বিএনপির সঙ্গে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ কাজ করতে তৈরি আছে আওয়ামী লীগ : হাছান মাহমুদ
জাগোজনতা প্রতিবেদক : বিএনপির সঙ্গে দেশের প্রয়োজনে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ একযোগে কাজ করার বিষয়ে তার দলের প্রস্তুত থাকার কথা বলেছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
রোববার লন্ডনভিত্তিক ‘চ্যানেল এস’ টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “আমি বিএনপির সাথে অনেক ক্ষেত্রে একমত।
“এবং বিএনপি যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বলছে, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে, সেটির সাথে আমরা একমত এবং প্রয়োজনে বিএনপির সাথে একযোগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা কাজ করব।”
ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাছান মাহমুদের দেশ ছাড়ার খবর এসেছিল। তবে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মন্ত্রী ও দলের সংসদ সদস্যদের গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে তিনি কীভাবে বাইরে গেলেন, সেই প্রশ্ন রয়ে গেছে এখনও।
সরকার পতনের পরপরই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলেছিলেন। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো সাড়া আসেনি। দলটির নেতারা আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী’ আখ্যা দিয়ে তাদের প্রতিরোধের কথা বলছে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির বক্তব্যের ধারাও ইদানীং পাল্টেছে। নেতারা দ্রুত নির্বাচন চাইছেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এক এগারোর মত ‘মাইনাস টু’য়ের চেষ্টা সফল হবে না।
২০০৭ সালে সেনা-নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে একযোগে আন্দোলন করার উদাহরণ টানেন হাছান মাহমুদও।
‘আওয়ামী লীগ: তটস্থ, হতাশ, কোণঠাসা?’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ৫ অগাস্ট সরকার পতনের প্রায় তিন মাসের মাথায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতার প্রথম কোনো সাক্ষাৎকার।
উপস্থাপক বুলবুল হাসানের সঞ্চালনায় ‘অভিমত’ নামের সাক্ষাৎকারভিত্তিক ওই অনুষ্ঠানে হাছান তার বর্তমান অবস্থান কোথায় তা জানাননি।
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামল, জুলাই-অগাস্টের ‘হত্যাকাণ্ড’, আওয়ামী লীগের ফিরে আসা, অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
ক্ষমতায় থাকার সময় বিএনপি ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে সংবাদমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই জায়গা করে নেওয়া সাবেক এই তথ্যমন্ত্রী ওই নেতাদের সাম্প্রতিক বিভিন্ন বক্তব্যের সঙ্গে ‘একমত’ হওয়ার কথা তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা, জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ এবং সংস্কারের বিষয়ে তারেক রহমান ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্য নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
এক প্রশ্নে হাছান বলেন, “বিএনপির অনেক বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত। আমরা এক-এগারোর সরকারের সঙ্গে একযোগেই কিন্তু গণতন্ত্রে ফিরিয়ে আনার জন্য, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলন করেছিলাম এবং গণতন্ত্র ফিরে এসেছে।
“এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সাহেব কিংবা বিএনপির মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব যে বক্তব্যগুলো দিচ্ছেন, সেগুলোর অনেকগুলোর সাথে আমরা একমত।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বিশেষ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব যে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার আমরা কারা?’- এই যে প্রশ্ন তুলেছেন, আমি এটির সাথে একমত। এমনকি ছাত্রলীগকে কাগজে নিষিদ্ধ করার পর সেটির বিরুদ্ধেও তারা বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তাদের এই বক্তব্যের সাথে একমত।
“এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবসহ তাদের শীর্ষ নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা- এই বক্তব্যের সাথে আমি পুরোপুরি একমত।”
