ঢাকা | আগস্ট ২, ২০২৫ - ৭:১৪ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

গলদা চিংড়ি উৎপাদনে বাগেরহাট প্রথম

  • আপডেট: Friday, August 1, 2025 - 10:37 am

জাগো জনতা অনলাইন: বাংলাদেশে গলদা চিংড়ি উৎপাদনে বাগেরহাট শীর্ষে রয়েছে। সমগ্র দেশের মধ্যে বাগেরহাটে চিংড়ি উৎপাদনের হার ৩৪%.বাংলাদেশের মিঠা পানিতে সব এলাকাতেই গলদা চাষ করা সম্ভব তবে পিএল প্রাপ্যতার অভাবে সব জায়গায় চাষিরা ব্যাপক পরিসরে চাষ করতে পারেনা।

‎আমাদের গলদা চিংড়ি বিশ্বে সুস্বাদু হিসেবে পরিচিত। গলদার উল্লেখযোগ্য ক্রেতা এখন বাংলাদেশেই বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি ও নেদারল্যান্ডে ভালো ক্রেতা রয়েছে। এমনকি আরববিশ্ব, ভারত, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াও চিংড়ি নিয়ে থাকে।

‎সর্বশেষ ২০২৩-২০২৪অর্থবছরে বাগেরহাটে গলদা চিংড়ি উৎপাদন হিসেবে জেলায় ২৩ হাজার ২শ ৫৮ হেক্টর জমিতে ৫৪ হাজার ৮ শ ৪৮ টি গলদা ঘেরে মোট চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে মোট ৩২ হাজার ৬৩০.৯৫ মেট্রিক টন। এর পাশাপাশি রুই কাতলা মৃগেল, পুটিসহ সাদা মাছের উৎতপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৯১৪.২১ মেট্রিক টন। যার প্রতি মন বাজারে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।

‎জেলার ৯ টি উপজেলার মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৭ শ ৬১ হেক্টর জমিতে মোট ৮ হাজার ৪ শ ৬৫ টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন ৯ হাজার ২ শ ৫২ মে. টন। কচুয়া উপজেলায় ১হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৪শ ৫১ টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন ১ হাজার ২৬ মে. টন। মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ৭শ ১৩ হেক্টর জমিতে মোট ১হাজার ১ শ ৭০ টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন ১হাজার ৮ শ ৮৬ মে.টন।

‎চিতলমারি উপজেলায় ৫ হাজার ৯ শ ২০ হেক্টর জমিতে মোট ১৫ হাজার ২শ ৩৭টি ঘেওে মোট চিংড়ি উৎপাদন ৮ হাজার ৮ শ ৩.০০ মে. টন। ফকিরহাট উপজেলায় ২হাজার ৬ শ ৩০ হেক্টর জমিতে মোট ৫ হাজার ৭ শ ৭৯ টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন ৩ হাজার ৮ শ ৫৫.২৫ মে. টন। মোল্লাহাট উপজেলায় ৪ হাজার ৯৩ হেক্টর জমিতে মোট ১২ হাজার ৭ শ ৪০ টি ঘেরে চিংড়ি উতৎাদন ৫ হাজার ৮ মে.টন।

‎রামপাল উপজেলায় ১ হাজার ৬ শ ৩০ হেক্টর জমিতে মোট ৪ হাজার ৮ শ ৯০ টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন ১ হাজার ৫ শ মে. টন। মোংলা উপজেলায় ৮ শ ৬৯ হেক্টর জমিতে মোট ১ হাজার ৮ শ ৫০ টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন ৭ শ ২৮.৭ মে. টন। শরনখোলা উপজেলায় ৬ শ ২৭ হেক্টর জমিতে মোট ১ হাজার ২ শ ৬৬ টি ঘেরে চিংৎি দন ৫ শ ২২ মে. টন।

‎গলদা চিংড়ি বাংলাদেশের জি আই (এও) পন্য হিসেবে স্নীকৃত। স্থানীয় পর্যায়ে গ্রেড অনুযায়ী ১ কেজি গলদা ১ হাজার ৬ শ টাকা আর বিদেশে গড়ে ১ হাজার টাকা কেজি হলে মোট উৎপাদিত গলদা ৩২ হাজার ৬৩০.৯৫ মেট্রিক টনের মূল্য আসে ১০০০ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। প্রতি হেক্টর জমিতে মাছের রেনু পোনা, খাবার ও পরিচর্যায় সর্বোচ্চ ব্যায় হয় ২ লাখ ৪৪ হাজার থেকে ২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। কিন্তু ওই প্রতি হেক্টরে চাষি মাছ বিক্রি করেন ৫ লাখ টাকা, যার অর্ধাংশ মুনাফা অর্জনের অর্থনৈতিক দ্বার উন্মোচিত হয় এবং স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবার নিয়ে সুখে জীবন যাপন করতে পারেন।

‎বাগেরহাট সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদৌস জানান, বাগেরহাটে ক্রমশ গলদা চিংড়ি চাষে অনেকেই ঝুকে পড়ছেন, গলদার দাম স্থানীয় বাজারেও অধিক দামে বিক্রি হচ্ছে।

‎মৎস্য অধিদফতর বাগেরহাট জেলা কর্মকর্তা ড.আবুল কালাম আজাদ জানান, চাষি ঘেরে মাছ না পেলে ভাইরাসে মারা গেছে এ প্রসংগে তিনি তার বাস্তব অভিজ্ঞতা ও গবেষণার ফলশ্রুতিতে বলেন, সুস্থ ও সবল পিএল ১-১.৫ মাস নার্সিং কওে ঘেরে ছাড়া হলে চিংড়ির বাঁচার হার বাড়ে। কিন্তু অনেক চাষি নার্সিং ব্যতিরেকে সরাসরি ছোট ও দুর্বল পিএল ঘেরে মজুদ করায় বাঁচার হার ভাল হয় না এবং এতে করে চাষ লাভজনক হয় না। তাছাড়া গলদা স্বজাতিভোজী, তাই একই আকারের একই জাতের এবং একই বয়সের পিএল ছাড়া হলে এবং খোলস পাল্টানোর জন্য ঘেরে পর্যাপ্ত আশ্রস্থল স্থাপন করা থাকলে চিংড়ির বাঁচার হার বাড়ে। চিংড়ি ঘেরের গভীরতা বাড়ানো গেলে গলদার জন্য অনুকূল তাপমাত্রা ও পানির গুণগত মান বজায় রাখা সহজ হয় এবং ভাল উৎপাদনমেলে। অনুকূল পরিবেশে মাত্র ৬ মাসের চাষ ব্যবস্থাপনাতেই বিক্রয়যোগ্য আকারের গলদা পাওয়া যায়।

‎তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে এই জেলার ফকিরহাটের কেরামত আলী ১৯৭৭ সালে সর্বপ্রথম গলদা চাষ শুরু করেন। তার অসাধারণ সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়ায় শত সহস্র কৃষক চিংড়ি চাষে ভাগ্য পরিবর্তনে সচেষ্ট হন। ফকিরহাট পরিচিতি পায় বাংলার কুয়েত নামে, এই সাদা সোনা চিংড়ি চাষে। শাপলা ও ঢ্যাপ খেয়ে দিনানিপাত করা মানুষের চোখে মুখে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন ধরা দেয়।