কেনিয়ায় চুক্তি বাতিল,মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্ট্রেলিয়ায় কঠিন বিপাকে আদানি
জাগোজনতা নিউজ ডেস্ক : আদানির বিরুদ্ধে ২৫ কোটি ডলার ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্র এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে তথ্য গোপন করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়।
মার্কিন প্রসিকিউটরদের কাছ থেকে জালিয়াতির অভিযোগ তোলার পর নতুন করে ঝামেলায় পড়েছেন ভারতের আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি।
জালিয়াতির খবর পাওয়ার পর আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বড় দুটি চুক্তি বাতিল করে দিয়েছেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুতো।
এর মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ায় আদানির একটি কয়লা খনিতে মানবাধিকারের অভিযোগ উঠেছে।
কেনিয়ায় চুক্তি বাতিলের ঘোষণা বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জানিয়ে দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুতো।
ভাষণে তিনি বলেন, “আমাদের তদন্ত সংস্থা ও অংশীদার দেশগুলোর দেওয়া নতুন তথ্যের ভিত্তিতে চুক্তিগুলো বাতিল করা হয়েছে। যদি দুর্নীতির বিষয়ে নিশ্চিত প্রমাণ বা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আসে, আমি কঠোর পদক্ষেপ নিতে পিছপা হব না।”
তার এই বক্তব্যে কেনিয়ার সংসদ সদস্যরা উচ্ছ্বসিত।
আদানি গ্রুপ কেনিয়ার প্রধান বিমানবন্দরে ১৮৫ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছিল। চুক্তি অনুযায়ী, তারা সেটি ৩০ বছর পরিচালনা করার কথা ছিল।
বিমানবন্দর প্রকল্পের অধীনে নতুন রানওয়ে এবং জোমো কেনিয়াট্টা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে উন্নত যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনাও ছিল।
এছাড়া, বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন স্থাপনে কেনিয়ার জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ৭৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের একটি চুক্তিও ছিল আদানি গ্রুপের।
তবে এই চুক্তিগুলো কেনিয়ার মানুষ খুব একটা সন্তুষ্ট ছিল না। অনেকেই দুর্নীতির আশঙ্কা করছিল।
এই চুক্তির ফলে অনেক কর্মী চাকরি হারাতে পারেন ভেবে বিমানবন্দর চুক্তি নিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে বিমানবন্দর কর্মীরা ধর্মঘটও শুরু করেছিলেন।
যদিও জ্বালানি মন্ত্রী অপিও ওয়ানডায়ি বৃহস্পতিবার সংসদীয় কমিটিতে বলেছেন, বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি বা ঘুষের ঘটনা ঘটেনি।।
প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুতো দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। বিশেষ করে, তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে বারবার ওঠা অভিযোগগুলোর প্রেক্ষিতে।
তিনি আরও জানান, তার সরকার এখন বিমানবন্দর ও জ্বালানি প্রকল্পের জন্য নতুন অংশীদার খুঁজতে কাজ শুরু করবে।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ায় আদানির কয়লা খনির কর্মীদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের নাগানা ইয়ারবাইন ওয়াঙ্গান অ্যান্ড জাগালিংগু কালচারাল কাস্টোডিয়ানস জানিয়েছে, ব্রাভাস মাইনিং অ্যান্ড রিসোর্সেস ইউনিটের বিরুদ্ধে গুরুতর বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ এনে তারা এ সপ্তাহের শুরুতে অভিযোগ দায়ের করেছে।
রয়টার্স জানায়, অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আদানির কর্মীরা আদানির কারমাইকেল কয়লা খনির কাছে আদিবাসী গোষ্ঠীর সদস্যদের বিভিন্নভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে।
নাগানা ইয়ারবাইনের সিনিয়র কালচারাল কাস্টোডিয়ান আদ্রিয়ান বুরাগুব্বা এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা বছরের পর বছর ধরে আদানির কাছ থেকে বৈষম্য সহ্য করেছি, আর সহ্য করা যাচ্ছে না।”
তারা বলেন, “গত বছর আমাদের আইনজীবীরা আদানির কর্মীদেরকে তাদের উদ্বেগজনক আচরণের জন্য নোটিস দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও তারা এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে অস্বীকার করেছেন। তাই আমরা মনে করি, আইনি আশ্রয়ই একমাত্র সমাধান।”
এর আগে, প্রতারণার এক মামলায় ভারতের আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত।
তার বিরুদ্ধে ২৫ কোটি ডলার ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্র এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে তথ্য গোপন করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়।
আদানি গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটরদের আনা অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অস্বীকার করেছে।
বিবিসি লিখেছে, আদালতের এই পদক্ষেপ ৬২ বছর বয়সী ধনকুবের আদানির জন্য নতুন এক ধাক্কা, যার ব্যবসার সাম্রাজ্য ছড়িয়ে আছে বন্দর ব্যবস্থাপনা থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পর্যন্ত।