ঢাকা | ডিসেম্বর ২৮, ২০২৫ - ৭:২৮ অপরাহ্ন

শিরোনাম

তাঁত বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দেশীয় তাঁতশিল্প ধ্বংসের অভিযোগ

  • আপডেট: Sunday, December 28, 2025 - 5:31 pm

জাগো জনতা অনলাইন।। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প আজ চরম সংকটের মুখে। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের বিতর্কিত কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের তাঁতি নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, গত দেড় থেকে দুই বছর ধরে সুতা, রং ও রাসায়নিক দ্রব্য আমদানির সুপারিশ বন্ধ করে দিয়ে তাঁতশিল্পকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ইতোমধ্যে দেশের অধিকাংশ তাঁত বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে এবং প্রায় ৩০ লাখ তাঁতি ও ৬০ লাখ তাঁত শ্রমিক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।

বিশেষ করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ, পাবনা, রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চল সহ ৬৪ জেলায় তাঁত শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্বেও গুটিকয়েক কর্মকর্তার কারণে তাঁত শিল্পে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হওয়ায় প্রায় ৯০ লক্ষ তাঁত শ্রমিক বেকার হওয়ার পথে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে তাঁত বোর্ডের সহায়তায় আমদানিকৃত কাঁচামালের মাধ্যমে তাঁতিরা তুলনামূলক স্বল্প ব্যয়ে উৎপাদন চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে আমদানি সুপারিশ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁতিরা বাধ্য হচ্ছেন খোলা বাজার থেকে দ্বিগুণ দামে সুতা ও অন্যান্য উপকরণ কিনতে। এর ফলে আগে যেখানে একটি কাপড় উৎপাদনে খরচ হতো প্রায় ৫০০ টাকা, সেখানে এখন সেই খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার টাকায়। এই অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে না পেরে অনেক তাঁত মালিক উৎপাদন বন্ধ করে দিচ্ছেন, আর কর্মহীন হয়ে পড়ছেন হাজার হাজার শ্রমিক।

জাতীয় তাঁতি সমিতির সম্পাদক ফজলুল হক বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতি সমিতি নতুনভাবে অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত তাঁত বোর্ড কোনো ধরনের আমদানি সুপারিশ বা কাঁচামাল বণ্টন করেনি। বরং মাসের পর মাস মিটিংয়ের নামে জটিলতা তৈরি করা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, প্রায় দুই বছর আগে আমদানিকৃত সুতা ও রাসায়নিক দ্রব্য সময়মতো বণ্টন না করায় সেগুলো গুদামেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যার আর্থিক ক্ষতি গরিব তাঁতিদেরই বহন করতে হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালের জুন মাসে নরসিংদীর আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের একটি প্রাথমিক তাঁতি সমিতির নামে প্রায় দুই কোটি টাকার সুতা, রং ও রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি করা হলেও বণ্টনের অনুমতি না দেওয়ায় সেগুলো তাঁত বোর্ডের লিয়াজোঁ অফিসের গুদামেই পচে নষ্ট হয়েছে। একই পরিস্থিতিতে রয়েছে সিরাজগঞ্জের দুটি সমিতির আমদানিকৃত মালামাল, যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে গুদামে পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

তাঁতি নেতা আবদুল বাতেন বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক জারিকৃত নতুন এসআরও নং ২০০-আইন/২০২৪/৫২/কাস্টমস অনুযায়ী সব শর্ত পূরণ করেই তাঁতিরা আমদানি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। এর বাইরে নতুন কোনো শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে সাধারণ তাঁতিরা তা মানতে প্রস্তুত নন। তিনি অভিযোগ করেন, অত্যন্ত সুকৌশলে তাঁত বোর্ডের কিছু কর্মকর্তা তাঁতিবিরোধী মতামত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে আমদানি প্রক্রিয়া বন্ধের চেষ্টা করছেন।

অন্যান্য তাঁতি নেতারাও অভিযোগ করেন, তাঁত বোর্ডে এখনও আওয়ামী দোসর হিসেবে পরিচিত কয়েকজন কর্মকর্তা বহাল রয়েছেন। বিশেষ করে তাঁত বোর্ডের মেম্বার দেবাশীষ নাগ (এসএন্ডএম) ও উপমহাব্যবস্থাপক রতন চন্দ্র সাহা (এসসিআর) তাঁতিদের আমদানি সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের কারণেই চেয়ারম্যান আমদানি সুপারিশ কার্যকর করছেন না বলে অভিযোগ করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তাঁতিদের আমদানিকৃত মালামাল বণ্টনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি মনিটরিং কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও দীর্ঘদিন পার হলেও সেই কমিটি গঠন করা হয়নি। তাঁতি নেতারা মনে করেন, এই কমিটি গঠিত হলে দুর্নীতির সুযোগ কমে যেত।

এ অবস্থায় তাঁতি নেতারা তিন দফা দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- এসআরও বন্ধের অপচেষ্টা বন্ধ করা, অবিলম্বে আমদানি সুপারিশ কার্যক্রম চালু করা এবং বিতর্কিত কর্মকর্তাদের পদ থেকে প্রত্যাহার। তাঁতশিল্প রক্ষায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।