ঢাকা | নভেম্বর ২১, ২০২৪ - ১২:২০ অপরাহ্ন

শিরোনাম

পাহাড়ে সেনাবাহিনীর কেন প্রয়োজন???

  • আপডেট: Thursday, June 22, 2023 - 1:17 pm

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান: বাংলাদেশের একদশমাংশ ভূ-খন্ড পার্বত্য চট্টগ্রাম। ১২টি ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন কৃষ্টিকালচার, ভাষা ও বৈচিত্রময় জীবনযাপনের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশ্বের দরবারে বিশেষভাবে সমাদৃত। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ অঞ্চল হিসেবে বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের জন্য বিশেষভাবে আলোচিত সমালোচিত। এই অঞ্চলের স্বাভাবিক গতিধারা অব্যহত রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্প্রীতি রক্ষা, ভ্রতৃঘাতী সংঘাত নিরসন, দূর্গম এলাকায় তড়িৎ চিকিৎসা সেবা প্রদান, প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোবাবিলা, সন্ত্রাস, অপহরণ, চাঁদাবাজি নির্মূল, সম্প্রীতি রক্ষা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকরে পর্যটন শিল্প বিকাশ, বেরকারত্ব দুরীকরণ এবং দারিদ্র বিমোচনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যার কারণে পাহাড়ের মানুষ ঘরের দোর খোলা রেখে শান্তির ঘুম উপভোগ করছে, এই ধরণের ঘটনা প্রবাহ শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের দরবারে ঐতিহাসিক।
ভ্রতৃঘাতী সংঘাত নিরসন
শান্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তিচুক্তি)র ২৫ বছরেও পাহাড়ে থামেনি অস্ত্রের ঝনঝনানি। এখনো গোলাগুলির শব্দে গভীর রাতে ঘুম ভাঙে বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষের। কোলের শিশুর আত্মচিৎকারে ভারী হয়ে উঠে পাহাড়ের সবুজ গহীণ অরণ্য। সশস্ত্র সংঘর্ষে লম্বা হচ্ছে লাশের সারি। অব্যাহত রয়েছে পাহাড়ি আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলোর আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা। থেমে নেই পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন (সন্তু গ্রুপ) পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, (এমএন লারমা গ্রুপ) পার্বত্য জনসংহতি সমিতি সংস্কারপন্থি ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নামের সংগঠনগুলোর সশস্ত্র কর্মকাণ্ড। সেইসাথে যুক্ত হয়েছে পাহাড়ের নতুন সংগঠন ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (কেএনএফ) নামে সশস্ত্র গেরিলা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।

এই সশস্ত্রসন্ত্রাসী সংগঠন গুলো বান্দরবান , রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির দূর্গম এলাকাজুড়ে আদিপত্য বিস্তারে মরিয়া। তাদের যাতাকলে দিশেহারা এলাকার সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালী জনগোষ্ঠি।
বিগত ১১ আগস্ট ২০১৬ইং তারিখ তৎকালিন বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক ৩১ মে ২০১৬ইং তারিখের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির আলোকে স্যারের ভাষ্যমতে তিন জেলায় প্রতি বছরে বিভিন্ন স্বসস্ত্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠী কর্তৃক ৪০০কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয় বলে জানা যায়।
আর এই চাঁদার টাকা ভাগাভাগি করতে গিয়ে পাহাড়ের স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠীগুলো সর্বদা ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে।
সেইসাথে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে নীরবে চলছে নারী নির্যাতন। নারীদের অস্ত্রের মুখে আটকে রেখে দিনের পর দিন ধর্ষণ করার ঘটনা।
এই পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠীসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত নিরসনে সেনাবাহিনীর পরতে পরতে অতন্দ্র প্রহরীর ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে।

এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও শান্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তিচুক্তি) করে শান্তির পক্ষে তার যে অবস্থান সেটিই তিনি প্রমাণ করেছেন। এই শান্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তিচুক্তি)র মাধ্যমে পাহাড়ে জাতিগত সংঘাত ও ভ্রাতৃঘাতী রক্তপাতের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটিয়েছেন।
দূর্গম এলাকায় তড়িৎ চিকিৎসা সেবা প্রদান
পার্বত্য জেলা সমূহের দূর্গম এলাকায় যেসকল স্থানে কোন ধরনের যান চলাচল দূরের কথা মানুষ পর্যন্ত হেটে পৌছাতে ২/৩ দিন সময় লেগে যায়। সে সকল এলাকা সমূহে যেকোন প্রাকৃতিক মহামারী মোকাবিলায় সেনাবাহিনী তড়িৎ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

সম্প্রতি রাঙামাটির সাজেক উপজেলার হতে ৮/১০ কিলোমিটার দুর্গম এলাকায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠির মধ্যে ডায়েরীয়ার প্রাদুরভাব দেখা দিলে সেবাবাহিনী স্ব-দলবলে তড়িৎ গতিতে দীর্ঘ ২দিন পায়ে হেটে দূর্গম ঝিরি ঝর্ণা পাড়ি দিয়ে সেই আক্রান্ত পাহাড়ী জনগোষ্ঠির মাঝে চিকিৎসা সোবা প্রদান করে আসছেন।

পাহাড়ে গতানুগতিক ঘটনা সমূহ যেমন গর্ভবতী মায়ের প্রস্বাব সংক্রান্ত , বিভিন্ন বণ্যপ্রণিীর আক্রমনে আক্রান্ত, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত, ভ্রতৃঘাতী সংঘাতে আহত হওয়া কিংবা কোন যানবাহনে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে হেলিকপ্টারযোগে সেনাবাহিনী তড়িৎ গতিতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। যার কারণে শত শত নিরীহ পাহাড়ী জনগোষ্ঠি অপমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায়।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলায়
পাহাড়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগ নিত্য-নৈমিত্তিক লেগেই থাকে। বন্যা, পাহাড় ধস, প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া , প্রতিদিনের ঘটনা ।
২০১৭ সালের ১৩ জুনের রাতে টানা তিনদিনের ভারী বৃষ্টি আর বজ্রপাতে রাঙ্গামাটিতে ঘটে যায় স্মরণ কালের পাহাড় ধসের ঘটনা। ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ জন সেনা সদস্য এবং নারী পুরুষ ও শিশুসহ ১২০ জনের প্রাণহানী ঘটে। এর মধ্যে শহরের মানিকছড়িতে একটি সেনা ক্যাম্পের নিচে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের উপর ধসে পড়া মাটি অপসারণ করতে গিয়ে পুনরায় পাহাড় ধসের মাটি চাপা পড়ে নিহত হন ঐ ক্যাম্পের দুই কর্মকর্তাসহ ৫ সেনা সদস্য। গত এক দশকে পাহাড়ে এত প্রাণহানি আর কখনও ঘটেনি। এর আগে ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে ১২৭ জনের মৃত্যু হয় পাহাড় ধসের কারণে।

