পুলিশ সুপারের মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, আল্লাহর দয়ায় নতুন জীবন পেল সামিয়া

সিনিয়র রিপোর্টার।। নিস্পাপ একটি মেয়ে সামিয়া আক্তার। যার বয়স ১২ বছর। এই বয়সে যে মেয়েটি থাকার কথা স্কুল বা মাদ্রাসায়। খেলাধুলা করার কথা প্রিয় সহপাঠীদের সাথে। অথচ জন্ম থেকেই তার রয়েছে হার্টের ছিদ্রও বাল্বের সমস্যাসহ কয়েকটি জটিল রোগ। ফলে দীর্ঘদিন ধরে সামিয়া ভুগছে। আর পরিবারসহ নিজে চালিয়ে যাচ্ছে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত বেঁচে থাকার লড়াই। তাদের এই লড়াইয়ে আল্লাহর দয়ায় হাত বাড়িয়ে দেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার ও বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক মো. আনিসুজ্জামান (পিপিএম)। তিনি সামিয়ার চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করেছেন। ফলে সামিয়ার পরিবার তাকে সঠিক সময় মেয়ের চিকিৎসা দিতে পেরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানান। একইসঙ্গে ওই পুলিশ কর্মকর্তাসহ সবার জন্য দোয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সবার দোয়ায় সামিয়া এখন সুস্থ আছেন।
সামিয়া গাজীপুরে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন। তার বাবা একজন পোশাক শ্রমিক এবং মা গৃহিণী। তারা চার ভাই-বোন।
এদিকে জন্ম থেকেই সামিয়ার হার্টের ছিদ্রও বাল্বের সমস্যার কথা জানতেন না পরিবারটি। মেয়ে প্রায় প্রায় অসুস্থ হওয়ায় সবসময়ই প্রেশানিতে থাকতেন তারা। কিন্তু কি করবে তা বুঝে উঠতে পারেনি পরিবারটি। পরে ২০১৯ সালে সামিয়াকে তার বাবা ডাক্তার দেখান। তখন ডাক্তার জনান, তার মেয়ের জন্ম থেকেই হার্টের ছিদ্র রয়েছে। তাই অপারেশন করতে হবে। কিন্তু টাকার অভাবে এতোদিন চিকিৎসা করাতে পারিনি পরিবার। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক) শেয়ার করা হয়। এরপর দৈনিক ইনকিলাব, বাংলাদেশ টাইমস, দৈনিক জাগো জনতাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার অসুস্থতার সংবাদ প্রকাশ কর হয়।
সংবাদ প্রকাশের পর এগিয়ে আসেন সাংবাদিক অধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটি। সংগঠনের সভাপতি মানবিক মানুষ দৈনিক বাংলার বিপ্লব পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ সুমন চৌধুরীর চেষ্টায় সামিয়ার পাশে দাঁড়ান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার ও বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক মো. আনিসুজ্জামান (পিপিএম)। তিনি সামিয়ার চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করেন।আর এই মহান কাজে পুলিশ সুপার এর প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেন ঢাকা জেলার উত্তরের টিআই এডমিন পুলিশ ইন্সপেক্টর মোঃ গোলাম সারোয়ার। তিনি সামিয়াকে হাসপাতালে ভর্তিসহ সার্বিকভাবে সহযোগিতা ও দেখাশোনা করেন।
সামিয়ার আত্নীয় সাংবাদিক ইউসুফ জানান, ২০১৯ সালে সামিয়ার প্রথম হার্ট ছিদ্র ধরা পরে। তখনকার ডাক্তারের ভাষ্য মতে, সামিয়ার জন্ম থেকেই হার্টের ছিদ্র ছিলো। তাই তার অপারেশন করতে হবে। কিন্তু তার বাবা একজন পোশাক শ্রমিক। আবার পরিবারে আর চার ভাই-বোন রয়েছে। সবমিলিয়ে অর্থের অভাবে এতোদিনে মেয়েকে চিকিৎসা করাতে পারেনি তার বাবা। আমি যখন বিষয়টি জানতে পারলাম, তখন ভাবলাম চোখের সামনে একটি নিস্পাপ শিশু বিনাচিকিৎসায় মারা যাবে? তা হতে দেয়া যাবে না। পরে আমি নিজের ফেসবুক আইডিতে সামিয়াকে নিয়ে সাহায্য চেয়ে পোস্ট করি। