চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সিআরএ’র শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক।
মোনাজাত উদ্দিন বাংলাদেশের মফস্বল সাংবাদিকতা জগতের একটি স্মরণীয় নাম। তিনি শুধু সাংবাদিক নন, নিজেই হয়ে উঠেছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান, গবেষণার বিষয়।
টেবিল-চেয়ারে বসে নাগরিক সাংবাদিকতা নয়, তিনি ছিলেন তৃণমূলের খেটে খাওয়া মানুষের সংবাদকর্মী, ছিলেন আপামর জনসাধারণের সাংবাদিক।
এখনও হাজারো সংবাদকর্মীর প্রেরণার বাতিঘর মোনাজাত উদ্দিন।
খবরের অন্তরালে যেসব খবর লুকিয়ে থাকে, সেসবের তথ্যানুসন্ধান এবং রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতার ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন।
গ্রামের মেঠোপথে ঘুরে ঘুরে এই তথ্যানুসন্ধানী সংবাদকর্মী তাঁর সাংবাদিকতার জীবনে নানা মাত্রিকতার রিপোর্ট করেছেন, পাশাপাশি লিখেছেন জীবনের অভিজ্ঞতা-সমৃদ্ধ নানা ঘটনা।
১৯৪৫ সালের ১৮ জানুয়ারি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। ষাটের দশকে বগুড়া থেকে প্রকাশিত বুলেটিন পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতায় হাতে-খড়ি ঘটে তাঁর।
কর্মময় জীবনে তিনি ঢাকার দৈনিক আওয়াজ, দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ এবং সর্বশেষ দৈনিক জনকণ্ঠে কাজ করেছেন। তিনি দৈনিক রংপুর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। তাঁর সংবাদক্ষেত্র ছিল বাংলার মেঠোপথ ও পিছিয়ে পড়া জনপদ। গ্রাম থেকে গ্রামে হেঁটে দীর্ঘ জীবনে সঞ্চয় করেছেন অগণিত অভিজ্ঞতা। আর এসব অভিজ্ঞতার আলোতেই লিখেছিলেন ১১টি বই।
সংবাদপত্রে অনন্য অবদান ও কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৭ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর), ১৯৮৭ সালে ফিলিপস পুরস্কার, ১৯৭৭ সালে রংপুর নাট্য সমিতির সংবর্ধনা, ১৯৮৪ সালে সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী স্মৃতি পদক, ১৯৮৫ সালে আলোর সন্ধানে পত্রিকার সংবর্ধনা, ১৯৮৬ সালে ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব বগুড়ার সম্মাননা সার্টিফিকেট, ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স পুরস্কার, ১৯৮৮ সালে রংপুর পদাতিক গোষ্ঠীর গুণীজন সংবর্ধনা, ১৯৯০ সালে বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার এবং একই বছর লেখনির মাধ্যমে প্রযুক্তির অন্তর্নিহিত শক্তিকে প্রত্যক্ষ ও জনপ্রিয় করার দুরূহ প্রচেষ্টা চালানোর জন্য সমাজ ও প্রযুক্তি বিষয়ক পত্রিকা কারিগর-এর সম্মাননা লাভ করেন। এছাড়া ১৯৯৫ সালে তিনি মর্যাদাশালী অশোকা ফেলোশিপ অর্জন করেন।
এছাড়াও তিনি আরও বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তবে মোনাজাত উদ্দিন এসব পুরস্কারের চেয়েও বড় পুরস্কার মনে করতেন মানুষের স্নেহ, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাকে, যা তিনি আমৃত্যু পেয়েছেন।
আজ চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানান সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সোহাগ আরেফিন।
আমাদের দেশের মিডিয়া কর্তা ও নগরের সাংবাদিকরা ‘মফস্বল সাংবাদিকতা’ কথাটি শুনলে কেউ প্রকাশ্যে, কেউ গোপনে তাচ্ছিল্য করেন। মফস্বল সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার প্রতি এই উন্নাসিক মানসিকতা বহুকাল ধরে চলে আসছে, এখনও আছে। তবে এই চিন্তায় বড় রকমের বদল ঘটিয়েছিলেন মোনাজাত উদ্দিন নামের এক মফস্বল সাংবাদিক।
সিআরএ’র সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খোকন বলেন, দেশের সাংবাদিকতায় এখন এক ক্রান্তিকাল চলছে। এমন সময়ে মোনাজাত উদ্দিনের মতো সাংবাদিকদের নতুন প্রজন্মের কাছে আরও বেশি করে তুলে ধরা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সে রকম কোনো উদ্যোগ এখন চোখে পড়ে না। সে কারণেই এ প্রজন্মের অনেক সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনকে চেনেই না। কী মফস্বল, কী রাজধানী ঢাকা—সবখানেই সাংবাদিকতার অবস্থা এখন ক্ষয়িষ্ণু। সর্বত্রই অবক্ষয়।











