চট্টগ্রাম বন্দরের ইজারা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগ্রাবাদ মোড়ে বাম সংগঠনগুলোর বিক্ষোভ সমাবেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বামপন্থী দল, পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের উদ্যোগে ঐক্যবদ্ধভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বক্তারা সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ‘দেশবিরোধী চক্রান্ত’ উল্লেখ করে বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীদের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদ মোড়ে ‘বন্দর রক্ষায় চট্টগ্রামের শ্রমিক-ছাত্র-পেশাজীবী-নাগরিকবৃন্দ’ ব্যানারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শফি উদ্দিন কবির আবিদ বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরে পানির গভীরতা মাত্র ৯ মিটার, অথচ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও আবুধাবির বন্দরের গভীরতা ১৭ থেকে ২৫ মিটার। সেসব বন্দরে ২৫টি জাহাজ একসঙ্গে প্রবেশ করতে পারে, কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে পাঁচটির বেশি জাহাজ ঢুকতে পারে না। তবুও তুলনা টেনে বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে—এটা নিছক ষড়যন্ত্র।”
তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও কেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেরাই বন্দর পরিচালনা করতে পারবে না—এর জবাব জাতি জানতে চায়। আড়াই হাজার কোটি টাকা মুনাফা করা একটি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হাস্যকর। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত।”
বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে একমাত্র সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসুন। সরকার এই বন্দরের ইজারা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন দমন করতে সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, কিন্তু জনগণের কণ্ঠরোধ কেউ করতে পারবে না।”
সভাপতির বক্তব্যে গণমুক্তি ইউনিয়নের সভাপতি রাজা মিঞা বলেন, “ডিপি ওয়ার্ল্ডকে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দেওয়ার যে চক্রান্ত চলছে, তা শুরু করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। তাহলে তার পতনের পর বর্তমান সরকার কেন সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে—এ প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।” তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষায় আজ দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সরকারকে সতর্ক করছি—এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুন, নইলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।”
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি খোরশেদ আলম, স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক রিজওয়ানুর রহমান, বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সেক্রেটারি ইব্রাহিম খোকন, ডক শ্রমিক দলের সেক্রেটারি আখতারউদ্দিন সেলিম, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সেক্রেটারি জাহিদউদ্দিন শাহীন, গণঅধিকার চর্চা কেন্দ্রের মশিউর রহমান খান, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার পরিষদের সিঞ্চন ভৌমিক, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সেক্রেটারি জাহেদুন্নবী কনক, বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল সভাপতি হুমায়ুন কবির, আবদুল্লাহ আল মামুন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সভাপতি ধ্রুব বড়ুয়া এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট নগর দফতর সম্পাদক লাবণী আকতার।
সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়—বন্দর ইজারার সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে ২৭ অক্টোবর ঢাকায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ এবং ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) অনশন কর্মসূচিতে সংহতি জানানো হবে।