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করপ। এর মধ্যো দৈনিক ইনকিলাব এর সাভার উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ রাউফুর রহমান পরাগ ও বাংলাদেশ টাইমস এর সাভার উপজেলা প্রতিনিধি মনির হোসাইন এর একটি প্রতিবেদন আমি বিভিন্ন জায়গায় পোস্ট করি। সেখান থেকে সাংবাদিক অধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির সভাপতি সুমন আহমেদ ভাইয়ের নজরে বিষয়টি আসে। পরে তিনি আমাকে কল করে সামিয়া ও তার পরিবারের সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন। তিনি ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার ও বাংলাদেশ পুলিশ অ্যসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান (পিপিএম) এর সাথে যোগাযোগ করেন এবং সামিয়া সম্পর্কে সবকিছু জানান। পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান ভাই সবকিছু শুনে সামিয়ার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। আল্লাহ চেয়েছিলেন বলেই হয়তো এমনটা হয়েছে। তা না হলে ওর পরিবারের পক্ষে কখনোই এতো টাকা খরচ করে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতো।
তিনি আরো জানান, আল্লাহ পাকের দয়ায় সামিয়া সুস্থ হয়ে আবার নতুন জীবনে ফিরে আসুক। আমরা এটাই চাই। অনেকেই শিশুটির জন্য বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছে। বিশেষ করে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই পুলিশ ইন্সপেক্টর টি আই এডমিন মো. গোলাম সরোয়ার ভাইকে। একইসঙ্গে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই যারা সামিয়াকে স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়েছেন এবং তার রোগমুক্তির জন্য দেয়া করেছেন।
সামিয়ার পিতা শামীম জানান, আমার মেয়েটি জন্ম থেকেই হৃদরোগ আক্রান্ত ছিলো। কিন্তু আমরা বুঝতে পারি নাই। ২০১৯ সালে আমরা জানতে পারি আমার মেয়েটির হার্টে ছিদ্র আছে। ডাক্তার অপারেশন করতে বলেন কিন্তু টাকার অভাবে অপারেশন করতে পারি নাই। দিন দিন আমার মেয়েটি যন্ত্রণায় কষ্ট করে যাচ্ছে আর আমি বাবা হয়ে মেয়ের কষ্ট দেখে যাচ্ছি। পরে ২০২৫ সালে আমার মেয়ে যখন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন আবার তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার অপারেশন করতে বলে। অপারেশন না করলে আমার মেয়েকে বাঁচানো সম্ভব না। কিন্তু টাকার অভাবে এবারও যখন অপারেশন করে ব্যর্থ হই তখন আমার মামা সাংবাদিক ইউসুফ আলী নিজ উদ্যোগে আমার মেয়েকে নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ করতে থাকেন। পরে গাজীপুর থেকে সাংবাদিক সুমন আহমেদ এর চেষ্টায় ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মহোদয় আমার মেয়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। এখন আমার মেয়ে আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ। আমি পুলিশ সুপার মহোদয়সহ যারা আমার মেয়ের সুস্থতার জন্য এগিয়ে এসেছে তাদের সকলের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
ঢাকা জেলার উত্তরের টিআই এডমিন গোলাম সারোয়ার বলেন, পুলিশ সুপার মহোদয় সামিয়ার চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তার দিকনির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতায় শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার ওপেন হার্ট সার্জারী করা হয়। সার্জারি শেষে তাকে বাসায় পাঠানো হয়। স্যার এসব বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়াসহ চিকিৎসার সমস্ত খরচ ব্যয় করেছেন। আল্লাহর রহমতে বর্তমানে সামিয়া সুস্থ আছেন। গত ১৫ জুলাই তাকে বাসায় নেওয়া হয়েছে। আমি সামিয়া ও পুলিশ সুপারের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
তিনি আরো জানান, সামিয়া সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরায় স্যার আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন। একইসঙ্গে তিনি অত্যান্ত খুশিও হয়েছেন। এছাড়া স্যার ও স্যারের সহধর্মিণী রিফাত জাহান চিকিৎসার পরবর্তী খরচসহ সমািয়ার লেখাপড়ার সমস্ত খরচ বহন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।