ঢাকা | সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪ - ১:০২ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

বিএসএফের গুলিতে নিহত শিশু শিক্ষার্থী স্বর্ণা দাসের লাশ হস্তান্তর

  • আপডেট: Wednesday, September 4, 2024 - 5:52 am

জাগো জনতা অনলাইন।। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত স্বর্ণা দাস (১৪) এর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর চেকপোস্ট দিয়ে তার লাশ হস্তান্তর করে বিএসএফ।

নিহত স্বর্ণা জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের বাসিন্দা পরেন্দ্র দাসের মেয়ে। সে স্থানীয় নিরোদ বিহারী উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। স্বর্ণার মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকা জুড়ে চলছে শোকের মাতম।

গত রোববার রাতে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্ত এলাকায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে তার লাশ বিএসএফ নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। সোমবার রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৪৬ ব্যাটালিয়নের একটি দল স্বর্ণাদের বাড়িতে যায়। এ সময় খবরটি এলাকায় জানাজানি হয়।

বাবা পরেন্দ্র দাস বলেন, তাদের চার ছেলে-মেয়ে। এক ছেলে দীর্ঘদিন ধরে ভারতের ত্রিপুরায় থাকেন। ছেলেকে দেখতে তার স্ত্রী সঞ্জিতা ছোট মেয়ে স্বর্ণাকে সঙ্গে নিয়ে রোববার রাতে স্থানীয় দুই দালালের সহযোগিতায় লালারচক সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা চালান। এ সময় তাদের সঙ্গে চট্টগ্রামের এক দম্পতিও ছিলেন। রাত ৯টার দিকে ভারতের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে পৌঁছালে বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। এতে স্বর্ণা ঘটনাস্থলে মারা যায়। তাদের সঙ্গে থাকা দম্পতিও আহত হন। গুলি থামার পর সঞ্জিতাসহ বাকিরা লালারচক গ্রামের একটি বাড়িতে ঢুকে আশ্রয় নেন। পরে আহত দম্পতিকে চিকিৎসার জন্য সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

লালারচকের বাসিন্দা সেনাসদস্য জহিরুল ইসলামদের বাড়িতে আশ্রয় নেন সঞ্জিতারা। জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সীমান্তের কাছেই আমাদের বাড়ি। সেদিন রাতে হঠাৎ তিনজন লোক ডাকাডাকি করতে থাকেন। পরে দেখি দুজন গুলিবিদ্ধ। তারা ঘটনা খুলে বলেন। পরে বিজিবির লালারচক বিওপির দায়িত্বে থাকা লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। গুলিবিদ্ধ দুজনকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাই। সঞ্জিতা সুস্থ ছিলেন। তার কাছ থেকে নাম-ঠিকানা জেনে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করি।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মদন মোহন দাস জানান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর পক্ষ থেকে স্বর্ণার মৃত্যুর খবরটি আমাকে জানানো হয়। লাশ বিএসএফ নিয়ে গেছে। পরে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশ ফেরত দেওয়া হয়েছে।

নিরোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃনাল কান্তি দাশ জানান, ‘স্বর্ণা খুবই মেধাবী ছিল। পড়ালেখা, ছবি আকায় সবদিক দিয়ে সে ভালো ছিল। বিদ্যালয়ে খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সে জড়িত থাকত।’

বিজিবির ৪৬ ব্যাটালিয়নের লালারচক বিওপির টহল কমান্ডার নায়েক ওবায়েদ বলেন, কয়েকজন বাংলাদেশি চোরাইপথে ভারতে যেতে চেয়েছিলেন। এর মধ্যে একজন বিএসএফের গুলিতে মারা যায়।

বিজিবি শ্রীমঙ্গল সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল মিজানুর রহমান শিকদার জানান, খবর পেয়ে বিজিবি ও বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হয়। এরপর ভারতীয় পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে বিজিবি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুলাউড়া থানা পুলিশের কাছে স্বর্ণার লাশ হস্তান্তর করে।

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষণ রায় জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে তারা স্বর্ণার লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করেছে।