চরের সবচেয়ে আলোচিত আকর্ষণ হলো রাসমেলা। শতাব্দী প্রাচীন এই উৎসব কেবল ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতার প্রতীক নয়, এটি অসাম্প্রদায়িক চেতনা, গ্রামীণ সংস্কৃতি এবং মানুষের মিলনের এক জীবন্ত উদাহরণ। সমুদ্রতীরের ঢেউয়ের মৃদু গর্জন, বনবেষ্টিত বাতাস এবং উৎসবের প্রাণবন্ত জনস্রোত একত্র হয়ে সৃষ্টি করে এমন এক অভিজ্ঞতা যা মনকে ছুঁয়ে যায়। মেলার প্রতিটি মুহূর্তে ধরা পড়ে আঞ্চলিক লোকসংগীতের মাধুর্য, নৃত্যের ছন্দ, স্থানীয় খাবারের স্বাদ এবং হস্তশিল্পের রঙিন ছোঁয়া। প্রতিটি হাসি, প্রতিটি গান, প্রতিটি ঢেউ যেন বলে এটাই বাংলাদেশের প্রাণ।
চরের শুটকি পল্লীও এই ভ্রমণ ও অর্থনীতির সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা মাছ শুকানোর শিল্প কেবল স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে না, এটি বিদেশি পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনধারার এক বিশেষ অভিজ্ঞতা হিসেবে উপস্থাপন করে। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে শুটকিকে বিশ্বের বাজারে পরিচিত করা গেলে, এটি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস হবে এবং স্থানীয় জেলেদের স্বাবলম্বী করতেও সহায়ক হবে। একইসাথে বন সংরক্ষণ এবং অযাচিত প্রাণী শিকার কমানোও সম্ভব। চরের দোকানপাট এবং মেলার বিভিন্ন হস্তশিল্প প্রদর্শনী বিদেশি পর্যটকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা। দেশীয় খাবার, স্থানীয় রান্না, তাজা মাছ এবং কারুশিল্পের নিখুঁত ছোঁয়া সরাসরি বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। রাসমেলা এবং শুটকি পল্লী একত্র হয়ে একটি বিশ্বমানের পর্যটন অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করে। পর্যটকরা এখানে শুধু দেখেন না, তারা অনুভব করেন গ্রামের জীবন, কারুশিল্প, খাবার, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব সমন্বয়।
দুবলার চরের রাসমেলা তাই কেবল দেশীয় পর্যটকদের জন্য নয়, এটি আন্তর্জাতিক পর্যটনের ক্ষেত্রেও অসীম সম্ভাবনা ধারণ করে। সঠিক ব্র্যান্ডিং করলে এটি বিদেশি পর্যটকদের জন্য এক বিস্ময়কর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা হয়ে উঠতে পারে। বিদেশি দূতাবাসের হাইকমিশনার এবং রাষ্ট্রদূতদের মেলায় আমন্ত্রণ জানিয়ে, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং ব্লগারদের মাধ্যমে এই উৎসবকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা সম্ভব।
দুবলার চরের রাসমেলা তাই কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়। এটি প্রকৃতির জাদু, মানুষের সংস্কৃতি, আন্তর্জাতিক পর্যটন সম্ভাবনা এবং স্থানীয় অর্থনীতির এক সমন্বিত উদাহরণ। সঠিক প্রচারণা এবং আন্তর্জাতিক সংযোগের মাধ্যমে এটি হতে পারে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও পর্যটন ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দ্যুতি, যা সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের সৌন্দর্য, ঐতিহ্য এবং উদ্ভাবনী সম্ভাবনা তুলে ধরবে।
লেখক: ইনস্ট্রাক্টর (টেক) ও বিভাগীয় প্রধান
ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।