২০১৯ সালের পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ভয়াবহ বন্যায় প্রায় ৫৩০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাড়িঘর ছাড়া হয় ২৫০০পরিবার।
এই ধরণের প্রকৃতিক দূর্যোগে সেনাবাহিনী টানা দিনরাত পরিশ্রমের মাধ্যমে পাহাড়ের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠির পাশে সময়োপযোগী শুকনো খাবার চিরা, মুড়ি, চাল, ডাল, এমন কি বিশুদ্ধ পানিসহ বিভিন্ন ধরণের খাবার, বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়ন, এবং মহামারী পরবর্তি সময়ে ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা সহ সকল ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছে নিরন্তর।
সন্ত্রাস, অপহরণ, চাঁদাবাজ নির্মূলে
পার্বত্য অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী রাষ্ট্রবিরোধী সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক গণহত্যা, খুন ও গুমের সামান্য কিছু চিত্র নিয়ে তুলে ধরা হল ১৯৭৯ সালের ১৯ডিসেম্বর লংগদু গণহত্যা- ৩২০জনের অধিক, ১৯৮০ সালের ২৫মার্চ কলমপতি গণহত্যা- ২৫০জনের অধিক, ১৯৮০ সালের ১ সেপ্টেম্বর কাউখালী গণহত্যা- ১২৫জনের অধিক, ১৯৮১ সালের ২৬জুন বানরাইবারী, বেলতলী, বেলছড়ি গণহত্যা- ৫০০জনের অধিক, ১৯৮১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মাটিরাঙ্গা, তাইন্দং, আচালং, গৌরাঙ্গ পাড়া, দেওয়ান বাজার, তবলছড়ি, বর্ণাল, রামছিরা, গোমতি গণহত্যা- ৬৫০জনের অধিক, ১৯৮৩ সালের ২৬জুন, ১১জুলাই, ২৬ ও ২৭ জুলাই, ৯,১০ ও ১১ আগস্ট গোলকপ্রতিমা ছড়া, মাইচ্যেছড়া, তারাবনছড়ি গণহত্যা- ৮০০জনের অধিক, ১৯৮৪ সালের ৩১মে ভূষণছড়া গণহত্যা- ১৪৫০ জনের অধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। এছাড়াও কুমিল্লাটিলা, শুকনাছড়ি, সিংহপাড়া গণহত্যা, ১৯৮৬ সালের ২৯এপ্রিল দিঘিনালা গণহত্যা, ভাইবোনছড়া গণহত্যা, হিরাচর, শ্রাবটতলী, খাগড়াছরি, পাবলাখালী গণহত্যা, নাইক্ষ্যংছড়ি গণহত্যা, মাল্যে গণহত্যা, লোগাং গণহত্যা, নানিয়াচর গণহত্যা, পাতাছড়া গণহত্যা, পাকুয়াখারী ট্রাজেডী, জুরাইছড়ি গণহত্যা সংঘটিত করে বিচ্ছিন্নতাবাদী পাহাড়ী সন্ত্রাসীগোষ্ঠী। সম্প্রতি ২০১৬সালের ১৪জুন বান্দরবান সদর উপজেলার আওয়ামীলীগ নেতা নুমং প্রূ কে অপহরণ করা হয়। এরপর ১৮ মার্চ রাঙ্গামাটিতে ৭খুনের পর পাল্পাপাল্টি অংশ হিসেবে পাহাড়ে তথা বান্দরবানে ধারাবাহিক এইসব হত্যাকান্ড শুরু হয়। এইসব হত্যাকান্ডের পিছনে জেএসস ও মগলিবারেশন পার্টিকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। গত ২২জুলাই ২০১৯ইং রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মংবাথুই মারমাকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা ও ২৩জুলাই লামা সদর উপজেলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আলমগীর সিকদারকে গলাকেটে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। গত ২০ মে বান্দরবানের রাজবিলায় আওয়ামীলীগ নেতা ক্যচিংথোয়াই মারমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর তিনদিন পর ২৩ মে বান্দরবান পৌর আওয়ামীলীগ এর সহসভাপতি চথোয়াই মং মারমাকে খামারবাড়ি থেকে অপহরণ করে বাড়ির অদূরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে ৭মে উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের দুর্গম তাইংখালী এলাকায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিনয় তঞ্চঙ্গ্যাকে হত্যা করে। ১৪এপ্রিল তাইংখালী বাজারের মধ্যে বাড়িতে ঢুকে সন্ত্রাসীরা অংক্যচিং মারমা নামে একজনকে গুলি করে হত্যা করে। গত ৭জুলাই ২০২০ইং রোয়াংছড়ির বাঘমারা এলাকায় রতন তংচঙ্গ্যার বাড়িতে ঢুকে ৬জনকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। ১৩জুন ২০১৬ইং আওয়ামীলীগ নেতা মংপু মারমাকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। ১৫ এপ্রিল ২০১৬ইং থানছি-আলীকদম সড়কে গরু কিনতে যাওয়া সাহাবুদ্দিন, আবু বক্কর ও আবছার আলীকে মোটর সাইকেল থেকে নামিয়ে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। ৩১ডিসেম্বর ২০১৫ইং সালে একই সড়কে চিংলং সহ দুইজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ এবং ১জানুয়ারি ২০১৬ইং কাঠ শ্রমিক বোরহান উদ্দিনকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। ২৬জুন ২০১৯ইং রোয়াংছড়িতে অংসিংচিং মারমা নামে এক ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। ১৫জুন ২০ইং কুহালং ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার চাইসাহ্লা মারমাকে তার নিজ বাড়িতে হত্যা করা হয়। ১০জুলাই ২০ইং তারিখ রোয়াংছড়ির শামুকঝিড়ি এলাকায় জুম চাষ করে বাড়ি ফেরার পথে শান্তিলতা তংচংঙ্গ্যা নামে এক নারীকে হত্যা করা হয়। অতি সম্প্রতি ১৮জুন ২০ইং রোয়াংছড়ি উপজেলার তুলাছড়ি পাড়ার নওমুসলিম ঈমাম মোঃ ওমর ফারুক ত্রিপুরা এশার নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এছাড়াও খাগড়াছড়ির দিঘিনালা উপজেলার ইউপিডিএফ নেতা অমর জীবন চাকমাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

