ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪ - ৩:৪৩ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

ভয়ংকর যুদ্ধ মিয়ানমারে, সংকটে সেন্টমার্টিন

  • আপডেট: Thursday, June 13, 2024 - 5:21 am

মো: খায়রুল আলম খান : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি চলছে। দুপক্ষের মর্টার শেল ও ভারী গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে কক্সবাজারের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। পাশাপাশি টেকনাফ সীমান্তেও গোলার বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। সে দেশের আকাশসীমায় উড়ছে যুদ্ধবিমান। এতে ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে আছেন দ্বীপের বাসিন্দারা।

শুধু তা-ই নয়, মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের দিকে গুলি চালানোর কারণে সাত দিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ফলে ওষুধ, খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটে পড়েছেন দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা। তবে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে চলাচলের বিকল্প রুট খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘মিয়ানমারে অভ্যন্তরে চলমান যুদ্ধে প্রায়ই সীমান্তে বিকট শব্দ পাওয়া যায়। এতে চিন্তার কোনও কারণ নেই। তবে গুলিবর্ষণের কারণে নৌযান চলাচল বন্ধ হওয়ায় সেন্টমার্টিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এটি সমাধানে আমরা টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটের বিকল্প খুঁজছি। বিষয়টি খুব গুরুত্বসহকারে দেখছি।
বুধবার সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত থেমে থেকে মিয়ানমারের সীমান্তে ভারী গোলা ও মর্টার শেলের শব্দে সেন্টমার্টিন কেঁপে উঠেছে বলে জানিয়েছেন দ্বীপের বাসিন্দ নুরুল আলম।

তিনি বলেন, দ্বীপের পূর্বে চলমান যুদ্ধে মিয়ানমারের রাখাইন মংডুতে হাসসুরাতা ও মেরুল্ল্যা গ্রামে ব্যাপক মর্টার শেলের শব্দ হচ্ছে। ওপারের বিকট শব্দে আমার বাড়ির উঠান কেঁপে উঠেছে। এ ছাড়া সে দেশের আকাশে যুদ্ধবিমানও দেখা গেছে। জলসীমায় সে দেশের জাহাজ দেখা যাচ্ছে। সেখান থেকে আমাদের ট্রলারেও গুলিবর্ষণ করা হয়েছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান আক্তার কামাল বলেন, সকাল থেকে মিয়ানমার সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলির বিকট শব্দ এপারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে অন্য দিনের তুলনায় সেটি বেশি। বিশেষ করে মিয়ানমার গুলিবর্ষণের কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার মানুষ দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে।
সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। সে দেশের মংডুর পাশাপাশি বুথেডংয়েও যুদ্ধ চলমান রয়েছে। এই দুই রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে জান্তা সরকার। যে কারণে দুপক্ষের মধ্য মর্টার শেল ও ভারী গোলার বিকট শব্দে কাঁপছে সেন্টমার্টিন। কয়েকবার মিয়ানমারের আকাশপথে হেলিকপ্টার নিয়ে হামলার দৃশ্য দেখা গেছে। এতে বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলরত নৌযান লক্ষ্য করে মিয়ানমারের জলসীমা থেকে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। এতে আতঙ্কে আছেন দ্বীপের মানুষ।
দ্বীপের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, সকাল থেকে রাখাইন রাজ্য থেকে গোলার শব্দ এপারে ভেসে আসছে। অন্য দিনের তুলনায় আজ থেমে থেমে হলেও বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। অনেক সময় শব্দে সীমান্তের বাড়িঘর কেঁপে উঠছে। এ অবস্থায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। বিশেষ করে দ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব জোরালো হচ্ছে। অনেকের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়ে ৩ শতাধিক মানুষ সাত দিন ধরে টেকনাফে আটকা পড়েছে।

বুধবার দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধের মধ্যে টেকনাফ সদরের মৌলভীপাড়ার পাশে নাফ নদে সে দেশের জলসীমায় যুদ্ধজাহাজ দেখতে পান স্থানীয় ব্যক্তিরা।
এ বিষয়ে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ইউপি সদস্য এনামুল হক এনাম বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় দুপুর থেকে ওপারের গোলার শব্দ পাচ্ছি আমরা। এ ছাড়া ওপারের সুদাপাড়া ও ডেইলপাড়ার নাফ নদে দুপুর থেকে একটি যুদ্ধজাহাজ দেখা যাচ্ছে। এতে সীমান্ত এলাকার ৫ হাজার মানুষ ভয়ে আছে। গ্রামে জরুরি কোনও কাজ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় চলাচল নিষেধ করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তের কাছে চিংড়ি চাষিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে বিজিবির পক্ষ থেকে।’
শাহপরীর দ্বীপে বাসিন্দা মো. শাহীন আলম বলেন, ‘সকালে নাফ নদ হয়ে মিয়ানমারের একটি যুদ্ধজাহাজ উত্তরে টেকনাফের দিকে রওনা দিয়েছে। জাহাজটি এখনও এদিকে আসতে দেখা যায়নি। শুনেছি জাহাজটি মৌলভীপাড়ার সীমান্তের ওপারে অবস্থান করছে।’
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে গুলিবর্ষণের পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) সতর্ক অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সার্ভিস ট্রলারকে গুলিবর্ষণের ঘটনায় মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) কাছে প্রতিবাদলিপি পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দুপুরেও সেন্টমার্টিনগামী ট্রলারে স্পিডবোট লক্ষ্য করে মিয়ানমারের দিক থেকে গুলি করা হয়। এর আগে গত বুধ ও শনিবার মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বাংলাদেশি ট্রলারকে লক্ষ্য করে দুই দফায় গুলি চালানো হয়েছে।
মিয়ানমারের বিজিপি, নাকি সেখানকার বিদ্রোহী কোনও গোষ্ঠী এই গুলি চালিয়েছে, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত করে কোনও তথ্য জানাতে পারেনি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।