জয়ের পর এক ফ্রেমে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল
জাগোজনতা স্পোর্টস : খেলা ছেড়ে পুরোদস্তুর কোচ বনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকা ফ্লয়েড রেইফারকে একরকম ধরেবেঁধে এনে বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক। ২০০৯ সালের ৯ জুলাই সকালে সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভেলে তার নেতৃত্বে টেস্ট খেলতে নামা ক্যারিবীয় দলটি সাজানো হয়েছিল তৃতীয় ও চতুর্থ সারির ক্রিকেটারদের একজোট করে। বেতন-কড়ি নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলায় শীর্ষ ক্রিকেটাররা ধর্মঘটে থাকায় অচেনা সেই দলের দল বেঁধে জিতেছে বাংলাদেশবিপক্ষে দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট জেতার স্বাদ পায় বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় ধরা দেয় প্রথম সিরিজ জয়ও।
ইতিহাস এভাবে লেখা হলেও তখনকার ক্যারিবীয় দলটি বাংলাদেশের সাফল্য নিয়ে একটি প্রশ্ন সব সময় রেখে দিয়েছিল। ১৫ বছর পর জাকের আলীর ৯১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস আর তাইজুল ইসলামের ৫ উইকেটের যুগলবন্দি ১০১ রানের জয় নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবকাশ রাখেনি। এটি যে ক্যারিবীয়দের এই সময়ের সেরা ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া টেস্ট একাদশই ছিল!
এক হিসাবে যা সত্যিকারের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ‘প্রথম’ টেস্ট জয়ও। এই জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১-এর সমতায় শেষ করতে পারল বাংলাদেশ।
যদিও এই ড্রও যে জয়ের সমান, সেটি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ক্যারিবীয় অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েট ও তাসকিন আহমেদের সঙ্গে যৌথভাবে সিরিজসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার নিতে যাওয়া জেডেন সিলসের অন্ধকার মুখ দেখে বোঝা গেছে। মঙ্গলবার জ্যামাইকা টেস্টের চতুর্থ দিনের সকালে জাকেরের পাল্টা আক্রমণ আর পেশির জোরে জয়ের আলোর রেখা দেখতে পায় বাংলাদেশ। শর্ট বলে ক্যারিবীয় পেসাররা তাকে ভড়কে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আলজারি জোসেফকে পুল করে ছক্কায় ফিফটি ছোঁয়ার এক বল পর হুক শটে একই বোলারকে আছড়ে ফেলেন সীমানার বাইরে। ৪৯ বলে ২৯ রান নিয়ে দিন শুরু করা জাকের সঙ্গী তাইজুলের পাশাপাশি অসুস্থতার কারণে ব্যাটিংয়ে পিছিয়ে নামা মমিনুল হককে দ্রুত হারানোর পর বড় শটে আস্থা খুঁজে নেন।
বড় শটের চেষ্টায় ৯ রানের জন্য সেঞ্চুরি না পেলেও যা করেছেন, তা-ও কম নয়। ১০৬ বলে ৮ চার ও ৫ ছক্কায় করা ৯১ রান যে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ম্যাচ জেতানো ইনিংসও।
চতুর্থ দিনে যে ৭৫ রান তোলে বাংলাদেশ, এর ৬২-ই আসে জাকেরের ব্যাট থেকে। তাতে ক্যারিবীয়দের লক্ষ্য ছুড়ে দেওয়া যায় তিন শর (২৮৭) কাছাকাছি। স্যাবাইনা পার্কে এর আগে যেখানে ২১২ রানের বেশি তাড়া করে জেতার নজির ছিল না, সেখানে মধ্যাহ্নভোজের বিরতির ঠিক আগের ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম আঘাত হানা তাইজুল একের পর এক উইকেট তুলে নিতে থাকেন।
ক্যারিয়ারে ১৫তমবারের মতো ৫ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি স্পিনারকে যোগ্য সংগত দেন তাসকিন আহমেদ। তাতে নাজমুল হোসেনের চোটে এই সিরিজে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজও ভাসেন প্রথমানন্দে। তার নেতৃত্বে প্রথম টেস্ট জেতার পর জানালেন অ্যান্টিগায় বাজেভাবে হারার পরই দলের সবার মনোভাবে এসেছিল পরিবর্তন, ‘এই কন্ডিশন সহজ ছিল না। প্রতিটি ক্রিকেটারের জন্যই কঠিন ছিল। তবু সবার এ রকম মানসিকতা ছিল যে ম্যাচটি জিততেই হবে। সবাই মন থেকে ম্যাচটি জিততে চেয়েছে। এ জন্যই আমরা জিততে পেরেছি।’
মমিনুলের অসুস্থতার কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে নিজেকে চার নম্বরে তুলে এনে ৪২ রানের ইনিংস খেলা মিরাজ প্রশংসায় ভেসেছেন হেড কোচ ফিল সিমন্সের, ‘মেহেদীকে নিয়েও আমি মুগ্ধ। তড়িঘড়ি ওকে নেতৃত্ব নিতে হয়েছে। দায়িত্ব বুঝে নিয়ে ও চালিয়ে যাচ্ছে। (এই ম্যাচে) মেহেদী ও তাইজুল একে অন্যকে পরিপূর্ণ করেছে।’