খাগড়াছড়িতে মডেল মসজিদে হামলার ঘটনায় উত্তেজনা, অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।।
পার্বত্য খাগড়াছড়িতে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ডাকা অবরোধ চলাকালে ভয়াবহ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় সন্ত্রাসীরা খাগড়াছড়ি উপজেলার কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদে হামলা চালায়। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় বলে দাবী স্থানীয়দের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের দিকে একদল মুখোশধারী সন্ত্রাসী হঠাৎ মসজিদে প্রবেশ করে দরজা-জানালা ভাঙচুর করে ভেতরে তাণ্ডব চালায়। এসময় নামাজরত মুসল্লিরা দিশেহারা হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বিভিন্ন দিকে ছুটোছুটি করেন। শুধু ধর্মীয় স্থাপনাই নয়, হামলাকারীরা আশপাশের দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করে এবং রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে সাধারণ পথচারীদের নির্বিচারে মারধর করে। এতে নারী-শিশুসহ অনেকে আহত হয়েছেন।
এর আগে, খাগড়াছড়ি সদরের এক স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের বিচারের দাবিতে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি পালন করছিল জুম্ম ছাত্র-জনতা। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দুপুরের পর হঠাৎ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এসময় মহাজনপাড়া এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হামলাকারীরা শুধু সম্পদ ধ্বংস ও অগ্নিসংযোগেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং গুলি বর্ষণ করে পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। এতে অন্তত অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। তবে হতাহতের সঠিক সংখ্যা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এই সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসন শনিবার দুপুর ২টা থেকে খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও জননিরাপত্তার স্বার্থে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ মোতাবেক এ আদেশ দেওয়া হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে। ১৪৪ ধারা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত সর্বত্র প্রচারের জন্য জেলা তথ্য অফিসকে মাইকযোগে ঘোষণা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে পুরো খাগড়াছড়ি শহর ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে গেছে, বাজার-দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। সর্বত্র নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।
ধর্মীয় স্থাপনায় হামলার ঘটনায় স্থানীয় মুসল্লিসহ সাধারণ মানুষ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একইসাথে পাহাড়ি-বাঙালি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের যে কোনো অপচেষ্টা রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল।