বাউফলে সংসদ নির্বাচনের সমীকরণে এগিয়ে ড. মাসুদ

এনামুল হক এনা।। গত বছরের ৫ আগষ্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের মানুষ নতুন স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সারাদেশের ছাত্র-জনতার মতো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন দিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বীর সন্তানরাও। তবে নতুন স্বাধীন দেশের এই পটপরিবর্তনে আনন্দের আমেজ বইছে বাউফলেও। একইসাথে বিভিন্ন স্পটে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে- কে হচ্ছেন আগামীর বাউফলের প্রকৃত অভিভাবক? এতে এমপি হিসেবে নাম আসে অনেকের-ই।
সরেজমিনে দেখা যায়, চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাস স্টেশন। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়। পৌরসভা থেকে গ্রাম। অফিস থেকে বাসা। সর্বত্রই চলছে নিয়মিত রাজনৈতিক চর্চা। ঘুরেফিরে যেন একই প্রসঙ্গ। কেউ কেউ আবার তার পছন্দের ব্যক্তিকে রাখছেন আগামীর এমপির দৌড়ে এগিয়ে। তারা আবার মার্কিংও দিচ্ছেন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের। জোরেসোরে বিএনপির কয়েকজন এমপি প্রার্থীর নামও শোনা যাচ্ছে। আর জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী একজনই চূড়ান্ত।
জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনীর হোসেন, সাবেক সাংসদ শহিদুল আলম তালুকদার, ইঞ্জিনিয়ার ফারুক আহমেদ, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ আরো কয়েকজন বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহী। অপরদিকে বাউফল উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান, জামায়াত ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় স্থায়ী কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ তার দল থেকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত এমপি প্রার্থী।
এমন বাস্তবতায়, উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষজন এমপি পদে বিএনপির প্রার্থীদের চেয়ে বিশেষ কিছু কারণ উল্লেখ করে ড.শফিকুল ইসলাম মাসুদকে এগিয়ে রেখেছেন। তারা বলছেন, বাউফল উন্নয়ন ফোরামের মাধ্যমে গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলেও উপজেলার অসহায় মানুষজন নানানভাবে উপকৃত হয়েছেন। অসহায় মানুষদের শেষ আশ্রয়স্থল কিংবা নিঃস্বলোকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন ড. মাসুদের বাউফল উন্নয়ন ফোরাম।
গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে গত ১৫ বছর বাউফল উপজেলাবাসীকে একনিষ্ঠ সেবা করে গেছেন ড. মাসুদ। তার বাউফল উন্নয়ন ফোরামের মাধ্যমে, উপজেলার শত শত অসুস্থ মানুষ চিকিতসা সেবাসহ আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। আর প্রতিবন্ধীরাও পেয়েছেন তাদের অমূল্য বাহন হুইল চেয়ার। এমনকি দুর্ঘটনায় হাত কিংবা পা হারানো ব্যক্তিকে কৃত্রিম হাত-পায়েরও ব্যবস্থা করেছেন ড. মাসুদ। এছাড়া যাদের ঘরে আগুন লেগে অসহায় হয়ে পরেছেন তাদের অনেককে ঘর তুলে দিচ্ছেন এই জাতীয় নেতা।
শুধু তাই নয়, অসংখ্য দুর্ঘটনায় আহত কিংবা নিহতদের পরিবারের দায়িত্বও নিয়েছেন তিনি। করেছেন অভাবী পুরুষদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। অটোরিকশা কিনে দিয়েছেন উপজেলার অনেককে, যা চলমান। কাউকে দিয়েছেন ব্যবসায়ের মূলধন। অসংখ্য কন্যা দায়গ্রস্ত বাবাকে করেছেন দায়মুক্ত। এমনকি বাউফল উপজেলার কোনো অসুস্থ ব্যক্তি ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হলে শত ব্যস্তার মাঝেও ছুটে যান মেডিকেলে। করেন হাতখুলে সহায়তা এবং হৃদয় থেকে দোয়া।