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ প্রশ্ন থেকে শুরু করে দেশে যাতে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি না হয়, এ ব্যাপারে বিএনপির অবস্থানকেও ‘সাধুবাদ’ জানানোর কথা বলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
হাছান মাহমুদ বলেন, “জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ হওয়ার পর বিএনপি যে বক্তব্য, সেই বক্তব্যের সাথেও আমরা একমত। একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে আমি ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে আমি হামলা করলাম, সেই রাজনৈতিক দলের অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হল- এ নিয়ে সরকারের কোনো বক্তব্য খুঁজে পাচ্ছি না।”
দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে হতাশ হওয়ার কথা তুলে ধরে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “কোনো সরকারই কিন্তু শেষ সরকার নয়, মনে রাখতে হবে; আমাদের ক্ষেত্রে আমরাও শেষ সরকার ছিলাম না।”
এই সময় উপস্থাপক বলেন, ‘সেটা তো আপনারা মনে রাখেননি ড. হাছান মাহমুদ
তখন সাবেক মন্ত্রী বলেন, “অনেকে মনে করেনি। আমি সবসময় মনে রেখেছি। আমি নিজে সবসময় মনে রেখেছি। কিন্তু অনেকে মনে রাখেনি, যেটা সঠিক। কাজে এই সরকারই শেষ সরকার নয়। এটি সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।
“তারা যে আগের সরকারের মন্ত্রীদের হাতকড়া পড়ালেন, ডিম ছুড়লেন, ভবিষ্যতের যে একটা ভয়ংকর উদাহরণ তৈরি করে গেলেন, ভবিষ্যতে কী ঘটে সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।”
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে হলেও আন্দোলনের মধ্যে শেষ মুহূর্তে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই প্রসঙ্গে আজকে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে আমি মনে করি, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করলেই নিষিদ্ধ হয়ে যায় না।”
রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ক্ষেত্রে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ করার বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটার সঙ্গে ‘ব্যক্তিগতভাবে একমত’ হওয়ার কথা বলেন হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে একটি উচ্চ কক্ষ দরকার। যেভাবে ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে আছে। তার মাধ্যমে বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজকে রাষ্ট্রীয় কাজে যুক্ত করা যাবে।
আমাদের দেশে বিরাট একটা বুদ্ধিজীবী সমাজ আছে, বিরাট একটা নাগরিক সমাজ আছে, রাষ্ট্র পরিচালনায় তারা অবদান রাখতে চায়, অবদান রাখতে পারে, কিন্তু তারা ব্যাপকভাবে মনে করে, তাদেরকে সুযোগটা দেওয়া হচ্ছে না।
এবং আমাদের দেশে যে নির্বাচনি ব্যবস্থা, সেই নির্বাচনি ব্যবস্থায় একজন সাধারণ বুদ্ধিজীবীর পক্ষে নির্বাচিত হয়ে আসা কঠিন। কারণ, রাজনীতিতে যে পরিমাণ সময় দিতে হয় এবং রাজনীতি যে রকম খরুচে হয়ে গেছে, সেখানে তাদের পক্ষে নির্বাচিত হয়ে আসাটা কঠিন।
তিনি বলেন, ইলেকটরাল কলেজের মাধ্যমে যদি এই রকম একটা উচ্চ কক্ষ হয়, তাহলে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণিকে, আমাদের দেশের নাগরিক সমাজকে আমরা সেখানে সম্পৃক্ত করতে পারব।
সেক্ষেত্রে অনেক গুণী লোক রাষ্ট্রীয় কাজে অবদান রাখতে পারবেন। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও বক্তব্য রেখেছেন। তিনিও আপার হাউজের পক্ষে কথা বলেছেন।
রাষ্ট্রের অনেকগুলো সংস্কার দরকার মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “কিন্তু রাষ্ট্র সংস্কারের আগে যেটি বেশি দরকার, সেটি হচ্ছে এবং রাষ্ট্র সংস্কারের মূল দায়িত্বটা হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব বলেছেন, আমি তার সাথে শতভাগ একমত।
“এবং আমি মনে করি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই রাষ্ট্র সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। এবং রাষ্ট্র সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়া তিন মাস, ছয় মাস, তিন বছরে শেষ হয়ে যায়, তা নয়।”
রাষ্ট্র পরিচালনায় আওয়ামী লীগের ভুল থাকার কথা স্বীকার করে হাছান মাহমুদ বলেন, অবশ্যই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে আমাদের ভুল ছিল, ভুল হয়। আমরা সেই ভুলগুলোকে স্বীকার করি এবং ভুল থেকে মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে।
