ট্রান্সপোর্ট সিন্ডিকেটের নীরব চাঁদাবাজির হটস্পট শিল্প এলাকা ইসলামপুর
ঈদগাঁও প্রতিনিধি, কক্সবাজার।
কক্সবাজারের একমাত্র শিল্পনগরী ইসলামপুরের বৈধ ইজারাদাররা গত সাত মাস যাবৎ টোল আদায় করতে পারছেন না। প্রশাসনিক সহযোগিতার অভাবে আওয়ামী দোসরদের লেলিয়ে দেওয়া বখাটেরা আরো উশৃঙ্খল হয়ে যাচ্ছে। আগামী তিন দিন শান্তিপূর্ণ উপায়ে বৈধ ইজারা আদায় করতে না পারলে ইউনিয়নের প্রতিবাদী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইজারাদাররা।
১২ নভেম্বর বুধবার বিকেলে ঈদগাঁওতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ইজারাদার পক্ষ এ অভিযোগ দেন এবং হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, নীরব চাঁদাবাজির ট্রান্সপোর্ট সিন্ডিকেটের আওয়ামী দোসর কর্তৃক লেলিয়ে দেওয়া বখাটেদের দ্বারা বৈধ টোল আদায় গত প্রায় ৭ মাস ধরে আক্রমণাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তারা গত ১লা মে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত লবণ রপ্তানি শুল্কের ডাক পান।
অভিযোগকারীরা টোল আদায়ে ব্যর্থ ও লাঞ্ছিত হওয়ার কারণ হিসেবে নিম্নোক্ত সাতটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন।
বিষয়গুলো হচ্ছে — ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পূর্বে নীরব চাঁদাবাজির ট্রান্সপোর্ট সিন্ডিকেট ছলে, বলে, কৌশলে ডাক নিজেদের মধ্যে রাখত। কিন্তু ৫ আগস্ট বিপ্লবের পরে নামেমাত্র কিছু ইজারার টাকা দিয়ে ডাক নিতে না পারায় তারা ক্ষুব্ধ হয় এবং একে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়। ইউএনও’র সিদ্ধান্ত অনুসারে লোডিং পয়েন্টে ইজারা আদায় করতে গেলে ট্রান্সপোর্টের পণ্যবাহী ট্রাকগুলো বেপরোয়াভাবে ইজারাদারদের গায়ের উপর উঠিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে, যার কারণে ইজারা আদায়ে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, রপ্তানিকারকদের পক্ষে ট্রাক ড্রাইভারদের টোল আদায় না করে গাড়ি নিয়ে চলে যেতে ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেয়। ফলে আবারও টোল আদায় মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট জেলা ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলে ডিসি বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছে।
ইজারাদারদের নির্দিষ্ট কোনো অফিস না থাকার দুর্বলতায় রাস্তা থেকে টোল আদায় করতে গেলে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে দুষ্কৃতকারীরা মব সৃষ্টির পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি জামায়াতে ইসলামী চাঁদাবাজি করছে বলে ওই ট্রান্সপোর্ট সিন্ডিকেট সারাদেশে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে।
সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়, ওই আওয়ামী সিন্ডিকেটের কাছে মিল মালিকরাও জিম্মি। ফলে লবণ রপ্তানিকারকদের গাড়ি ভাড়া, লেবার খরচ, ট্রান্সপোর্ট সমিতির চাঁদা ইত্যাদি আদায় করলেও ইজারার নির্ধারিত টোল পরিশোধে সহযোগিতা করছে না। বৈধভাবে ইজারা নেওয়া হলেও ইজারাদার কর্তৃপক্ষ প্রশাসনিক সহযোগিতা পাচ্ছে না, যার ফলে লেলিয়ে দেওয়া বখাটেরা উশৃঙ্খল আচরণ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে ইজারাদার কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেন, বর্তমানে তারা খুবই অসহায়। ৭ মাস যাবৎ বৈধ টোল আদায় করতে গিয়ে বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে অনেক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীনও হচ্ছেন তারা।
তাই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ নীরব চাঁদাবাজির ট্রান্সপোর্ট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ইজারাদারদের জন্য একটি নির্দিষ্ট অফিসের ব্যবস্থা করে দিতে তারা প্রশাসনের নিকট আহ্বান জানান।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ইসলামপুর ইউনিয়ন একটি শান্তির জনপদ। লবণ শিল্পে সমৃদ্ধ এ জনপদ দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রেখে চলেছে। লবণ মিলগুলোতে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। বিগত ৩০ বছর যাবৎ ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা বিভিন্ন লবণ গুদি, চিংড়িঘের, লবণ রপ্তানি শুল্কের অভ্যন্তরীণ রাস্তা ইত্যাদি ডাক দিয়ে স্থানীয় সরকারের আয় বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোছাইন নির্বাচিত হওয়ার পরও সকল নিয়ম-কানুন মেনে ওই ডাক কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী দোসর ট্রান্সপোর্ট সিন্ডিকেটের কারণে আমরা বৈধ ইজারাদাররা কিছুতেই টোল আদায় করতে পারছি না। উল্টো নিজেদের জানমালের বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন নুরুল আমিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নুরুন্নবী, রশিদুল ইসলাম এবং মনির আহমদ প্রকাশ মনু।