সেইসাথে নিয়মিত হত্যা করা হচ্ছে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী সেনাবাহিনীকে গত ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২ বুধবার রাতে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে অস্ত্রধারীদের বন্দুকযুদ্ধে উভয় পক্ষের চারজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান। বাকি তিনজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী।
গত ১৭ মার্চ ২০২৩ বৃহস্পতিবার বিকেলে হঠাৎ সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। সেনাবাহিনীর ২৬ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নের অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মো. আনোয়ার হোসেন (৫৪) সহ ট্রাকচালক মো. মামুন (২৯) ও শ্রমিক আব্দুর রহমান (২৭) কে।

১৩ মার্চ ২৩, বান্দরবানে কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) অতর্কিত গুলিবর্ষণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেছেন এবং দুই জন সেনা সদস্য আহত হয়।

১৭ মে ২০২৩ মঙ্গলবার বান্দরবানের রুমা উপজেলার সুংসুংপাড়া সেনা ক্যাম্পের আওতাধীন জারুলছড়িপাড়ায় সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) হামলায় মো. আলতাফ হোসেন মাসুম এবং মো. তৌহিদ নামের দুই সৈনিক নিহত হয়েছে, আহত হয়েছেন দুই কর্মকর্তা।

০১ জুন ২০২৩ বৃহস্পতিবার ছিলোটি পাড়া এলাকায় সন্ত্রাসী কর্তৃক বিক্ষিপ্তভাবে পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণে আহত ১ জন সেনাসদস্যকে আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈনিক তুজাম (৩০) মৃত্যুবরণ করেন।

১৭ জুন ২০২৩ শনিবার কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বিক্ষিপ্তভাবে পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণে শহীদ হয়েছে সৈনিক মোন্নাফ হোসেন রাজু (২১)।
এ ধরণের সন্ত্রাস, অপহরণ, চাঁদাবাজি নির্মূলসহ সকল হত্যাকান্ড নিরসণে সেনাবাহিনী জীবন বাজি রেখে পাহাড়ের জনসাধারণের জন্য নির্ঘুম কাজ করে যাচ্ছে। অত্যান্ত দূঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত কোন সুশীল সমাজ এই হত্যাকান্ডের ব্যাপারে কোন ধরনের টু-বাক্য প্রকাশ করেননি।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকরে পর্যটন শিল্পের বিকাশ
পার্বত্যাঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও পাহাড়ি জনগণের জীবনমান উন্নয়নে পাহাড়ী জনগোষ্ঠী কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গড়েতোলা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র। এগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য বান্দরবানের নীলগিরি, নীলাচল, চিম্বুক পাহাড়, শৈলপ্রপাত ঝর্ণা, রুমা বগালেক, স্বর্ণ মন্দির, তিন্দু, কেওক্রাডং, জাদিপাই জলপ্রপাত, নাফাখুম, থানচির তমা তুংগি, আলীকদমের ড়িম পাহাড়, আলীর গোহা সুড়ঙ্গ। রাঙামাটির উপজাতীয় যাদুঘর, ঐতিহ্যবাহী চাকমা রাজার রাজবাড়ি, কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী পেপার মিলস্ লিমিটেড, চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার, জেলা প্রশাসকের বাংলো, ফুরমোন পাহাড়, সাজেক, সুবলং ঝর্ণা, ঝুলন্ত ব্রীজ। খাগড়াছড়ির ঠান্ডা ছড়া, তৈলাফাং ঝর্ণা, হর্টিকালচার পার্ক, হাতি মাথা,শান্তিপুর অরণ্য কুটির ,রিসাং ঝর্ণা আলুটিলা, জেলা পরিষদ পর্যটন কমপ্লেক্সসহ আরো অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্র সমূহ।

