ঢাবিতে আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেলেন ৫৭ শিক্ষার্থীসহ ৮ শিক্ষক

জাগো জনতা অনলাইন।। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের তিন বছরের (২০২১, ২০২২ ও ২০২৩) ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। অনুষদের চারটি বিভাগের ( ভূগোল ও পরিবেশ, ভূতত্ত্ব, সমুদ্রবিজ্ঞান এবং ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ) মোট ৫৭ জন শিক্ষার্থী ডিনস অ্যাওয়ার্ড পান। এছাড়া গবেষণায় অনন্য অবদানের জন্য ৮ জন শিক্ষককে চার ক্যাটাগরিতে ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের এমিরিটাস অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে অনুষদের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পর্বেরও আয়োজন ছিলো। পরে অনুষদের গবেষণা কার্যক্রমের তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়।
ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন-
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০১৭-২০১৮ সেশনের আবির মাহমুদ, ২০১৮-২০১৯ সেশনের জান্নাতুল নাঈম রাসা, আফরিন সারাবনি, মো. তানহীর হোসাইন, ২০১৯-২০২০ সেশনের জায়ান সাওসান জান্নাত, আদিলা আফজাল, সাদমান রাফিদ, ফারিহা তাবাসসুম ইমা, মায়িশা মালিহা।
ভূতত্ত্ব বিভাগের ২০১৭-২০১৮ সেশনের আনিকা নাওয়ার মায়েশা, সুবাহাশ সুবাহ চৌধুরী, অনুপম হাসিব রোজ, খন্দকার মাসুম বিল্লাহ, ২০১৮-২০১৯ সেশনের উম্মে হাবিবাহ মারজান, জহুর আহমেদ, শিহাব হোসাইন, মো. সিয়াম হোসাইন, মো. মাহফুজ আলম, নুসরাত নাহিয়ান ফাতেমা, রাকিবুল হাসান বাঁধন, ২০১৯-২০২০ সেশনের উৎসব বসাক, ওমর ফারুক, তাসফিয়া বিনতে মাহমুদ, ফ্লোরেন্স ইরা গোমেজ, তাসমিয়া আক্তার তমা, মো. রাকিবুর রহমান।
সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-২০১৮ সেশনের সাদিয়া হক সাদী, রিফাত আরা নিরা, আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হাসিবুল হাসান, স্বচ্ছ রহমান, ২০১৮-২০১৯ সেশনের মো. তাহিদুল ইসলাম, সাদিয়া নাসরিন সারা, ইফফাত সানজিদা, ইশতিয়া শাহানামা, মাহিয়া খন্দকার, মো. জাহাঙ্গীর আলম, এশহিম আহমেদ নোরা, ২০১৯-২০২০ সেশনের সাজিদুর রহমান সাজিদ, মো. ফয়সাল আহমেদ, নাইমা তাসনিম সরকার, মুন্নী আক্তার।
ডিজাস্টার সায়েন্স এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের ২০১৭-২০১৮ সেশনের আজকা তাওহীদা দৈবি, আয়েশা আক্তার নিলা, মাহির অনন্য মাহমুদ, ২০১৮-২০১৯ সেশনের মো. ওয়ালিদ হোসেন তামিম, মাহবুবা হাসনাত ছোয়া, মো. আলী আহমেদ, খাদিজা আফরিন নিহা, ২০১৯-২০২০ সেশনের মাসুদা আফরিন, ইসমাত তাহসিন মাহমুদ, নূরমহল নিলা, সায়েমা নূরজাহান, ইফতেখার আহমেদ, নাঈম সামাদ, উম্মে সাদিয়া শিমলা, নাজিফা তাসনিম।
গবেষণায় অনন্য অবদানের জন্য ৮ জন শিক্ষককে চার ক্যাটাগরিতে ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
অধ্যাপক ক্যাটাগরি: ডিজাস্টার সায়েন্স এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান ও ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বদরুদ্দোজা মিয়া।
সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরি: ডিজাস্টার সায়েন্স এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সাখাওয়াত হোসাইন এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আছিব আহমেদ।
সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরি: ভূতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল ইসলাম ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান।
প্রভাষক ক্যাটাগরি: আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মমিন ইসলাম ও ভূতত্ত্ব বিভাগের ফরহাদ হোসাইন।
এ ছাড়া কিউ-ওয়ান জার্নালে প্রকাশনার জন্য ২২ জন শিক্ষক ও ১ জন কর্মকর্তাকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, মেধাকে মূল্যায়ন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। একই সঙ্গে অভিভাবকদেরও আমরা সঙ্গে রাখতে পেরেছি। আসলে আপনারাও আমাদেরই অংশ।
উপাচার্য বলেন, মেধার অন্যতম ভিত্তি হলো পরিশ্রম। মনে রাখতে হবে, সাফল্যের পেছনে অনেকের অবদান থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের যে পরম্পরা তা তোমরা ধরে রেখেছো। এটাই আমাদের গর্ব। এ ধরনের উদ্যোগ আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় আমাদের মূল কাজ কী।
উপাচার্য আরও বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা পড়াশোনাকে কিছুটা হলেও স্বীকৃতি দিতে পেরেছি। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারকেও সময় দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার ও শিক্ষাজীবনের ভারসাম্যই ভবিষ্যৎকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, এই প্রোগ্রামটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনেক গর্বের। মেধার স্বীকৃতি দিতে পারা সত্যিই এক ধরনের সার্থকতা। একজন শিক্ষক হিসেবে এটি বড় সফলতা যে তার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। এ অর্জনের পেছনে বাবা-মায়েদের অবদান কখনো ভুলে যাওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, গবেষণার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আয়োজকরা এ ধরনের সুযোগ করে দেওয়ায় আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার বার্তা হলো-কর্মজগত শিক্ষাঙ্গণের তুলনায় ভিন্ন। তবে মেধা, পরিশ্রম আর সততা থাকলে যেকোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক অঙ্গণে যে কয়েকটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় তার মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আজকের আয়োজনে অনুষদের শ্রেষ্ঠ গবেষকদেরও পুরস্কৃত করা হয়েছে-এটি সত্যিই অত্যন্ত আনন্দের খবর।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের আয়োজন শুধু শিক্ষার্থী ও গবেষকদের অনুপ্রাণিতই করে না, বিশ্ববিদ্যালয়টির ঐতিহ্যে নতুন মূল্য সংযোজন করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এই অনুষ্ঠানটি মূলত কিছু শিক্ষার্থী ও সহকর্মীর কৃতিত্বের স্বীকৃতির আয়োজন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা শিগগিরই কর্মবাজারে প্রবেশ করবে। সেখানে সফল হতে হলে কঠোর পরিশ্রম অপরিহার্য। একই সঙ্গে ভাগ্যের ভূমিকার কথাও মনে রাখতে হবে। ক্রমাগত পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও সততা থাকলে কর্মজীবনে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। তাই এখন থেকেই নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।