ঢাকা | মে ৩, ২০২৫ - ৪:৪৪ অপরাহ্ন

শিরোনাম

বেপরোয়া চাঁদাবাজি: ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে সাজেকের পর্যটন শিল্প

  • আপডেট: Saturday, May 3, 2025 - 6:57 am

জাগো জনতা অনলাইন।। রাঙামাটি বাঘাইছড়ি সাজেক ভ্যালিতে পর্যটন শিল্প আবারও চরম সঙ্কটে পড়েছে। ইউপিডিএফ ও জেএসএস মূলদলের একের পর এক বাধা, চাঁদাবাজি এবং সহিংস ঘটনার কারণে এই পর্যটন এলাকা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এতে স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও জীবনধারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইউপিডিএফ ও জেএসএস-এর আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে বেপরোয়া চাঁদা উত্তোলনে এলাকায় নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত করতে হুমকি প্রদর্শন করে পর্যটক প্রবেশ ও যানচলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। সাজেকে যাত্রা পথ দুর্গম। মূলত দুর্গম এই এলাকায় ইউপিডিএফ মূল বেশী প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যার জের ধরে জেএসএস মূল গত বৃহস্পতিবার বিকালে ‘পার্বত্য জুম্ম নিউজ’ নামের ফেইসবুক আইডি থেকে নিজস্ব তৎপরতা বৃদ্ধি এবং সাজেকগামী যেকোনো গাড়ীর ওপর হামলা করার হুমকি দেয়। যানবাহন চালক ও পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রশাসন আপাতত দীঘিনালা থেকে সাজেক গামি যানচলাচল বন্ধ রেখেছে বলে জানা গেছে।

গত ৩০ এপ্রিল ইউপিডিএফ মূল দল শিজকছড়া থেকে সাজেকে পানির গাড়ি প্রবেশে ‘নিষেধাজ্ঞা’ দেয়। এতে করে রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্টগুলোতে পানির অভাব প্রকট আকার ধারণ করে। এর পাশাপাশি শাকসবজি, মাছ, গোশত, বোতলজাত পানি এবং ডিজেলের সংকটে দোকান ও রেস্টুরেন্টগুলো কার্যত ধুঁকছে।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারিশ্যা-দীঘিনালা সড়কের ১১ কিলোমিটার এলাকায় ইউপিডিএফ মূলদলের নেতৃত্বে থাকা সুবল চাকমা ও সোহেল চাকমা চট্ট মেট্রো-ল ১১-৯০৭৮ নম্বর একটি যাত্রীবাহী গাড়ি থামিয়ে চালক মো. জিন্নাত আলীকে (৩২) জোরপূর্বক নামিয়ে বেধড়ক মারধর করে। জিন্নাত বাঘাইছড়ির পশ্চিম মুসলিম ব্লক গ্রামের বাসিন্দা এবং বর্তমানে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ত্রাসীরা গাড়ি থামিয়ে চাঁদা দাবি করে। চালক চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে চারটি চাকার হাওয়া ছেড়ে দিয়ে নির্মমভাবে মারধর করে এবং গাড়ির চাবি কেড়ে নেয়। ভয় দেখানো হয়-কেউ যদি ঘটনা ফাঁস করে, গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে।

জানা গেছে, ইউপিডিএফ মূলদল জেএসএস সঙ্গে বিরোধের সূত্র ধরে গত ২৫ এপ্রিল থেকে সাজেক, উদয়পুর, শিজকছড়া ও মাচালং এলাকায় বাজার বন্ধ করে দিয়েছে, পর্যটন গাড়ির চাবি কেড়ে নিচ্ছে এবং খাদ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ করেছে। সাজেকে প্রবেশরত প্রতিটি গাড়ি থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, গত কয়েকদিনে ইউপিডিএফ কেবল সাজেক থেকেই আট লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করেছে।

সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। প্রতিদিন শত শত পর্যটক এখানে ভ্রমণে আসে। তবে বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতা ও সন্ত্রাসীদের আধিপত্যে পর্যটকদের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। অপরাধীদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি এভাবেই চলতে থাকলে স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান, কৃষি উৎপাদন, ফলমূল বিপণন, এবং ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি প্রসারে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এমন অচলাবস্থা সৃষ্টির জন্য স্থানীয়রা ইউপিডিএফ ও জেএসএস মধ্যকার বিরোধকে দায়ী করছেন।