ঢাকা | ডিসেম্বর ৫, ২০২৪ - ৭:৩৭ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

পুলিশের সম্পুর্ণ পরিবর্তন চায় সাধারন মানুষ

  • আপডেট: Wednesday, December 4, 2024 - 3:00 pm

জাগোজনতা প্রতিবেদক : পুলিশের সম্পুর্ণ পরিবর্তনের পক্ষে দেশের সাধারণ জনগণ। পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার বন্ধ করা, মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগকারী পুলিশের শাস্তি ও ৫৪ ধারা সহজে অপব্যবহারযোগ্য হচ্ছে বলে মনে করেন দেশের নাগরিকরা। পুলিশ সংস্কার কমিশন পরিচালিত ‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক জনমত জরিপে উঠে এসেছে দেশের মানুষের পুলিশ নিয়ে প্রত্যাশার বিষয়টি। গতকাল জরিপের ফলাফল প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য-সচিব আবু মমতাজ     সাদ উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে প্রতিহত করতে কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্যের সহিংস ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ‘পুলিশ সংস্কার’ এখন সময়ের দাবি। সে লক্ষ্যে সরকার পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের লক্ষ্যে ‘পুলিশ সংস্কার কমিশন’ গঠন করেছে যার কার্যক্রম চলমান। পুলিশ সংস্কার কমিশন সর্বসাধারণের মতামত জানতে ‘কেমন পুলিশ চাই’ শিরোনামে জনমত জরিপ পরিচালনা করে।

জরিপ মতে, পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসান চায় ৮৯.৫ শতাংশ এবং ভুয়া ও গায়েবি মামলার অবসান চায় ৯৫ শতাংশ মানুষ। উত্তরদাতাদের মধ্যে সর্বাধিক মতামত এসেছে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ চাওয়ার ক্ষেত্রে। এ ছাড়া দ্বিতীয় অবস্থানে নিরপেক্ষ পুলিশ এবং তৃতীয় অবস্থানে দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ চাওয়ার পক্ষে মতামত এসেছে। জরিপে উঠে এসেছে পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসান চায় ৮৯.৫ শতাংশ উত্তরদাতা।

