থানায় শিক্ষার্থী আটক: এসআই প্রত্যাহারসহ ওসির বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা
নিজস্ব প্রতিবেদক।। চাঁদাবাজির অভিযোগে তিন শিক্ষার্থীকে আটক করায় রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে তারা উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। পরে আটক তিনজনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তার পরও পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গলদঘর্ম হতে হয়।
পুলিশের দায়িত্বশীলরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও এ নিয়ে কথা বলতে চাননি। উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার রওনক জাহান বলেন, পরে এ নিয়ে কথা বলবেন। ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই আবু সাঈদকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ওই থানার ওসি হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উত্তরা-১৩ নম্বর সেক্টরের গাউসুল আজম অ্যাভিনিউ সড়কের একটি রেস্তোরাঁয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তরা পশ্চিম থানা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে বৈঠক ছিল। বৈঠক চলাকালে বিকেল ৫টার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই আবু সাঈদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সেখানে যায়। তারা একে একে সবার নাম জানতে চান। এর পর ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (আইইউবি) ছাত্র আসিফুল হক রবিন, উত্তরা টাউন ডিগ্রি কলেজের আকাশ, গাজীপুর বিএএসটির ছাত্র বাপ্পী খানকে আটক করেন।
ওই সময় তারা জানান, পুলিশের উপকমিশনারের নির্দেশে তাদের থানায় নেওয়া হচ্ছে। উত্তরা পূর্ব থানায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। তারা বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাও করে স্লোগান দেন এবং আটকদের ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা উত্তরা পশ্চিম থানায় হামলা চালান। এ সময় তারা বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়। তাদের হামলা ও মারধরে উত্তরা পশ্চিম থানার এএসআই মহাদেব আহত হন। মাঝে কিছু সময় উত্তরার সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা।
খবর পেয়ে পুলিশের উত্তরা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে ছুটে যান। তারা বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উত্তরা পূর্ব থানার কম্পিউটার ল্যাব কক্ষে আলোচনায় বসে পুলিশ। রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত চলে বৈঠক। পরে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাসে শান্ত হন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী দাবি করেন, হয়রানির উদ্দেশ্যে পুলিশ তিন ছাত্রকে আটক করায় অন্যরা ক্ষিপ্ত হন। তারা উত্তরা পশ্চিম থানার ফটকে হামলা চালান এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। তবে পুলিশকে মারধর করা হয়নি।
পুলিশ ছেড়ে দেওয়ার পর আইইউবির ছাত্র আসিফুল হক রবিন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের তালিকা তৈরির সময় উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই আবু সাঈদ আমাদের আটক করেন। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের নামে উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা হয়েছে। অথচ উত্তরা পশ্চিম থানা থেকে যখন উত্তরা পূর্ব থানায় নিয়ে যায়, তখন পূর্ব থানা পুলিশ বলে আমাদের নামে কোনো মামলা নেই।’
রবিন বলেন, ‘আমরা ঝুঁকি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের ধরিয়ে দিই, ছিনতাইকারী ধরিয়ে দিই। অথচ এর কৃতিত্ব নেন উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি হাফিজুর রহমান। আবার সেই ওসিই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন।’
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কাজী জুবায়ের, সৈয়দ সামিউল ইসলাম, মো. আজাদ ও মাহতাব খান বাঁধন নামে চারজন নিজেদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যোদ্ধা পরিচয় দিয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। তারা অভিযোগে উল্লেখ করেন, আকাশ, লাবিব মুহাম্মাদ, রাজু আহমেদ আসিফ, বাপ্পি খান, ওয়েস রহমান, নাহিদ শিকদার, আসিফুল রবিন, সাকিব দাঙ্গাবাজ, চাঁদাবাজ ও প্রতারক।
গত বছরের ৫ আগস্ট তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি পরিচয়ে উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় বিশৃঙ্খলা এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটায়। বর্তমানেও তারা এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা আমাদের কাছে নালিশ জানালে আমরা অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করি। সমাজের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের উপকারে আমরা যখন এগিয়ে যাই, তখন দুষ্কৃতকারীরা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
অভিযোগকারীদের মধ্যে কাজী জুবায়ের উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের একটি হোটেলে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী তাহসিম ফয়েজ সাকিব বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগ যারা দিয়েছে, তারাই চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। অথচ তাদের মিথ্যা অভিযোগে আমাদের তিনজনকে পুলিশ আটক করেছে। তিন ঘণ্টা ধরে আটকের কারণও জানায়নি পুলিশ।