ঢাকা | নভেম্বর ২১, ২০২৪ - ৯:০০ অপরাহ্ন

পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে টেন্ডার ছাড়াই কোটি টাকা হাওয়া, বরখাস্ত ৭

  • আপডেট: Tuesday, February 13, 2024 - 5:33 pm
এম আর আমিন,চট্টগ্রাম।। 
রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার দপ্তরে (এফএঅ্যান্ডসিএও)কোনরকমের টেন্ডার ছাড়াই ভূয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে কসমোপলিটন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ১ কোটি টাকার চেক নিয়ে যাওয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে তদন্ত কমিটি গঠন করে ওই শাখার ৭ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।চট্টগ্রামের বিভাগীয় হিসাব কর্মকর্তা (ডিএফএ) জয়শ্রী মজুমদারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন হিসাব শাখার এও এডমিন সোহাগ মির, একাউন্টেন্ট আরসি মো. আব্দুল আল আসিফ, ডিএফএ সদর সুবির চাকমা। তদন্ত কমিটির সদস্য অ্যাকাউন্ট্যান্ট আরসি মো. আব্দুল আল আসিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।বিশেষ সৃত্রে জানা যায়, ভুয়া বিল-ভাউচার দাখিল করে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় হিসাব ও স্টোরস শাখার একটি চক্র কাজ করেছে। অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার অফিসের অস্থায়ী কর্মচারী হাবিব নামের এক ব্যক্তি এতে জড়িত। অস্থায়ী কর্মচারী হলেও অফিসের কম্পিউটারের গোপন পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে তাকে।কসমোপলিটন কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী নাবিল আহসান চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে কাজের টাকা বাবদ রেলওয়ে থেকে চারটি চেক দেওয়া হয়েছে। আমি সেই চেকগুলো নগদায়ন করেছি। এরপর হঠাৎ রেল কর্তৃপক্ষ আমার কাছ থেকে ৯৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা মূল্যের একটি চেক ফেরত চেয়ে চিঠি দেয়। সেখানে উল্লেখ আছে, সোহাগ আলী নামের এক ব্যক্তি চেকটি ৩১ ডিসেম্বর নগদায়ন করেছেন। কিন্তু আমার এখানে সোহাগ আলী নামে কোনো ব্যক্তি নেই।সাময়িক বরখাস্তকৃতরা হলেন, হিসাব কর্মকর্তা মামুন হোসেন, মোঃ আবু নাছের, হিসাব রক্ষক/সিপিবি শিমুল বেগম, হিসাব রক্ষক প্রশাসন ও সংস্থাপন সৈয়দ সাইফুর রহমান, অডিটর পবন কুমার পালিত, জুনিয়র অডিটর ইকবাল মো. রেজাউল করিম ও অফিস সহায়ক মাকসুদুর রহমান।গত রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা/সার্বিক মোঃ সাইদুর রহমান সরকার স্বাক্ষরিত বরখাস্তের চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাজেট ও খরচের হিসাব রিকনসিলেয়েশনকালে দেখা যায় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর মেসার্স দি কসমোপলিটন কর্পোরেশন ঢাকার নামে তাদের ৬ টি বিলের অতিরিক্ত ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি সন্দেহজনক বিল পরিশোধ করা হয়েছে। যা গুরুতর আর্থিক অনিয়মের পর্যায়ভূক্ত। উক্ত বিল পাশ ও চেকের মাধ্যমে পরিশোধের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকায় বিষয়টির সুষ্ঠু  তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।জানা যায়, রেলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে পণ্য কেনার দরপত্র আহ্বান হয়নি। বিল পরিশোধ করতে পাঠানো হয়নি কোনো চিঠি। অথচ ভুয়া বিল দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে গেছে ঠিকাদার। বিল যাচাই-বাছাই, চেক হস্তান্তর, ব্যাংকে জমাদান এবং উত্তোলনের পর বিষয়টি জানতে পেরেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তারা।
রেলের ইতিহাসে নজিরবিহীন এই ঘটনার জন্ম দিয়েছে নাবিল আহসান চৌধুরীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (সাপ্লাইয়ার) কসমো পলিটন। বিষয়টি নিয়ে রেল অঙ্গনে চলছে নানা সমালোচনা ও চুল ছেড়া বিশ্লেষণ।এ বিষয়ে জানতে, রেলওয়ে পূবাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা মো. রফিকুল বারী খান এবং অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও  প্রধান হিসাব অধিকতা মো. সাইদুর রহমান সরকারের সাথে কথা বলতে অফিসে গেলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।তবে তদন্ত কমিটির সদস্য ও অ্যাকাউন্ট্যান্ট আরসি মো. আব্দুল আল আসিফ বলেন, এটা নিয়ে তদন্ত চলছে, তদন্তে যে বা যারাই দোষী প্রমাণিত হবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।উল্লেখ্য,পণ্য সরবরাহের বিপরীতে কসমো পলিটন প্রতিষ্ঠানের মালিক নাবিলের পক্ষে চারটি বিল দাখিল করা হয়। বিলগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে অর্থছাড়ও হয়েছে; কিন্তু ওই চারটি বিলের মধ্যে ৯৭ লাখ টাকার একটি বিল ছিল; কিছু দলিলাদি পরিবর্তন করে সেই বিলটি পুনরায় দাখিল করে। যাচাই-বাছাই শেষে বিলটি পাস হয় এবং সীমান্ত ব্যাংকের নগরীর আগ্রাবাদ শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়।বাংলাদেশ রেলওয়েতে সব কেনাকাটা প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের (সিসিএস) দপ্তরের মাধ্যমে করতে হয়। সব বিভাগ তাদের চাহিদা পাঠানোর পর পণ্য ক্রয় করে স্টোরে জমা রাখা হয়। সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে আহ্বানকৃত টেন্ডারের বিপরীতে বিল পাঠানো হয় বিভাগীয় হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরে। সেখান থেকে প্রধান অর্থ ও হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরে পাঠানো হয়। সেখানে সব ধরনের যাচাই-বাছাই শেষে এফএঅ্যান্ডসিএও অনুমোদনের পর চেক ইস্যু করা হয়।সূত্র জানায়, কসমোপলিটনের নামে ব্যাংক হিসাব থাকলেও ৯৭ লাখ টাকা নিতে নতুন একটি হিসাব খোলা হয়েছে সীমান্ত ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায়। সেই শাখা থেকেই টাকা উত্তোলন হয়েছে। ব্যাংক কীভাবে হিসাব খুলেছেন সে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ব্যাংকের কেউ জড়িত কিনা সেটিও খতিয়ে দেখছে সংশ্লিষ্টরা।