আজকে মানুষের মধ্যে যে হতাশা, দ্রব্যমূল্য নিয়ে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে, ভবিষ্যৎ নিয়ে, আমি আশা করব, আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই হতাশা কেটে যাবে, দেশ ভালো থাকবে। দেশে একটি স্বস্তিদায়ক পরিবেশ ফিরে আসবে। আমরা সবাই এ লক্ষ্যে একযোগে করতে চাই।
বিএনপিকে ২০১৪ সালে এবং ২০২৪ সালে নির্বাচনে আনতে না পারাকে আওয়ামী লীগের ‘ব্যর্থতা’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, “বিএনপি অবশ্যই সবসময় নির্বাচন বর্জন করেছে, নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে।
তবে যেহেতু আমরা দায়িত্বে ছিলাম, আমাদের এই জায়গায় ব্যর্থতা ছিল যে, আমরা বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে ব্যর্থ হয়েছি। ২০১৪ সালে এবং ২০২৪ সালে তাদেরকে নির্বাচনে আনতে না পারাটা আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ছিল।
দলীয় ফোরামে এটা নিয়ে কথা হয়েছিল কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাদের বিভিন্ন ফোরামে এটা নিয়ে কথা হয়েছিল, দলীয় ফোরামে বিশদ আলোচনা হয়েছে তা নয়। তবে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা, বিএনপির কেন প্রয়োজন, সেটি নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশেও বক্তব্য রাখেন হাছান মাহমুদ।
নেতাকর্মীদের ‘হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমি তাদের সবার উদ্দেশে বলব এই আঁধার কেটে যাবে এবং সহসা দেশে একটি সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে এবং জনগণের পাশে অতীতেও ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব।
“এবং আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, তিনি সবকিছু সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছেন, সবার সাথে তিনি যোগাযোগ রাখছেন এবং তার মনোবল শতভাগ চাঙ্গা আছে এবং আমরা মনে করি, খুবই সহসাই এই আঁধার কেটে যাবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থাপক জানতে চান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হওয়ার জন্য আপনারা অপেক্ষা করছেন, নাকি আপনাদের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি রয়েছে বা চিন্তা রয়েছে সেটার মধ্য দিয়ে আপনারা কামব্যাক করতে চান?
জবাবে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমরা সচেতনভাবেই অপেক্ষা করছি। এখন যদি আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে নামতাম, সরকারের পক্ষ থেকে আবার অনেকেই বলত যে, আমাদের কারণে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারছে না, আমাদের কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, এই হচ্ছে সেই হচ্ছে।
“গার্মেন্টস শ্রমিকরা যখন আন্দোলন করে তখনও বলে যে, ‘স্বৈরাচার ফিরে আসছে’, গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে, মাজার ভাঙার পর খাদেমরা বিক্ষোভ করলে ‘স্বৈরাচার ফিরে আসছে’, এই বক্তব্য যখন দেওয়া হয়, তখন আমরা সচেতনভাবেই আর কি আমরা নিশ্চুপ আছি, যাতে আমাদের উপর দোষ না আসে।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ এমন একটি দল, যেই দলের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী আছে, কোটি কোটি সমর্থক আছে। সেহেতু আওয়ামী লীগ কখনও ফুরিয়ে যায়নি, কখনও ফুরিয়ে যাবে না।
আওয়ামী লীগ আমরা চাই দেশ ভালো থাকুক, দেশের মানুষ ভালো থাকুক। আওয়ামী লীগ সচেতনভাবে এখন নিশ্চুপ আছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতার প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের প্রবাসী সরকার গঠনের বিষয়ে এক প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, এ ধরনের ‘চিন্তা ভাবনার কথা’ তিনি জানেন না এবং এ ধরনের আলোচনা বিষয় তিনি শোনেননি।
অন্তর্বর্তী সরকার এবং মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করে আসছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ভিন্নমত দমনের জন্য অনেককে গুম করে বিনা বিচারে গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখা হত। ওই বন্দিশালার প্রতীকী নাম ‘আয়না ঘর’।
ভিন্নমত দমনে ‘আয়না ঘরে’ বন্দী রাখার বিষয়ে এক প্রশ্নে এর অস্তিত্ব থাকার বিষয় স্বীকার বা অস্বীকার না করে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, “আওয়ামী লীগের পর এখন তো সরকার ক্ষমতায় প্রায় তিন মাস, তো আয়না ঘরটা দেখাক কোথায়?
