারী সানি বড়ুয়া দুই বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। উপজেলার সুফিয়া রাস্তার মাথা এলাকায় দ্রতগতির বাস চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি ও তার দুই বন্ধু। সানির মৃত্যুতে স্ত্রী, শিশু কন্যা ও বৃদ্ধ মা-বাবাকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে যায় দুর্ঘটনাটি।

এমন দুর্ঘটনায় স্বজনহারা পরিবারের সংখ্যা মিরসরাইয়ে ক্রমেই বাড়ছে। জোরারগঞ্জ ও কুমিরা হাইওয়ে থানা, বারইয়ারহাট ও মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস এবং গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ১ অক্টোবর পর্যন্ত এই মহাসড়কের মিরসরাই অংশে ৮৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ট্রাক-লরির সংঘর্ষে প্রাণহানি সবচেয়ে বেশি
দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৫৯টি দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল মালবাহী ট্রাক ও লরি। এর মধ্যে ২৫টি ছিল ট্রাক-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষ। এসব দুর্ঘটনায় ১৫ জন চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন। ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান উল্টে যাওয়ার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৩ জন।

এ ছাড়া মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৩টি, যেখানে ৯ জন নিহত হয়েছেন। সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪ জন। যাত্রীবাহী বাসের ৫টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে আরও ৫ জনের। হাঁটার সময় বা রাস্তা পারাপারে নিহত হয়েছেন ১১ জন পথচারী।

কেন ঘটছে এত দুর্ঘটনা
হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণে বড়দারগারহাট থেকে উত্তরে ধুমঘাট সেতু পর্যন্ত প্রায় ২৮ কিলোমিটার মহাসড়কে দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি। রাস্তার গর্ত ও খানাখন্দ, ইউটার্নে গাড়ি থামানো, অবৈধভাবে ট্রাক-লরির পার্কিং, সিএনজি চলাচল, বেপরোয়া গতি ও ট্রাফিক আইন না মানাই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক বোরহান উদ্দিন।

বারইয়ারহাট ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘অনেক সময় রাস্তার ওপর থেমে থাকা গাড়ির পেছনে অন্য গাড়ি ধাক্কা দেয়। চালকের চোখে ঘুম থাকায় সামনের গাড়ি দেখতে পান না।’

এক বছরে ৩১টি মামলা
এই সময়ের মধ্যে জোরারগঞ্জ ও কুমিরা হাইওয়ে থানায় মোট ৩১টি মামলা হয়েছে। জোরারগঞ্জ থানায় ২৫টি এবং কুমিরায় ৬টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ১১৭ জন জোরারগঞ্জ ও ২৬ জন কুমিরা থানার এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার।

জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি আবদুল্লা আল মামুন বলেন, ‘বৃষ্টির সময় রাস্তার গর্ত বাড়ে, এতে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। চালকের চোখে ঘুমও বড় কারণ। আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছি এবং সিএনজির অবৈধ চলাচল বন্ধে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করছি।’