ঢাকা | জুলাই ১৭, ২০২৫ - ২:৩৩ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

ভ্যাট আইনের ভয় – সংস্কারে কি দূর হয়?

  • আপডেট: Tuesday, July 15, 2025 - 8:28 pm

মো. আলিমুজ্জামান।। বাংলাদেশে রাজস্ব সংক্রান্ত তিনটা শুল্ক ও কর ব্যাবস্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনে। প্রথম-কাষ্টমস হল দেশে থেকে বিদেশে গেলে পাশপোর্টে ডিপার্চার ও ফিরে আসলে এ্যারাইভাল সিলের ন্যায়। শুধুমাত্র পন্য আমদানী ও রপ্তানীর সময় কাষ্টমস আইন (পন্যের জীবনে একবার) প্রয়োজন হয়। দ্বিতীয় – আয়কর বছরে একবার, সেটা আয়ের উপর নেওয়ার কথা থাকলেও শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে প্রফিট এর সাথে।তৃতীয়- ভ্যাট হল ব্যবসায়ীর প্রতিটা নিস্বাসে, প্রতিটা বিশ্বাসে। ধরুন ব্যবসায়ী বাসা থেকে বের হয়ে কোথাও যাবেন, যদি নিজের গাডি হলে অকটেনের উপর এক রকম ও গাড়ীভাড়া করলে ভ্যাট হার ভিন্ন হবে। ভাবছেন রিক্সা, সিএনজি, উবার বা বাসে তো ভ্যাট হয় না কিন্ত বার্ষিক হিসাব বিবরনী অডিট করলে ট্যুর বা যাতয়াত হিসাবে খরচ দেখালে, ভ্যাট আইনের অজুহাত বা বিবিধ খাতে নিয়ে ১৫% হারে ভ্যাট হওয়ার আছে।

