ঢাকা | অক্টোবর ২১, ২০২৫ - ৯:৪৪ অপরাহ্ন

শিরোনাম

টেকনাফে গোপন আস্তানা থেকে ছয় জিম্মি উদ্ধার; আটক-১

  • আপডেট: Tuesday, October 21, 2025 - 6:42 pm

এম এ হাসান, টেকনাফ প্রতিনিধি।

কক্সবাজারের টেকনাফ সদর ইউপির রাজারছড়া পাহাড়ে পাচারকারীদের সুরক্ষিত ডেরায় বিজিবির ‘বজ্র’ হানা : মৃত্যুফাঁদ ভেঙে ৬ জিম্মি মুক্ত; গোপন আস্তানা গুঁড়িয়ে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করেছে।

২১ অক্টোবর (সোমবার) বিকালে গণমাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, সীমান্ত সুরক্ষা, মাদক ও মানব পাচারের অভিশাপ থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত রাখতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদা জাগ্রত ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। টেকনাফ সীমান্তকে সুরক্ষিত রাখতে, বিশেষত মাদক, অপহরণ ও মানব পাচার প্রতিরোধে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) সর্বদা তৎপরতা বজায় রেখেছে।

তারই ধারাবাহিকতায়, সোমবার ভোরবেলায় ২ বিজিবির অর্ধশতাধিক সদস্যের একটি বিশেষ আভিযানিক দল দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে লুকিয়ে থাকা মানব পাচারকারী চক্রের মূল আস্তানায় এক দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানে শুধু অপরাধীদেরই ধরা হয়নি, বরং অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে পাচারকারীদের হাতে বন্দি থাকা ৬ জন নিরীহ ভুক্তভোগীকেও।

দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) মানব পাচার ও সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রগুলোর বিরুদ্ধে নিরলসভাবে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। যার ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ তদন্ত এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর পরিচালিত বিশেষ অভিযানে ৩ জন পাচারকারী আটক হয় এবং ৮৪ জন ভুক্তভোগীকে মুক্ত করা সম্ভব হয়। আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই চক্রগুলোর গোপন আস্তানা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য উদ্ঘাটিত হয়।

এছাড়াও, সর্বশেষ প্রাপ্ত নির্ভরযোগ্য সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় যে, টেকনাফ উপজেলার রাজারছড়া করাচিপাড়া এলাকার গহীন পাহাড়ে একটি মানব পাচারকারী চক্র মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীকে জিম্মি করে রেখেছে।

উক্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান, পিএসসি, বিশেষ অভিযানের বিশদ পরিকল্পনা সাজান। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আজ ২১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ গভীর রাতে রাজারছড়া করাচিপাড়া এলাকার দুর্গম গিরিপথে শুরু হয় বিজিবির রুদ্ধশ্বাস চিরুনি অভিযান। বিজিবি সদস্যদের আকস্মিক উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারকারীরা পাহাড়ে গা-ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করলে, অভিযানকারী দল পাহাড়টিকে নিশ্ছিদ্র বেষ্টনীতে ঘিরে ফেলে কৌশলে ওপরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

প্রায় ৬ ঘণ্টাব্যাপী এই টানা অভিযানে বিজিবি সদস্যরা সাহসিকতা, পেশাদারিত্ব ও দৃঢ় মনোবলের এক অনন্য নজির স্থাপন করে ১ জন পাচারকারীকে আটক করে ও ৬ জন ভুক্তভোগীকে নিরাপদে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। পর্যায়ক্রমে গহীন পাহাড়ে পাচারকারীদের গোপন আস্তানা হতে ০৩টি ওয়ান শুটার গান, ০১টি একনলা বন্দুক, ০৫ রাউন্ড তাজা গুলি (ওয়ান শুটার গানের) ও ০১ রাউন্ড তাজা গুলি (একনলা বন্দুকের) এবং ০২টি দেশীয় চাকু উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধারকৃত ভুক্তভোগীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত করেছে যে, তাদেরকে অপরাধীদের কয়েকজন দোসর লোভনীয় পারিশ্রমিকের কাজ দেওয়া অথবা বিদেশে কর্মসংস্থানের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে এসে মাথাপিছু ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই সশস্ত্র পাচারকারী চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। অপরাধীরা সশস্ত্র প্রহরায় তাদেরকে পাহাড়ে আটকে রেখে গত এক সপ্তাহ ধরে মুক্তিপণ দাবি ও ভয়ঙ্কর নির্যাতন এবং প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল।

অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে পরিচালিত এই সফল অভিযানটির মাধ্যমে টেকনাফের চূড়া থেকে মোট ৬ জন ভুক্তভোগীকে এই নির্মম পাচারকারীদের কবল থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। আটক পাচারকারী ও উদ্ধারকৃত সকল আলামত যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

আটককৃত পাচারকারী হলেন টেকনাফ সদর ইউপির ১নং ওয়ার্ড করাচিপাড়ার মো. হোছনের পুত্র মো. রুবেল (২১)।

পলাতক আসামিরা হলেন: টেকনাফ সদর ইউপির ১নং ওয়ার্ড করাচিপাড়ার মো. হোছনের পুত্র আব্দুল্লাহ (২৬), মো. হোছনের পুত্র রিয়াজ (৩০), মৃত আব্দুল জব্বারের পুত্র মো. হোছন (৪৬), মো. হোছনের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৪০), সোনা মিয়ার পুত্র রায়হান (২৪), আব্দুর রশিদের পুত্র জয়নাল (২৪), মোহাম্মদের পুত্র আব্দুল্লাহ (২৫) ও মাহাতশাহ মাঝির পুত্র সিরাজ (২৬)।

উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ:
ওয়ান শুটার গান – ০৩টি,
একনলা বন্দুক – ০১টি,
ওয়ান শুটার গানের তাজা গুলি – ০৫টি,
একনলা বন্দুকের গুলি – ০১টি,
দেশীয় চাকু – ০২টি।

তিনি আরও বলেন, বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান, পিএসসি, জানান যে, “মানবতা এবং দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কোনো পাচারকারীকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। এই অভিযান কেবল আমাদের প্রতিশ্রুতিরই প্রমাণ নয়, বরং এই অঞ্চলে অবৈধ কার্যকলাপ ব্যাহত করার সক্ষমতাও তুলে ধরে। আমরা নিয়মিত এই ধরনের অভিযান চালাব যাতে সীমান্তে সকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা যায়।”