“এই সরকারের র্যাব প্রধান বলেছে, ‘আয়না ঘরের’ কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তো আয়না ঘর, আয়না ঘর…”
বাংলাদেশে ২৬ লাখ ভারতীয় থাকা নিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কথিত বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তার কাছে আমার প্রশ্ন ২৬ লক্ষ ভারতীয় কই? আয়না ঘরটা কই? তিনি তা, আইন উপদেষ্টা সেটি একটু জনগণকে দেখাক।”
ব্যক্তিগতভাবে কখনও প্রতিহিংসামূলক আচরণের পক্ষপাতী নন, তার দলও কখনোই প্রতিহিংসামূলক আচরণের পক্ষপাতী নয় দাবি করে হাছান মাহমুদ বলেন, “বাংলাদেশকে থেকে চিরতরের জন্য অস্বীকারের রাজনীতি, দ্বান্দ্বিক রাজনীতি, ঘৃণার রাজনীতি বিদায় হওয়া উচিত। দেশে একটি সহনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হোক। নির্বাচন হবে, নির্বাচন হওয়ার পরে যারা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে যারা সরকার গঠন করবে, যারা বিরোধী দলে থাকবে গঠনমূলক সমালোচনা হবে। এভাবে আবার বিরোধী দল সরকারে গেলেও একই ধারা থাকবে। এটাই হওয়া উচিত।
১৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে প্রায় ১৫শ মানুষ নিহত হওয়ার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও সেই সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, “যে সংখ্যাতত্ত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেটি আসলে কত? এটি নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন আছে। কেউ বলেন এত শত, কেউ বলেন হাজার বা আরও বেশি। একটা ‘ভেইগ টার্মে’ সব কিছু বলা হচ্ছে।”
সরকারি হিসাবে, প্রায় দেড় হাজার বলার কথা উপস্থাপক জানালে হাছান মাহমুদ বলেন, “এটা এই সরকার বলছে। নামটা একটু প্রকাশ করুক। কারা কোথায়, কোন জায়গায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, সেটা তো কোনোদিন প্রকাশ করা হয় নাই।
৪৩ জন পুলিশের পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় যেটা প্রকাশ করা হয়েছে, সেটা তারও বেশি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ায় বলা হয়েছে ৩ হাজার ২২৪ জন পুলিশ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, সেটা আপনি যদি চান পাঠিয়ে দেব। আসলে কতজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, সেটি এখনও তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়।
জুলাই-অগাস্টের প্রাণহানি নিয়ে আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “শুধু জুলাই-অগাস্টের হত্যাকাণ্ড, জুলাই-অগাস্টের হত্যাকাণ্ড- হত্যাকাণ্ড তো এখনও হচ্ছে। এগুলো নিয়ে তো আমি কথা বলতে শুনি না। এগুলোকে হত্যাকাণ্ড মনে করা হচ্ছে না?”
তখন উপস্থাপক জানতে চান, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ-পুলিশকে উসকে দিয়েছেন, অসংখ্য ভিডিওতে পুলিশকে নির্বিচারে গুলি করতে দেখা গেছে। এই দায়গুলো আপনারা কোন যুক্তিতে অস্বীকার করেন বা করবেন?”
উত্তরে তিনি বলেন, “প্রথমত পুলিশকে যখন আক্রমণ করা হয়, পুলিশের কি আত্মরক্ষার অধিকার নাই? পুলিশের ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে, আপনি নিজেও দেখেছেন। পুলিশের গাড়ি ঘেরাও করে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং পুলিশের উপর গুলি ছোঁড়া হয়েছে এবং তখন তো পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি যে ছোঁড়েনি তা নয়, অবশ্যই ছুঁড়েছে।
“সেজন্য এই পুলিশের দায় আমরা কখনও অস্বীকার করি না। বা সরকার পক্ষের দায় আমরা অস্বীকার করি না। এখনও অস্বীকার করছি না। অবশ্যই, দায়িত্বে থাকলে দায় নিতে হবে।”
৫ অগাস্টের আগে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন হাছান মাহমুদ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে এত দূর যেতে দেওয়া ভুল ছিল বলে ব্যক্তিগত মত দিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “সেখানে শুরু থেকে ব্যাপক সমর্থন ছিল।
“এ বিষয়কে আমরা পুরোপুরি আদালতের হাতে ছেড়ে না দিয়ে যদি অন্যভাবে এটাকে সমাধা করা হত, তাহলে ভালো হত বলে আমি মনে করি। এটাকে এতদূর যেতে দেওয়াটাই ভুল ছিল।”
সরকার পতনে ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের’ কথা এখন বলা হলেও আওয়ামী লীগ সরকার বুঝতে পারেনি কেন, এমন প্রশ্নে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল।
দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল, আমরা যে বুঝতে পারিনি তা নয়। ষড়যন্ত্র সবসময় ছিল এবং সেটা সবসময় বুঝতে পেরেছি। আমরা ওয়াকিবহাল ছিলাম এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই ৫ অগাস্টের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।