পশ্চিমবংগের কোলকাতায় পশুর হাটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়
জাগোজনতা অনলাইন : মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রথমদিকে জমে ওঠেনি কোলকাতার পশু বেচাকেনার হাটগুলো।
গেলো শুক্রবার (১৪ জুন) অবধি কলকাতার পশু বাজার এক প্রকার ফাঁকাই ছিল।
কিন্তু গতকাল শনিবার (১৫ জুন) কাকডাকা ভোর থেকেই হঠাৎ পরিস্থিতির বদল আসে। কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকার লোহাপোলে প্রতিবারই ঈদকে কেন্দ্র করে পশুর হাট বসে।
এই মুহূর্তে সেখানে ব্যাপক সংখ্যক গরু আসতে শুরু করেছে। বলা যেতে পারে কলকাতার নিরিখে প্রথম গরুর হাট। এর আগে শহরবাসীকে ঈদ উপলক্ষে গরু কিনতে হলে ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরে শহরের বাইরে যেত হত। এবার ব্যতিক্রম।
রাজ্যের উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি হলেও দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রার ক্ষেত্রে কমলা সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। ব্যতিক্রম নয় কলকাতা শহর। তীব্র দাবদাহ পুড়ছে কলকাতা। তারই মধ্যে পবিত্র ঈদুল আযহা। আর হাতের সামনে গরু পেয়ে তাপ উপেক্ষা করেই উপচে পড়ছে ক্রেতাদের ভিড়।
হাট কমিটির সম্পাদক সিকন্দরের কথায়, বলতে পারেন, বাজার আজ থেকেই শুরু হয়েছে। ভারতে নির্বাচন চলছিল, তারপর ৪ জুন ছিল ফল ঘোষণা। ফলে অপেক্ষা করেও উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িষার মতো ভিন রাজ্য থেকেও সেভাবে গরু আসতে পারেনি। এবারে কলকাতার চারিদিকে যে গরুর হাট দেখা যাচ্ছ, তা শহর সংলগ্ন উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনাসহ শহর সংলগ্ন জেলাগুলো থেকে এসেছে।
বিক্রেতাদের মতে, পবিত্র ঈদুল আজহা সকলের। সকলেই যাতে সামর্থ্যের মধ্য থেকে গরু-ছাগল কিনতে পারে, তাই সেভাবেই এবার কলকাতায় গরুর হাট সাজানো হয়েছে। দাম রয়েছে সাধ্যের মধ্যে। ২৫ থেকে ৩০ কেজি মাংস পাওয়া যাবে এমন গরুর দাম রয়েছে ১১ হাজার থেকে ২৫ হাজার রুপি মধ্যে। যেসব গরু ৯০ হাজার থেকে দেড় লাখের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে সেগুলো থেকে ৮-৯ মণ বা তার থেকে বেশি মাংস পাওয়া যাবে। সাইজ অনুযায়ী, খাসি বিক্রি হচ্ছে ১৫ হাজার ৭০ হাজার রুপিতে।
মূলত, বিগত ঈদুল আজহায় শহরে যেসব গরু পাওয়া গিয়েছিল, তা আসত অন্য রাজ্য থেকে। দেশি গরু বাজার থাকলেও অন্য রাজ্যের মহাজনদের দাপটে সেভাবে দেশি বাজার সুবিধা করতে পারত না। এবার নির্বাচনের জন্য অন্য রাজ্য থেকে গরু আসেনি বললেই চলে, ফলে দেশি গরুর বাজার জমে উঠেছে।
এদিন সকাল থেকেই অস্থায়ী বাজারগুলো যানবাহন ভর্তি করে পশুর গাড়িগুলো আসতে দেখা যায়। কমিটির তরফে মাইকে প্রচার হওয়া মাত্রই ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
স্থানীয়দের মতে, অস্বাভাবিক গরম, বৃষ্টির দেখা নেই। তাই বেশি রাতেই হাটগুলোয় ভিড় বাড়বে।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, কলকাতায় গরুর হাট দেখা যায় না। পার্কসার্কাস লোহাপোল অঞ্চল মুসলিম অধ্যুষিত। শহরের বেশিরভাগ অঞ্চলে খাসি এবং দুম্বা বা ওই জাতীয় প্রাণীর অস্থায়ী হাটগুলো বসে থাকে। কিন্তু শহরের প্রাণকেন্দ্র পার্ক সার্কাস অঞ্চলে এক প্রকার এবারই প্রথম গরুর হাট বসেছে। আর বাড়ির দোরগোড়ায় কোরবানি পশু পেয়ে আপ্লুত স্থানীয়রা।
এবারই প্রথম পুরুষদের পাশাপাশি গরুর হাটে নারীদেরও ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এক নারী ক্রেতার কথায়, স্বামী মুম্বাই থাকেন। পরিবারকেই ঈদের সব ধরনের বন্দোবস্ত করতে হয়। শহরের বাইরে ৩০- ৪০ কিলোমিটার দূরে গরুর হাট বসতো। এবার বাসার সামনে পেয়ে আর ফোনে স্বামীর সম্মতি পেয়েই একাই কিনতে চলে এসেছি।
তিনি ৭০ হাজার রুপির গরু, দরদাম করে ৫০ হাজার রুপিতে কিনলেন। সামর্থ্যের মধ্যে কোরবানির পশু পেয়ে বেশ খুশি ওই নারী।
অপরদিকে ১৫ হাজার রুপি নিয়ে গরু কিনতে এসেছিলেন মো. শামীম। মন্দার বাজারে ওটুকুই পশু কেনার জন্য সঞ্চয় করতে পেরেছেন।
তার অভিমত, ধারদেনা থাকলে কোরবানি দেওয়ার নিয়ম নেই। আগে ঋণ শোধ করতে হয়। এবার নিয়ত করেছিলাম, ঋণ শোধ করে হাতে যা থাকবে তাই দিয়েই গরু কিনব। সব ঝামেলা মিটিয়ে ১৪ হাজার রুপিতে ছোট সাইজের একটি গরু কিনতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ছোট পরিবার আমার, কেনা গরুটি থেকে ২৫ কেজির মতো মাংস পাওয়া যাবে। ভাগ করার পর আমার পরিবারের জন্য যা থাকবে, তা যথেষ্ট।
একইভাবে কলকাতা নাখোদা মসজিদ সংলগ্ন জাকারিয়া স্ট্রিটে, শেষবেলায় জমে উঠেছে পশুর হাট।
মূলত, জাকারি স্ট্রিতে মেলে খাসি এবং দুম্বা। সেখানেও এবার দেশি খাসি এবং দেশি দুম্বার উপরে তাদের বাজার নির্ভর করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে শেষবেলায় বেচাকেনায় জমে উঠেছে কলকাতার অস্থায়ী পশুহাটগুলো।