পৃথীবিতে ১৯৬৭-৬৮ সালে জন্ম নেওয়া কোন আইন ভীতি হলে দ্রুতার সাথে ১৬০টি দেশে কার্যকর হতো না। ভ্যাট আইন ভীতির নয়, তাহলে আমাদের দেশে কিভাবে ভীতির জন্ম হল? এ প্রশ্নের উত্তর না পেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নাম পরিবর্তন করে জাতীয় সততা বোর্ড বা সংস্কারের নামে চারটা ভাগ করে,চারজন মন্ত্রী বসালেও ভয় দূর হবে বলে মনে হয় না। ব্যবস্যাবান্ধব ও দ্রুতবর্ধনশীল কর আইন কেন বাংলাদেশে মূসক আইন -১৯৯১ সাল থেকে কার্যকর হওয়ার পর ৩৫ বছরে ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জন তো দূরের বিষয় আরও ভীতির জন্ম হল।
ভ্যাটভীতির জন্য দায়ী প্রচলিত কথা- ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের দূর্ণীতি, না আরো ভিন্ন কিছূ আছে। পৃথিবীতে মানুষ সুযোগ পেলে দূর্ণীতি করা স্বাভাবিক, তাই এটা সমস্যার কারন হলেও প্রধান না। প্রধান কারণ হিসাবে বিবেচনাযোগ্য স্বাভাবিকতা কিভাবে তৈরী হল। যার জন্য তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে, প্রথম- ভ্যাট বিশ্বে কিভাবে ব্যবসায়ী বান্ধব হল, দ্বিতীয় – ভ্যাটভীতির মূলে আইন ও প্রয়োগে ভিন্নতা তৈরী হল। তৃতীয় – কিভাবে সমাধান যোগ্য করা যায়। আজ প্রথম প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।
মূসক আইন-১৯৯১ অনুসারে মূল্য ঘোষনা সহ বিবিধ জটিলতা থাকায়, সেগুলো উত্তোরণ ও অটোমেশন চালু করার শর্তে মূসক আইন ২০১২ বলা হলেও ২০১৯-২০ অর্থ বছর থেকে কার্যকর হয়, যা বিশ্বব্যাংক ও আই এম এফ সূত্র মত বিশ্ব মানের। বিশ্বমানের ভ্যাট নির্ণয়ের সূত্র-
আউটপুট ভ্যাট – ইনপুট ভ্যাট = সরকারের পাওনা।
আইন সূত্র অনুসারে বিনিময় মূল্য হল ভ্যাট সহ প্রাপ্তি যার একটা অংশ ব্যবসায়ীর ও অন্য অংশ ভ্যাট হিসাবে সরকারের পাবে। আউটপুট ভ্যাট হল, ধরা যাক মোট প্রাপ্তি ১০০০টাকা সেটাকে ভাগ করতে ১০০+১৫ ভ্যাট হার=৮.৬৯ টাকা গুন করতে হবে ভ্যাট হার ১৫ দিয়ে = ১৩০.৪৩ টাকা আউটপুট ভ্যাট আর ব্যবসায়ীর নেট প্রাপ্তি ৮৬৯.৫৭ টাকা। পূর্বের আইনে চলতি হিসাব থাকলেও বর্তমান বিশ্বব্যাপি গ্রহনযোগ্য পদ্ধতি হল চলতি মাসে বিক্রয়ের বিপরীতে ইস্যুকৃত মূসক চালান সহ সুত্র অনুসারে হিসাব করে ভ্যাট রির্টান দাখিল করতে হবে। এ বিশ্ব মানের সুত্র আমাদের আইনে বলা আছে।
ভ্যাট আইন অনুসারে ব্যবসায়ী শুধুমাত্র তার পন্য বা সেবার উপর ভ্যাট প্রদান ও হিসাব রক্ষন করার দায়বদ্ধ। মোট বিক্রয়মূল্য বা বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করার দায় ব্যবসায়ীর তাই তার পন্য বা সেবার মোট মূল্য নির্ণয় করতে কাঁচামাল+সমস্ত খরচ+প্রফিট+ভ্যাট=বিনিময় মূল্য। ক্রয় বা সেবা গ্রহনকরা সময়ে মূসক আরোপযোগ্য সকল প্রকার প্রদত্ত মূসক হল ইনপুট ভ্যাট যা আউটপুট ভ্যাটের সাথে সমন্বয় করে যদি সকরারের পাওনা থাকে তাহলে নগদে পরিশোধ করতে হবে। বিশ্ব ভ্যাট ব্যবস্থায় এ সংক্রান্ত কার্যক্রম এখানে সমাপ্ত।
বিশ্ব মানের ভ্যাট আইন ১৫৯ টি দেশের মূসক আইন, আদায় ও পরিশোধে কোন জটিলতা ও ভীতির জন্ম হল না কিন্ত আমাদের দেশে হল কেন? এ প্রশ্নে উত্তর পেতে আগামী পর্ব পর্য়ন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
প্রমান করা যাবে, আইন প্রয়োগের জটিলতা ভীতি তৈরী করে , কেন ব্যবসায়ীগন শতভাবে চেষ্টা করার পরও ভ্যাট দায় থেকে মূক্তি পাওয়ার জায়গা নাই। ভোক্তাকর হিসাবে ভ্যাট কিভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করছে। ভ্যাট হার কম হলে কম ভ্যাট প্রদান করা যায় ব্যবসায়ীর জন্মগত ধারণার সুযোগে চলছে সুবিধা দেওয়া ও নেয়ার খেলা। আমরা চলছি সেই জন্ম সৃষ্টির লক্ষ্যে, উদ্দেশ্য কারো দোষ বা গুন বলা না। পথ হারালে শুরু করতে হয় সেই শুরু থেকে। আস্থার জন্য সংস্কার সমাধান না, আগে আস্থায় আনার জায়গা বের করে তারপর সংস্কার হবে কার্যকর। না হলে “ডিম আগে, না মুরগি আগে” এ চক্রাকারে ঘুরতে হবে সন্দহের দোলাচালে।

মো. আলিমুজ্জামান, কনসালটেন্ট,  ভ্যাট-ট্যাক্স ও কাস্টমস
মো. আলিমুজ্জামান, কনসালটেন্ট, ভ্যাট-ট্যাক্স ও কাস্টমস