বান্দরবান জেলার পর্যটন শিল্প বিকাশ ও স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে জেলার চন্দ্র-পাহাড়ে একটি বিশ্বমানের রিসোর্ট নির্মাণের জন্য আর অ্যান্ড আর হোল্ডিং লিমিটেড এবং আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিনিধি হিসেবে সদর দপ্তরের ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের মধ্যে ২০১৬ সালের ১২ জুন একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ২০ একর তৃতীয় শ্রেণির জমি পর্যটন কার্যক্রম গ্রহণ ও পরিচালনার জন্য বান্দরবান সেনা রিজিওনের অনুকূলে লিজ প্রদানের জন্য ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর চুক্তিবদ্ধ হয়। উক্ত পর্যটন কর্য্যক্রম যথাযত সম্পন্ন করা হলে হাজারো পাহাড়ী যুবকের কর্মসংস্থান সুযোগের পাশাপাশি বেকার সমস্যা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

শিক্ষার বিস্তার
সেনাবাহিনী সরকারের একটি অবিচ্ছেদ্য দেশরক্ষাকারী বাহিনীর অংশ হিসেবে সরকারের উন্নয়নমুখী শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের পাশাপাশি শৃঙ্খলা, নৈতিক শিক্ষা, অসাম্প্রদায়িকতা জাগ্রতকরণ, দেশপ্রেম ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত প্রেষণা প্রদান করে আসছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বাস্তবধর্মী ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে সেনাবাহিনী সুশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। অন্যান্য সেনানিবাসের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

সেই সাথে রয়েছে ক্যান্টনম্যান্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ সমূহ, সেনামৈত্রী উচ্চ বিদ্যালয়, কমিউনিটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণকেন্দ্র এবং সেলাই প্রশিক্ষণকেন্দ্রসহ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিনিই প্রদান করা হচ্ছে খাতা. কলম. বই, পেন্সিলসহ বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা সামগ্রী ও বিভিন্ন অংকের নগদ অর্থ।

দারিদ্র বিমোচন
পার্বত্য চট্টগ্রামে পিছিয়ে পড়া পাহাড়ী জনগোষ্ঠির দারিদ্র বিমোচনে সেনাবাহিনীর নিরলসাভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
হতদরিদ্র পরিবার গুলো কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে গরু-ছাগল, হাস-মুরগি প্রদান, সেলাই মেশিন, কৃষিযন্ত্র, রিকসা, মালবহি ভেন গাড়ি, বিভিন্ন ধরনের কৃষিবীজ প্রদানসহ ব্যাক্তির যোগ্যতানূযায়ী কাজের ক্ষেত্র তৈরী করে অসহায় পরিবার গুলোকে স্বাবলম্বি হওয়ার সুযোগ প্রদান করে থাকেন।

পাহাড়ে সেনাবাহিনীর এই মহৎ উদ্যোগের ফলে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি-বান্দরবানে লক্ষাধিক পরিবারে দু-বেলা দু-মুটো ডাল ভাতের ব্যাবস্থা হয়েছে বলে জানা যায়।
সেনাবাহিনীকে বাদদিয়ে পাহাদের দূর্গম এলাকার উন্নয়ন ও অগ্রগতি অকল্পনীয়, পাহাড়ী জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে শান্তি-সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পাহাড়ের এক অনন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

লেখক: গবেষক – পার্বত্য চট্রগ্রাম

আরও পড়ুন