সবশেষ গত ৫ আগষ্ট বাউফলের প্রায় এক ডজন শহিদ পরিবারের মধ্যে প্রত্যেককে ২ লাখ করে টাকা প্রদান করেছেন ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। নিয়েছেন শহিদ পরিবারের দায়িত্বও। এমনকি ছাত্রলীগ নেতা সাংবাদিক মেহেদীর নিহতের ঘটনায় তার পরিবারের দায়িত্বও নিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক আদর্শ ভিন্ন হওয়ার পরেও তার এমন মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনে বাউফলবাসীর হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন ড. মাসুদ।
ড. মাসুদের বাউফল উন্নয়ন ফোরাম শুধু পুরুষ নয়, নারীদেরকেও করেছেন আত্মনির্ভরশীল। হাস-মুরগী-গরু-ছাগল প্রদানের পাশাপাশি সেলাই মেশিনে কাজ শিখিয়ে বিনামূল্যে বিতরণও করে যাচ্ছেন তিনি। এতে উপজেলার কয়েক হাজার অসহায় নারী নিজের পায়ে দাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। পিছু হটিয়েছেন দারিদ্রতা। অন্যদিকে তার সহধর্মীনী প্রখ্যাত ডাক্তার প্রফেসর জাকিয়া ফারহানাও কিছুদিন পরপর ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করেছেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে।
এছাড়া অসংখ্য মসজিদের কার্পেট থেকে শুরু করে মসজিদ নির্মাণে আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছেন ড.মাসুদ। এমনকি আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন মাদরাসায়ও। তার মহান সব কর্মের কারণেই তিনি উপজেলার অন্যসব প্রার্থীদের থেকে এগিয়ে রয়েছেন, যার ধারে কাছেও নেই বিএনপির কিংবা অন্য কোনো দলের এমপি প্রার্থীরা। অতীতে খুব কম নেতা-ই ড. মাসুদের বাহিরে উপজেলাবাসীর বিপদে আপদে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, যে বিষয়ে বাউফলবাসীও অবগত- এমনটাই মনে করেন ভোটারদের বৃহত একটি অংশ।
বাউফলের বিভিন্ন ইউনিয়নের রুট লেভেলে কথা বলে জানা গেছে- বিএনপির এমপি প্রার্থীরাও উপজেলার অনেক জায়গায় অসহায় মানুষদের সহায়তা করছেন। বিএনপির নেতারাও জনসেবামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন বিভিন্ন ইউনিয়নে। তবে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের জনসেবার তুলনায় তা খুবই কম বলেই মনে করছেন তারা। তারা বলছেন- ড.মাসুদ উপজেলার যে কারো বিপদে-আপদে নিজেকে উজার করে যেভাবে ঝাপিয়ে পড়েন তা অন্য কোনো এমপি প্রার্থী করেন না। মূলত: অন্যসব দলের এমপি প্রার্থীদের সাথে তার এখানেই এগিয়ে থাকা দৃশ্যমান।
আবার কেউ কেউ বলছেন- বাউফলে জামায়াত নেতা হিসেবে মাসুদ ভোট আশানুরুপ পায় কিনা সন্দেহ থাকলেও বাউফলের মা-মাটি ও গণমানুষের সন্তান হিসেবে ড.মাসুদ খুব সহজে এমপি হয়ে যাবেন। আর তিনি এমপি হলে নিশ্চিত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হবেন বলেই বিশ্বাস বাউফলের রুট লেভেলের মানুষদের। তারা মূলত: ড. মাসুদকে জামায়াতের মাসুদ বলতে নারাজ। তারা অনেকেই বাউফলের সন্তান হিসেবে আগামীর ভোট যুদ্ধে ভোট দিতে মরিয়ে হয়ে অপেক্ষা করছেন ড. মাসুদকে। যদিও বিভিন্ন সভা-সেমিনারে নিজেকে বাউফলের জামায়াত নেতা বলতে আপত্তি করেন ড. মাসুদ। তিনি বলেন- আমি বাউফলে কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না। বাউফলবাসীর কাছে আমি তাদের সন্তান। আর বাউফলবাসী আমার ঘর, সংসার ও পরিবার।
এমন প্রেক্ষাপটে নানান সমীকরণ মিলিয়ে বাউফল উপজেলার বিভিন্ন স্তরের মানুষরা বলছেন – বাউফলবাসীর আগামীর কাঙ্খিত ও প্রত্যাশিত এমপি হবেন ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। এই প্রত্যাশার পক্ষে মত দিয়ে তারা বলছেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ড. মাসুদের বাউফলে অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়েছে, যার প্রমাণ মিলেছে ৫ আগষ্টের পরে পাবলিক মাঠের ঐতিহাসিক জনসভাটি ‘জনসমুদ্রে’ পরিণত হওয়ার মাধ্যমে। বলা হয়ে থাকে, ইউনিয়নের রুট লেভেলের চায়ের দোকানগুলোতে সারাদিনের কাজ কর্মের শেষে সন্ধায় যে রাজনৈতিক চর্চা হয়- ভোটের মাঠে-এর গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। এখন দেখার পালা আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে কে হাসেন বিজয়ের হাসি-এমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।