বাংলাদেশে তরুণ জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ। এই তরুণ শক্তি যদি সঠিক দিকনির্দেশনা, আধুনিক প্রযুক্তি এবং ব্যবহারিক দক্ষতায় সমৃদ্ধ হয়, তবে তারা শুধু নিজেদের জীবন নয়, দেশের অর্থনীতি এবং সমাজকে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষ জনশক্তি বৃদ্ধি পেলে উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় এবং জাতীয় আয়ের হারও দৃঢ়ভাবে উন্নীত হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার ক্রমবর্ধমান। এটি তরুণদের জন্য নতুন সম্ভাবনার সোপান খুলছে। দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো উদাহরণ প্রমাণ করে যে, কারিগরি শিক্ষায় বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিকে দ্রুত প্রতিযোগিতামূলক এবং স্থিতিশীল করে তোলে। এই শিক্ষার মাধ্যমে তরুণরা কেবল কর্মমুখী দক্ষতা অর্জন করে না, বরং সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী মনোভাব এবং আত্মবিশ্বাসও অর্জন করে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দক্ষ জনশক্তি যেকোনো শিল্পের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে। বাংলাদেশের রপ্তানি শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি খাত এবং উৎপাদনশীল ক্ষেত্রগুলো ইতোমধ্যেই কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষিত জনশক্তির প্রভাবে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করছে। ২০২২ থেকে ২০২৩ অর্থবছরে দক্ষ জনশক্তি রেমিট্যান্স আয়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে নতুন প্রজ্বলিত আলো যোগ করেছে, যা দেশের উন্নয়নের নতুন মাত্রা সৃষ্টি করছে। সরকারের Skills for Employment Investment Program ইতিমধ্যে লাখ লাখ তরুণকে কারিগরি ও ব্যবহারিক দক্ষতায় সজ্জিত করেছে।
শহর এবং গ্রামীণ উভয় অঞ্চলে কারিগরি শিক্ষার প্রসার নতুন উদ্যোগ, সৃজনশীল শিল্প, উদ্যোক্তা এবং প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মোচন করছে। শিল্পের সঙ্গে সমন্বিত প্রশিক্ষণ তরুণদের আত্মবিশ্বাসী, উদ্ভাবনী এবং সমৃদ্ধিশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলছে। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা একত্রিত হয়ে তরুণদের সম্ভাবনার আকাশ উন্মুক্ত করছে।
কারিগরি শিক্ষা কেবল শিক্ষার মাধ্যম নয়, এটি দেশের প্রতিটি স্তরে সুযোগ, সমৃদ্ধি এবং আত্মনির্ভরতার প্রতীক। এটি শিক্ষার্থীকে স্বাবলম্বী করে, উদ্যোক্তা বানায় এবং সমাজে সৃজনশীলতা ছড়িয়ে দেয়। গুণগত কারিগরি শিক্ষা, শিল্পের সঙ্গে নিবিড় সহযোগিতা এবং বাস্তব প্রশিক্ষণ দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী, উদ্যমশীল এবং প্রতিযোগিতামূলক করে।
দক্ষতার ভিত্তিতে গড়ে উঠুক বাংলাদেশের নতুন অর্থনীতি, যেখানে প্রতিটি তরুণ হবে সম্ভাবনার উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। যেখানে শিক্ষার আলো দিয়ে তৈরি হবে কর্মসংস্থানের পথ, উদ্যোক্তা সৃষ্টির দিশা এবং সমৃদ্ধির নিশ্চিত ভিত্তি। যেখানে প্রতিটি তরুণ হবে দেশের সম্ভাবনার সেতুবন্ধন, দেশের অগ্রযাত্রার প্রেরণাশক্তি এবং দেশের উন্নয়নের প্রাণবায়ু। কারিগরি শিক্ষার শক্তি যেন গড়ে তুলুক একটি বাংলাদেশ, যেখানে জ্ঞান, দক্ষতা এবং উদ্ভাবন একত্র হয়ে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
লেখক : ইনস্ট্রাক্টর (টেক) ও বিভাগীয় প্রধান
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।