ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪ - ৪:০১ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

নির্বাচন কমিশন সংস্কারে সুজনের সুপারিশ

  • আপডেট: Thursday, August 29, 2024 - 4:33 pm

নিজস্ব প্রতিবেদক।। রাষ্ট্র সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার বলে মনে করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্র ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। সেজন্য আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তনসহ বেশকিছু সংস্কার করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ‘বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সুপারিশে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তনের কথা ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনা প্রয়োজন। নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ ও উক্ত আসনসমূহে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের ব্যাপারে বিবেচনা করতে হবে।

মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধে প্রতিটি দলকে আসনভিত্তিক সংশ্লিষ্ট সকল আসনের জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দুইজন করে প্রার্থী নির্ধারণের প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডকে উক্ত দুইজনের মধ্য থেকে একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে হবে। প্রার্থী হওয়ার শর্ত হিসেবে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী ব্যক্তিকে কমপক্ষে তিন বছর পূর্বে সংশ্লিষ্ট দলের সদস্যপদ গ্রহণের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করতে হবে। ভোটার কর্তৃক অপছন্দের প্রার্থীদের বর্জনের জন্য ‘না’ ভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে।

সুপারিশে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় কমানোর জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রার্থীদের পোস্টার ছাপানো, হলফনামার তথ্য প্রচার ও আসনভিত্তিকভাবে প্রার্থী পরিচিতি সভা আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

একইসঙ্গে প্রতিটি আসনে তদারককারী নিয়োগের মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয়সীমা মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। হলফনামা প্রদানের বিধান আইনে সন্নিবেশন ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের হলফনামা প্রদানে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করতে হবে। মনোনয়নপত্র ও হলফনামার ইলেক্ট্রনিক ফাইলিং বাধ্যতামূলক করা এবং হলফনামা ও আয়কর বিবরণী সাথে সাথেই নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করার বিধান আইনে যুক্ত করতে হবে।

এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯২ ও ৯৩ ধারায় বর্ণিত দায়মুক্তির বিধান বাতিলের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশে সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত এবং ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের বিষয়টি রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।

আরো বলা হয়েছে, ভোটার তালিকায় জেহুরা গ্যাপ নিরসনের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, নির্বাচনী হলফনামায় প্রার্থীদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তালিকার সাথে অর্জনকালীন মূল্যসহ বর্তমান বাজারমূল্য উল্লেখ করার বিধান করতে হবে। হলফামা যাচাই-বাছাই করে অসত্য তথ্য প্রদানকারীদের প্রার্থীতা বাতিল, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন সংস্কার, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভোটার তালিকায় জেন্ডার গ্যাপ থাকলে তার কারণ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

বৈঠকে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, সত্যিকার গণতন্ত্র উদ্ধারের পর ভোটারদের ভোট পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। ভোটারদের তৃণমূল পর্যায়ে ভোট পরিচালনা, ভোট সংরক্ষণ ও ভোটের ফলাফল নির্বাচন কমিশনে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের ভোটার তালিকায় ত্রুটি রয়েছে। ২০০৭ সালের ভোটার তালিকায় পুরুষের তুলনায় ১২ লাখ নারী ভোটার বেশি ছিল। কিন্তু এখন পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারী ভোটারের সংখ্যা কম। তার মানে এখানে জেন্ডার গ্যাপ হয়েছে। এর কারণ হলো, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা করা হয়নি। নির্বাচনের আগে এ সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে।

সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তৃতা করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য নবগঠিত সরকারকে পরামর্শ দিতে গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম আদীব, সাংবাদিক ও কবি সোহরাব হাসান, নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবু সাঈদ খান, টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট ফয়েজ আহমদ তৈয়ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম প্রমুখ। মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।