ঢাকা | অক্টোবর ৬, ২০২৫ - ১:০০ অপরাহ্ন

শিরোনাম

খাগড়াছড়িতে ৪ দিনের অবরোধ প্রত্যাহার, ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে চাঞ্চল্যকর মোড়

  • আপডেট: Tuesday, September 30, 2025 - 11:15 pm

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :

খাগড়াছড়িতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের প্রতিবাদে টানা চার দিন ধরে চলা জুম্ম ছাত্র-জনতার অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। শারদীয় দুর্গোৎসবকে সম্মান জানিয়ে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে উত্থাপিত ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে: যে স্কুলছাত্রীর ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে পুরো অঞ্চল উত্তপ্ত হয়েছিল, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি ধর্ষণের শিকার হননি।

আজ মঙ্গলবার রাত ৯টায় জুম্ম ছাত্র-জনতার ফেসবুক পেজের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অবরোধ কর্মসূচিটি আজ রাত ১১টা থেকে আগামী ৫ অক্টোবর অথবা পরবর্তী কোনো ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর এক স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতা আন্দোলনে নামে। এর ধারাবাহিকতায় ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর অবরোধ চলাকালে গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

গতকাল সোমবার খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সভায় ছাত্র-জনতার একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে। প্রতিনিধি দল প্রশাসনের কাছে ৮ দফা দাবি উপস্থাপন করলে, প্রশাসন তা পূরণের আশ্বাস দেয়।
প্রশাসনের নেওয়া উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ:
* প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করা হলে ১৪৪ ধারাও তুলে নেওয়া হবে।
* গুইমারার ঘটনার তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
* জুম্ম ছাত্র-জনতার সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে আজ দুপুরে গুইমারায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা, জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার, পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েলসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

অবরোধের মূল কারণ ছিল পাহাড়ি ওই কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ। কিন্তু গতকাল সোমবার এই ঘটনায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদন জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ছাবের আহম্মেদ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদনে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। গঠিত তিন সদস্যের বোর্ডের প্রধান জানিয়েছেন, ওই ছাত্রীর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই এবং সে ধর্ষণের শিকার হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আরেফিন জুয়েল বলেন, “বিষয়টি একদম পরিষ্কার হয়ে গেলো। আসলে ধর্ষণের ঘটনাই ঘটেনি। মিথ্যা একটা অভিযোগ তুলে পুরো পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল একটি গোষ্ঠী।”

অবরোধ চলাকালে গত রবিবার বিক্ষোভ ও সহিংসতায় গুইমারার রামেসু বাজার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই সময় গুলিতে তিন জন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর লোক নিহত হন এবং সেনাবাহিনীর মেজরসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার রাতে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সহিংসতার জেরে সদর উপজেলা, পৌরসভা এলাকা এবং গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।

পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল জানিয়েছেন, বর্তমানে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল রয়েছে এবং সোমবার থেকে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে, গত মঙ্গলবার রাতে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া শয়ন শীল নামের এক ব্যক্তি বর্তমানে আদালতের নির্দেশে ছয় দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।