ঢাকা | ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০২৫ - ৫:৪০ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত গোলাপ গ্রাম

  • আপডেট: Thursday, February 13, 2025 - 7:34 am

ইউসুফ আলী খান।। মাঘের শেষে রূক্ষ প্রকৃতিতে রং ছড়িয়ে ফুটে আছে লাল টুকটুকে রক্তিম গোলাপ। প্রকৃতিতে এ যেন শ্রষ্টার তুলিতে আঁকা ভালোবাসার রং। রাত পোহালেই ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং বাংলা এদিন পহেলা ফাল্গুন বসন্তের শুরু । বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছেন গোলাপ চাষিরা। আর এই খুশিতেই সাভারের গোলাপ চাষিদের মুখে ফুটেছে স্ফীত একগাল হাসি।

এই গ্রামে যতদূর শুধু চোখ যায় গোলাপের বাগান। এ যেন স্বপ্নের গ্রাম। সাভারের এই গোলাপ গ্রামে পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত। প্রতিদিনই সদ্য ফোটা গোলাপের সৌন্দর্য ও গন্ধ নিতে চলে আসে হাজারো সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ।
সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, শ্যামপুর, সাদুল্লাহপুর, মৈস্তাপাড়া, বাগ্নীবাড়ি, বাটুলিয়া ও কমলাপুর উঁচু লাল মাটির এই গ্রামগুলো একনামে পরিচিত গোলাপ গ্রাম। এসব গ্রামের বাগান গুলোতে শোভা পাচ্ছে লাল গোলাপ। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হওয়ায় বাড়তি লাভের আশায় বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত ফুলচাষিরা।

ফুলচাষী আফরানের সঙ্গে হলে তিনি বলেন, এখানে মেরিন্ডা, হাজারি, লিংকন, পাপা মিলন, বধূয়া বা হলুদ ও সাদা গোলাপের চাষ হয়। তবে বাজারে চাহিদা বেশি লাল মেরিন্ডার। এ গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষেরই প্রধান জীবিকা ফুল চাষ।

মাহমুদুল হাসান নামে আরেক চাষি বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করি। গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর আমাদের চাষ ভালো হয়েছে। গাছে গাছে ভালো ফুল ফুটেছে। এখন পর্যন্ত বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। দেশে চাহিদা অনুযায়ী তাজা ফুল উৎপাদন হওয়ায় সরকারের কাছে বিদেশ থেকে আমদানি করা কৃত্রিম ফুল নিষিদ্ধের দাবি জানান তিনি ।

আরেক চাষী শ্যামপুর এলাকার ফুলচাষি হিকমত আলী বলেন, সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বাগান করেছি। প্রত্যেক বিঘা থেকে প্রতিদিন আমি ৫০০-৬০০ গোলাপ তুলতে পারি। এবার বাগানে ফলন খুব ভালো হয়েছে। ফুলের বাজারদর এবার বেশ ভালো। বর্তমানে ৫ থেকে ৮ টাকা পিস গোলাপ বিক্রি হচ্ছে বাগান থেকে। সামনে পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারী দাম আরো বাড়বে। আশাকরি ৩-৫ লাখ টাকার ফুল আমি বিক্রি করতে পারব।

নিজ বাগানের সামনে বসে ফুলের মুকুট বানাচ্ছিলেন সুফিয়া বেগম, তার সাহায্যকারী হিসেবে রয়েছে স্বামী ও ১০ বছরের ছেলে।তিনি জানালেন, আগে ফুল বেশিরভাগই পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যেতেন। শাহবাগসহ ঢাকার অনেক ফুল মার্কেটে চলে যেত তার বাগানের ফুল। তবে এখন ফুলের একটা বড় অংশ বিক্রি করছেন এখানেই, দর্শনার্থীদের কাছে। বাকি অংশ চলে যাচ্ছে ফুলের পাইকারদের কাছে।

এসময় দর্শনার্থীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, চারদিকে এত এত ফুল দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। আমরা বন্ধুরা মিলে প্রায়ই আসি এখানে ঘুরতে। আমরা এবার একটা বিষয় নিয়ে খুব উপভোগ করলাম। গোলাপ কিনলে শুধু বাগানে ঠুকতে দেয় ছবি তুলতে। তাই আমরা বাগানে ঢুকে ফুলও কিনছি ছবিও তুলেছি। তবে এখানে আসলেই আমি হাতভর্তি গোলাপ কিনি দোকানের চেয়ে অনেক কমদামে ফুল পাওয়া যায় এখানে। সামনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস তাই সবাই আসবেন এখানে এবং নিজের প্রিয়জনকে ফুল কিনে উপহার দিবেন।

বিরুলিয়া ফুল চাষি সমিতির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসির জানান, গোলাপ বিক্রির জন্য শ্যামপুর ও মৈস্তাপাড়ায় গড়ে উঠেছে ফুলের বাজার। চাষিরা বাগান থেকে ফুল তুলে বিকেলের মধ্যেই বাজারে নিয়ে যান। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে ফুল বেচাকেনা। স্থানীয় ফড়িয়ারা দুই বাজার থেকে ফুল কিনে সরাসরি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করেন। প্রতিদিন প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়। যদি সরকার ফুল রফতানিতে আরও ভূমিকা রাখতো তবে এর চেয়ে বেশি গোলাপ বিক্রি হতো বাজার গুলোতে। শুধু যে ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি এ গ্রামটিতে তা নয়, গোলাপের গ্রামগুলোর সৌন্দর্যের কথা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে প্রতিদিনই ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে ভিড় জমাচ্ছেন গ্রামের এসব বাগান গুলোতে।

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মফিদুল ইসলাম বলেন, বিরুলিয়ার ইউনিয়নে ৩৫০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়। আর এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রায় দেড় হাজার চাষি। মাঠে ফসলের পাশাপাশি ফুল চাষেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস। গোলাপ চাষে যেন উদ্যোক্তারা আরও বেশি লাভবান হন তার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে কৃষকদের পরিচিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়াও উন্নত ফলনের জন্য যা যা করণীয় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হবে। এ বছর সাভারের ফুল চাষিরা প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন বলে আশা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।