এ ছাড়া ৭৭.৯ শতাংশ উত্তরদাতা চায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ হোক। এ ছাড়া গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডে জড়িত মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বিবেচনায় অপরাধী পুলিশকে শাস্তির আওতায় আনার পক্ষে ৭৪.৯ শতাংশ উত্তরদাতা। ৯৫ শতাংশ উত্তরদাতা ভুয়া এবং গায়েবি মামলার অবসান চায়। বিক্ষোভ মিছিল মোকাবিলা ও বিরোধী দলমত দমনে মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন ফৌজদারি অপরাধ বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা শাস্তি চেয়েছে। অন্যদিকে ৬৮ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিস্থাপিত প্রমিত পদ্ধতি (এসওপি) অনুসরণকে প্রবিধানভুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ৫৪ ধারায় পুলিশকে প্রদত্ত বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতাকে একটি সহজে অপব্যবহারযোগ্য বিধান মনে করেন ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। তবে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা তা মনে করেন না বলে মত দিয়েছেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় পুলিশ হেফাজতে বা রিমান্ডে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের ধারাটি সংশোধন-সংস্কার চান ৯১ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা। এর মধ্যে ৮০ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা নারী আসামিকে যথেষ্ট শালীনতার সঙ্গে নারী পুলিশের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের পক্ষে মত দিয়েছেন। আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতি থানায় স্বচ্ছ কাচের ঘেরাটোপ ব্যবস্থা সংবলিত আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ থাকার পক্ষে দ্বিতীয় সর্বাধিক ৮০ দশমিক ২ শতাংশ মতামত এসেছে।
বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি : তল্লাশির সময় পরিচয় দিতে অস্বীকার করলে বা বিনা সার্চ ওয়ারেন্ট তল্লাশি করতে চাইলে তার প্রতিকারে একটি কার্যকর কল সার্ভিস চালুর পক্ষে সর্বাধিক ৮৭ শতাংশ উত্তরদাতা মত দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আরও দুটি বিষয়ে তারা ব্যবস্থা চান। এর মধ্যে রয়েছে অভিযানের সময় জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ পোশাক পরিধানের বিষয়টি। এ ছাড়া ৭৭ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা এবং রাতের বেলায় গৃহ তল্লাশির ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি বা গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি অপরিহার্য মনে করেন ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা। অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন ৪৪.৯ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া এ সেবা সম্পর্কে অবগত নয় ২২ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা। জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সেবায় সন্তুষ্ট নয় ৩২.৪ শতাংশ। তবে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন ৫৬.৬ শতাংশ মানুষ। জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারের সেবায় ৪২ শতাংশ এবং বিট পুলিশিং কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নয় ৪৫ শতাংশের বেশি মানুষ। থানায় অনলাইনে জিডি সেবা সন্তোষজনক
নয় বলে জানিয়েছেন ৪৪.৯ শতাংশ উত্তরদাতা। এদিকে নারী, শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ডেস্ক সংক্রান্ত কার্যক্রমটির বিষয়ে অসন্তষ্টি বেশি। সাইবার বুলিং ও সাইবার ক্রাইম সংক্রান্তে ভুক্তভোগী নারীদের প্রতিকারের জন্য যে অনলাইন ব্যবস্থা রয়েছে সেটি সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন অনেকে। এর মধ্যে ৭২.১ শতাংশ উত্তরদাতা সন্তোষজনক বা অবগত নয় বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া ই-ট্রাফিকিং প্রসিকিউশন সেবা কার্যক্রমটিও সন্তোষজনক নয় বলে মত অধিকাংশের। পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা একটি স্বাধীন সংগঠনের মাধ্যমে তদন্তের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। বর্তমানে পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কোনো সংগঠন নেই। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯-এর ১৮ নম্বর ধারায় পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তদন্তে কমিশনকে নিবৃত্ত রাখা হয়েছে। জরিপে বাকি ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা সমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছেন। এক অংশ মনে করেন হাই কোর্ট বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে স্থায়ী তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করতে পারে। অপর অংশ মানবাধিকার কমিশনকেই আইন সংশোধনের মাধ্যমে ক্ষমতা অর্পণের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছে। পুলিশকে জবাবদিহি ও বিভিন্ন প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে একটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বা কমিশনের পক্ষে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা মত দিয়েছেন। অন্যদিকে সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় পুলিশের জন্য স্বাধীন ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার পক্ষে ৪১ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা মত দেন। এ বিষয়ে পুলিশ কমিশন বা পুলিশ ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা কোনটি যুগোপযোগী ও জনস্বার্থে বেশি ফলপ্রসূ ও কাম্য তা বিবেচনার আগে পুলিশ কমিশন গঠন, ক্ষমতা ও এক্তিয়ার কী হবে এবং কীভাবে বাস্তবায়নযোগ্য তা বিবেচনা ও ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে অনুরূপ কমিশন গঠনের অভিজ্ঞতার আলোকে যাচাইবাচাই করে এ কমিশন হতে একটি মতামত প্রণয়ন করা যেতে পারে বলে সুপারিশ এসেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ জরিপে অংশ নিয়েছেন ২৪ হাজার ৪৪২ জন উত্তরদাতা। এর মধ্যে ১৮ থেকে ৪৪ বছরের ব্যক্তিদের অংশগ্রহণের হার ৮৬.৬ শতাংশ। তবে উত্তরদাতাদের প্রায় ৯৫ শতাংশ পুরুষ। উত্তরদাতাদের মধ্যে চাকরিজীবী ৩৬.৪ শতাংশ, ছাত্র ২৭.২ শতাংশ ও ব্যবসায়ী ৭.৬ শতাংশ। উত্তরদাতাদের সর্বাধিক ঢাকা জেলার বাসিন্দা, পরবর্তী অবস্থানে রয়েছেন যথাক্রমে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জেলার মানুষ।