পাথরের পরিবর্তে বিটুমিনের সঙ্গে প্লাস্টিক মেশিয়ে ঢাকায় নির্মাণ হলো সড়ক
মো: আশরাফ সাঈদ (ইমন) : রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করা হয়েছে বিটুমিনের সঙ্গে মেশানো প্লাস্টিকের সড়ক। সংশ্লিষ্টরা জানান, এতে একদিকে যেমন খরচ কমবে তেমনি প্লাস্টিকের সড়ক তুলনামূলকভাবে টেকসই।
বাংলাদেশের অন্যসব সড়কের মতোই এটাও একটি সড়ক। কিন্তু এতকুটু বললেই সবটা বলা হয় না। কারণ এ সড়কটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে প্লাস্টিক। পানি ঢাললেই দেখা যাবে এ সড়কটি সবুজ বর্ণের। দেখতে আর দশটি পিচ ঢালাই সড়কের মতো হলেও এ সড়কটি অন্যগুলোর চেয়ে ভিন্ন। কেননা সড়কটি নির্মিত হয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সড়কে এটাই এখন বাস্তবতা। প্রাথমিকপর্যায়ে, সড়কটির ২২৫ মিটার অংশের মূল উপাদান ছিল প্লাস্টিক বর্জ্য।
বিশ্বের উন্নত দেশে বিটুমিনের সঙ্গে প্লাস্টিক মিশিয়ে সড়ক নির্মাণ পুরোনো হলেও বাংলাদেশে এটাই প্রথম। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহায়তায় পরীক্ষামূলকভাবে সড়কটি নির্মাণ করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। মূলত পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারণ প্লাস্টিককে কাজে লাগানোর পাশাপাশি সড়ক তৈরিতে খরচ কমাতে এ পন্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সড়ক গবেষণাগারের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমা ইয়াসমিন বলেন, ময়লা আবর্জনা ভেবে যেসব প্লাস্টিক ফেলে দেয়া হচ্ছে, সেইসব প্লাস্টিক রিসাইকেল করে ব্যবহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে খরচও কিছুটা কমে যাবে, সড়কের দীর্ঘস্থায়িত্বটা বেড়ে যাবে। পরিবেশের জন্য ভালো। পাথরের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সড়কের উপরে ও নিচে বিটুমিনের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে প্লাস্টিক।
সাধারণত পিচ, বিটুমিন, পাথর, ইট বা কংক্রিটের সমন্বয়ে দেশে যে সড়ক তৈরি হয় তারচেয়ে কম খরচের প্লাস্টিক দিয়ে সড়ক টেকসই হবে বলেও জানান তিনি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্লাস্টিকের এ সড়ক পরিবেশের জন্য নতুন করে ক্ষতির কারণ হবে কি না?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, প্লাস্টিক দিয়ে যদি আমরা সড়ক বানাতে চাই, সেক্ষেত্রে আমরা কিভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার করবো, প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশ যেন দূষিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে অবশ্যই। মাইক্রো প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এটা যেন কোনোভাবেই বাতাসে আসতে না পারে, পরীক্ষামূলকভাবে এগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এটা সফল হলেই আমরা বাংলাদেশের অন্য সড়কগুলোতে এটি ব্যবহার করতে পারব। এটা যদি আমরা সফল করতে পারি, তাহলে প্লাস্টিক দূষণ থেকে দেশ রক্ষা পাবে। আবার সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে যে অভিযোগটা আছে সেটাও কমে যাওয়া সম্ভবনা আছে।
প্লাস্টিক বর্জ্যের বিকল্প এ ব্যবহারের দেখে কেউ যাতে আবার নতুন করে প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি তৈরির উদ্যোগ না নেন, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বানও জানান তিনি।