ঢাকা | ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫ - ৮:৫৮ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম–১৩ আসনে মনোনয়ন ঘিরে অন্তঃকোন্দলে কে পাচ্ছে মনোনয়ন

  • আপডেট: Sunday, October 26, 2025 - 5:54 pm

বদরুল হক, আনোয়ারা, চট্টগ্রাম।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্তের কাজ চলছে পুরোদমে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু আসনের প্রার্থীর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে চলছে প্রার্থীদের বিষয়ে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ২০০টির মতো আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। অক্টোবরেই অনেক প্রার্থীকে দলীয় বার্তা দেওয়া হবে, যাতে তারা আগে থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেন। চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থী তালিকায় বিএনপির সঙ্গে রাজপথে থাকা সমমনা দলের কয়েকজন নেতার নামও আছে। তফসিল ঘোষণার পর বাকি প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দলের হাইকমান্ড। খুব শিগগিরই আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে মাঠে কাজ করার জন্য ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেবে বিএনপি।

চট্টগ্রাম–১৩ (আনোয়ারা–কর্ণফুলী) সংসদীয় আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়নকে ঘিরে স্থানীয় রাজনীতিতে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী অর্ধ-ডজনেরও বেশি নেতা মাঠে সক্রিয় হয়ে পড়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ও বিভাজন দেখা দিয়েছে। গ্রুপিংয়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা দিয়েছে আনোয়ারা উপজেলায়। আনোয়ারায় মোট ভোটার সংখ্যা ২,৩৩,১০৯ জন হলেও শুধু ওই উপজেলায় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় নাম রয়েছে অন্তত ৬/৭ জনের। ফলে সেখানকার বিএনপির রাজনীতিও ৬/৭ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বলা যায়।

অন্যদিকে, কর্ণফুলী উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ১,৩১,৬২৫ জন হলেও এই উপজেলায় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কিংবা গ্রুপিংয়ের সংখ্যা খুবই কম বললেই চলে। কর্ণফুলীতে মূলত উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস. এম. মামুন মিয়ার নেতৃত্বে সক্রিয় পুরো কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। যার ফলে চট্টগ্রাম–১৩ (আনোয়ারা–কর্ণফুলী) সংসদীয় আসনে বিএনপির একক ভোটব্যাংকের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে কর্ণফুলী উপজেলা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলীয় নেতা-কর্মীদের বাকযুদ্ধ ও আক্রমণাত্মক আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের দৃশ্যপট। অনেকেই অভিযোগ করছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের প্রচারণার আড়ালে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে চলছে নিজস্ব বলয় তৈরির প্রতিযোগিতা।

বিএনপির পক্ষ থেকে এই আসনে মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন একাধিক পরিচিত মুখ। বিএনপির মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বর্তমানে আসনটিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস. এম. মামুন।

তার মতোই মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস, আসনটির সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এহসান এ খান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোরশেদুল আলম, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আবু নিপার চৌধুরী, অ্যাডভোকেট লোকমান শাহ—এদের নামেও আলোচনা চলছে জোরেশোরে।

স্থানীয় সূত্র ও একাধিক দলীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনোনয়নপ্রত্যাশী লায়ন হেলাল উদ্দিন ও সরওয়ার জামাল নিজামের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে আনোয়ারা উপজেলায় দলীয় কর্মীদের মধ্যে বেশ কয়েক দফা হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনাও ঘটেছে।

বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বলেছেন, বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এত নেতা আমরা কখনো দেখিনি। হরতাল-অবরোধের সময় আমরা এস. এম. মামুন মিয়াসহ হাতে গোনা দুই-একজন নেতা ছাড়া আর কাউকে রাজপথে দেখিনি। আমাদের বিপদের সময় মামুন মিয়াকে ছাড়া আর কাউকে পাশে পাইনি। এখন যারা লিফলেট নিয়ে ধান্ধা শুরু করেছে, তারা সবাই বসন্তের কোকিল—এখন বসন্ত এসেছে তাই তারাও গর্ত থেকে বের হয়েছে। যখন নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে, তারা আবারও গর্তে ঢুকে যাবে—যেভাবে তারা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিপদে রেখে পালিয়ে ছিল, সেভাবেই পালাবে।

আমরা চাই, যে দলের দুর্দিনে হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে ছিল, যে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পাশে ছিল—তাকে যেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই আসনে ধানের শীষে মনোনয়ন দেন। অন্যথায় এই আসনে বিএনপির ভোট একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চট্টগ্রাম–১৩ আসনটি বিগত দিনগুলোতে রাজনৈতিক পালাবদলের সাক্ষী। বিএনপি একসময় এই আসনে আধিপত্য বিস্তার করলেও বিগত বছরগুলোতে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান কিছুটা দুর্বল হয়েছে। ফলে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে বিএনপির একক প্রার্থী বাছাই করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই আসনে বিএনপি সঠিক প্রার্থী বাছাই করতে পারলে আসনটি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তবে এজন্য প্রয়োজন হবে অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও কৌশলগত পরিকল্পনা। কিন্তু এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল নির্বাচনী মাঠে তাদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। একাধিক প্রার্থী ও বিভক্ত কর্মীসংগঠন নিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রচার গড়া এখন দলের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।