জানা যায়, এসব অনিয়মের সংবাদ প্রচার হওয়ার পরেও বিষয়টি আমলে নেয়নি উপজেলার একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তবে আমলে না নিলেও সংবাদ প্রচারের বিপরীতে প্রতিবাদ করেছে অনেকে। এরমধ্যে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামসহ প্রতিবাদ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা সময়মত বিদ্যালয়ে আসেন না। যার কারণে শিক্ষার্থীরা এসে বিদ্যালয়ের বাহিরে দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। অথচ শিক্ষকরা সঠিক সময় না আসলেও ছুটির সময়ের অনেক আগে চলে যায়। ফলে বাচ্চাদের লেখাপড়ার পাশাপাশি ভালো মানুষ হয়ে ওটার পথ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, গত ১৯ মে সকাল ৯ টা ৩৫ মিনিটে গংগাপুর আলম বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায়, কোন শিক্ষক উপস্থিত নেই। এছাড়া কলাপসিবল গেটেও তালা ঝুলানো। কিন্তু গেটের বাহিরে বই হাতি দাড়িয়ে আছে কোমলমতি শিশুরা। তাদের চোখজুড়ে শুধু ভাবনা, কখন শিক্ষকরা আসবেন।
সেখনকার স্থানীয়রা জানান, এটা আর নতুন কি স্যার। আপনারা আজ আইছেন তারপর কাল থেকে কয়েকদিন হয়ত ঠিকমতো আইবো। আবার আগের মতই আইবো যাইবো, দেখার তো আর কেউ নেই।
অন্যদিকে, গতকাল ২৮ মে বিকেল ৩:৫০ মিনিটে ৭০নং পশ্চিম দেউলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি তালা ঝুলানো।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের বাড়ির কাছের স্কুল হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে ভয় পায়। তাই অভিযোগ থাকলেও মুখ খুলতে নারাজ সবাই। ফলে শিক্ষকদের নিজেদের নিয়মেই চলছে বিদ্যালয়টি।
এদিকে, এ বিদ্যালয় নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে সোস্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দেয়ার পরেই বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছ থেকে ফোন তদবির। অনুরোধ করা হয় ফেইসবুক লাইভ পোস্ট ডিলিট করার জন্য। তবে তাদের তদবির রাখা হয়নি।
আজ ২৯মে বেলা ১: ৪৭ মিনিটের সময় ৫৩ নং দঃ দেউলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কোন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উপস্থিত নেই। এছাড়া বিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলন করা নেই। কারণ জানতে চাইলে কাউকে পাওয়া যায় না। তবে সেখানকার স্থানীয়রা জানান, গ্রামের মধ্যের স্কুলে তাই সবাই সুযোগ নেয়। স্কুলে কোন কোন শিক্ষক আসে আবার আসেও না, দেখার তো কেউ নেই। পোলাপান পড়ুক আর না পড়ুক হেগো কি।
বিশেষজ্ঞরা জানান, কোমলমতি শিশুদের গড়ে তোলার অন্যতম প্রতিষ্ঠান হলো প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরকারের শিশুদের সঠিক বেড়ে ওঠার জন্য প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বাজেট দেন। পাশাপাশি শিক্ষকদের বেতন-ভাতার কোন কম নেই। এরপরও শিক্ষকদের হেয়ালিপনা ও সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা না থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠতে পারছে না। ফলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা নানারকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া অনেক শিশু শিক্ষার্থীরা নেশাসহ মোবাইলে আসক্তি হয়ে পড়েছে। এসবের পেছনে অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানো উচিত। কারণ বিদ্যালয়ে ভর্তি করালেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। তাই শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়তে অভিভাবকদের সচেতনতার পাশাপাশি সরকারসহ স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে গ্রহন করতে হবে। সেটা না করা গেলে এ জাতি বড় ধরনের হুমকির সম্মুখীন হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাজমুল হাসানকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনুপস্থিতির বিষয়টি অবগত করলে তিনি বলেন, আমি আপনার অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে তাদেরকে শোকজ করেছি। আমি এর সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এছাড়া আমি এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকেও জানিয়েছি, তিনি বিষয়টি দেখবেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আপনাদের কাছ থেকে যে তথ্য পেলাম, সে বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।