পাহাড়ে আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলোর কার্যকলাপে বারবার রক্তাক্ত হয়েছে বিভিনড়ব জনপদ। তাদের চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যা, গুমও সন্ত্রাসের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও সম্প্রীতি। এত কিছুর মাঝেও পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাস দমনে খানিকটা আশার আলো দেখাতে পেরেছে নিরাপত্তা বাহিনী। বিষয়টি পার্বত্যবাসীসহ দেশের আপামর জনসাধারণের জন্য কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনলেও ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়াসহ বেশকিছু যোগাযোগ ও প্রচার মাধ্যমে নিয়মিত পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত নেতিবাচক প্রচারণা চলছে। সংশ্লিষ্ট সচেতনমহল বিষয়টিকে উদ্বেগজনক এবং এর অন্তরালে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করছেন। কারণ এই সকল প্রচারণার কোন বাস্তবভিত্তি নেই। এর পেছনে স্বার্থান্বেষী কিছু মহলের গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিভিনড়ব সূত্রে জানা যায়, আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীসমূহ বিশেষ করে জেএসএস ও ইউপিডিএফ নামধারী সংগঠন ও তাদের মদদদাতারা নিজেদের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী অপতৎপরতার মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অবস্থান তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। আর এজন্যই তারা তাদের এই ত্রাসের রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়ে নানা অপপ্রচার শুরু করেছে। তাদের উদ্দেশ্য, জনসম্মুখে হেয় প্রতিপনড়ব করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিকে প্রশড়ববিদ্ধ করা।
এই সকল অপপ্রচারের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম ব্যাহত করার জন্য ধর্মীয় অনুভূতির অপব্যবহার। দুষ্কৃতিকারী দমনে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত যেকোনো অভিযানকে ঐ স্থানের ধর্মীয় উপাসনালয়, কিয়াংঘর কিংবা ভাবনা কেন্দ্রে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক আক্রমণ বা পবিত্রতা লঙ্ঘনের তকমা দিয়ে তারা স্থানীয় ধর্মভীরু জনসাধারণের মনে বিদ্বেষ তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। একই সাথে তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলেও এ সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য প্রচারের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীর ভাবমর্যাদাকে ক্ষুণড়ব করার অপচেষ্টাও জারি রেখেছে।
স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি রাঙ্গামাটি জেলার বন্দুকভাঙা রেঞ্জে সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত একটি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে এ ধরনের অপতথ্য ছড়ানোর ঘটনা ঘটে। জানা যায়, জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে রাঙামাটি জেলার দুর্গম বন্দুকভাঙ্গা রেঞ্জের মারিচুক ও যমচুগ নামক এলাকায় একটি সেনা অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে সেনাবাহিনীর সাথে ইউপিডিএফ আঞ্চলিক দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলি বিনিময়ের ঘটনায় একজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার পাশাপাশি উদ্ধার হয় অ্যাসল্ট রাইফেলসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ। ধ্বংস করা হয় সন্ত্রাসীদের একাধিক ঘাঁটি এমনকি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও।
তবে এই ঘটনার পরপরই একটি চিহ্নিত মহল দাবি করে সেনাবাহিনী যমচুগ এ অবস্থিত ভাবনাকেন্দ্র অবমাননা করেছে, ভাবনাকেন্দ্র দখল করে সেখানে ক্যাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা করছে এবং জোরপূর্বক স্থানীয় লোকজনকে উচ্ছেদ করছে। তাদের আবদার নিরাপত্তা বাহিনী যেন ওইস্থানে অবস্থান না নেয়।
তাদের সে অপপ্রচার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। সেনা অভিযানের পর গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত অভিযান এলাকার বিভিনড়ব ছবিতে দেখা যায় ভাবনাকেন্দ্রের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ঐ স্থানে সন্ত্রাসীদের অবস্থানের নানা চিহ্ন এমনকি নিরাপত্তা বাহিনী সাথে বন্দুকযুদ্ধে আহত সন্ত্রাসীদের রক্তের দাগও লেগে আছে ভাবনাকেন্দ্রের দেয়াল এবং মেঝেতে। স্থানীয়রা বলছেন, মূলত জেএসএস ও ইউপিডিএফ নামধারী এই সব আঞ্চলিক সশস্ত্র দলের সদস্যরাই ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে সন্ত্রাসী অপকর্ম পরিচালনার মাধ্যমে ধর্মকে অবমাননা করছে।
পরবর্তীতে, সেনাবাহিনী চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই এলাকায় তাদের অভিযানিক কাজ সমাপ্ত করে ব্যারাকে ফেরত আসার সাথে সাথেই ঐ স্থানের দখল নেয়ার জন্য আঞ্চলিক দুই সশস্ত্র দল জেএসএস ও ইউপিডিএফের মধ্যে শুরু হয় তুমুল গোলাগুলি, যা থেমে থেমে এখনো চলমান। স্থানীয় জনসাধারণ জীবন বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে পাশের এলাকায় এবং দ্রুত নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তক্ষেপ আশা করছে।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, ভূ-প্রকৃতি গত কারণে বন্দুকভাঙ্গা এলাকাটি দুষ্কৃতি সহায়ক তথা অপরাধপ্রবণ এলাকা। উক্ত এলাকার দুর্গমতার সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত জেএসএস ও ইউপিডিএফ নামধারী আঞ্চলিক দলগুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এলাকাটিকে সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে রেখেছে। এমনকি ঐ স্থানের দখল নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে গত কয়েক বছরে নিহত হয়েছে প্রায় ২০-২৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী। মূলত একারণেই সেনাবাহিনী ঐ অঞ্চলে সন্ত্রাস নির্মূলে উক্ত অভিযান পরিচালনা করে। আর সেনাবাহিনী কর্তৃক ধর্মীয় উপাসনালয়ে ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টি নিতান্তই দুষ্কৃতিকারীদের ওই অঞ্চল থেকে দ্রুত নিরাপত্তা বাহিনীকে সরিয়ে পুনরায় তাদের আধিপত্য ।