ঢাকা | সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪ - ৬:৫৭ পূর্বাহ্ন

ভাঙচুরের ঘটনায় ১৪ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের

  • আপডেট: Monday, September 11, 2023 - 6:34 pm

মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, চবি প্রতিনিধি।।

গত ৭ সেপ্টেম্বর ঘটে যাওয়া শাটল ট্র্যাজেডির পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শনিবার ( ৯ সেপ্টেম্বর)  রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ ও নিরাপত্তা প্রধান শেখ মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বাদি হয়ে হাটহাজারী থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন। এতে  ৭ জন করে ২ মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও এক হাজার শিক্ষার্থীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে ।

মামলার এজাহার অনুযায়ী উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুরের মামলার আসামিরা হলেন- ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল হোসেন আইমুন, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দীপন বণিক দীপ্ত, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবষের রিয়াদ হাসান রাব্বি, ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মদ মান্না, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ ভূইয়া, পালি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম ও পদার্থবিদ্যা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম।

পরিবহন দফতরে ভাঙচুর মামলার আসামিরা হলেন- দর্শন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইমরান নাজির ইমন, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ বিভাগের শিক্ষার্থী নাসির উদ্দিন মো. সিফাত উল্লাহ, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ বিভাগের অনিক দাশ, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিরুদ্ধ বিশ্বাস এবং একই বিভাগ ও শিক্ষাবর্ষের আজিমুজ্জামান।

দুই মামলায় নাম উল্লেখিত ১৪ আসামির মধ্যে ৬ জন ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন সিক্সটি নাইন গ্রুপের, ৫ জন চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার (সিএফসি) গ্রুপের, ১ জন বিজয় গ্রুপের এবং ২ জন সাধারণ ছাত্র।

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার মামলার বিষয়ে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুটি মামলা করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন ভিডিও, সিসিটিভি ফুটেজ ও ঘটনাস্থল বিশ্লেষণ করে যাদেরকে পেয়েছে তাদের নাম প্রকাশ করেছে। যারা এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট  তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে”। মামলায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানির শিকার হতে  হবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া এসকল অপ্রত্যাশিত ঘটনার তদারকি করতে  দুটি পৃথক  তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রথমটি  চৌধুরীহাট এলাকায় ট্রেনের ছাদে বসা শিক্ষার্থীদের গাছের ডালের  সাথে ধাক্কা খেয়ে আহত হওয়ার ঘটনায় এবং অপরটি  উপাচার্যের বাসভবন, পরিবহন দফতর ও শিক্ষক ক্লাব ভাঙচুরের ঘটনায়। তবে  প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত কোনো সময় উল্লেখ করা হয়নি।

সাংবাদিকতা বিভাগের ড. মোহাম্মদ সহিদউল্লাহকে আহ্বায়ক করে ট্রেন দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল, সদস্য সচিব হিসেবে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দর রাজ্জাক।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক ড. বশির আহমেদকে আহ্বায়ক ও  জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র অধ্যাপক ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী, ফাইন্যান্স বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. নাজনীন নাহার ইসলামকে সদস্য এবং সহকারী প্রক্টর সৌরভ সাহা জয়কে সদস্য সচিব করে ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ বলেন, “দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে”।

গত ৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম শহর থেকে শাটল ট্রেনে করে ফেরার পথে চৌধুরী হাট এলাকায় রেললাইনের উপরে হেলে থাকা গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে ফতেয়াবাদ মেডিকেল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।এতেই শিক্ষার্থীয়া ক্ষুব্ধ হয়ে রাত সাড়ে ৮টার শাটল ট্রেন ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছালেই শিক্ষার্থীরা নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক অবরুদ্ধ করেন।  এ সময় তারা আগুন জ্বালিয়ে প্রশাসনের নিকট শিক্ষার্থী আহতের জবাব ও শাটল ট্রেনের বগি বাড়ানোর দাবি জানান। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে শাটল ট্রেনের বগিতে  আগুন জ্বালিয়ে দেওয়াসহ ভিসির বাসভবন, পরিবহন দপ্তরের প্রায় ৬০টির ও অধিক  শিক্ষকবাসসহ প্রাইভেটকার,চবি ক্লাব ও গেস্ট হাউস ভাঙচুর করে। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়ী করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।