ঢাকা | নভেম্বর ২১, ২০২৪ - ১২:২৬ অপরাহ্ন

শিরোনাম

কালিয়ায় বীর নিবাস নির্মাণের কাজ বন্ধ করে চাঁদা দাবি, পুলিশ দিয়ে হয়রানির অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারকে

  • আপডেট: Friday, September 29, 2023 - 12:11 pm

কালিয়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাঐসোনা গ্রামে বীর নিবাস নির্মাণের কাজ বন্ধ করে চাঁদা দাবী করার অভিযোগ উঠেছে। চাঁদা না পেয়ে পুলিশ দিয়ে হয়রানির অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর উপজেলার বাঐসোনা গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলীর বিধবা স্ত্রী রেহানা পারভীনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে রোজানা পারভীন গত ২৮ সেপ্টেম্বর ইউএনও ও নড়াইলের পুলিশ সুপারসহ উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মান প্রকল্প ২ এর আওতায় রেহেনা পারভীনের নামে একটি বীরনিবাস বরাদ্দ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যায় বরাদ্দ দিয়ে মেসার্স রুমা এন্টার প্রাইজকে কার্যাদেশ দেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। ঠিকাদার রেহানার নিজস্ব জমিতে নির্মাণ সামগ্রী জমা করার পর গত ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টার দিকে উপজেলার ফুলবদিনা গ্রামের মৃত বাবু মোল্যার ছেলে হাসিবুর মোল্যা ও গোপলগঞ্জ জেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের মৃত হোসেন মোল্যার ছেলে হাবিবুর রেহানার বাড়িতে গিয়ে বীরনিবাস নির্মান বাবদ ১লাখ ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে।রেহানা চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন। তখণ তাকে বীরনিবাস নির্মান কাজ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন তারা। এরপর গত ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ঠিকাদারের শ্রমিকরা এই বীরনিবাসটির নির্মান কাজ শুরু করলে দুপুর দেড় টার দিকে হঠাৎ উপজেলার নড়াগাতি থানার এস আই মো. আসাদুজ্জামান ওই দুই জনকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঠিকাদারের শ্রমিকদের আটকের হুমকি দিয়ে নির্মান কাজ বন্ধ করে দেন। শুধু তাই নয় এস আই আসাদুজ্জামান মৃত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজনের সাথে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করাসহ আশালীন আচরন করে। এরপর ওই এস আই শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫ টায় মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে নড়াগাতি থানায় হাজির হয়ে তার সাথে সমাধান না করা পর্যন্ত নির্মানকাজ বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশ দিয়ে চলে যান।

মেসার্স রুমা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. লিটু শেখ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, পুলিশ তার নির্মান কাজের স্থলে এসে জোর করে তার শ্রমিকদের উঠিয়ে দিয়ে নির্মান কাজ আটকে দিয়েছে। শুধু তাই নয় শুক্রবার বিকালে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে  থানায় গিয়ে এস আই আসাদুজ্জামান ও তার সহযোগিদের সাথে আপোষ না করা পর্যন্ত বীর নিবাসের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশ জারি করেছেন।

রেহানা পারভীন অভিযোগ করে বলেন, বীরনিবাস নির্মাণের মালামাল আসতে শুরু করার পর থেকে হাবিবুর মোল্যা ও হাসিবুর মোল্যা গত কয়েক দিন ধরে তার কাছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। টাকা না দিলে সে পুলিশ দিয়ে আমার বীর নিবাসের কাজ বন্ধ করার হুমকি দিয়ে আসছিল। তারই জের ধরে এস আই আসাদুজ্জামান ওই দুই জনের সাথে যোগ সাজসে তার বাড়ির নির্মান কাজ আটকে দিয়ে থানায় গিয়ে মিমাংশার নামে তাদেরকে হয়রানি করছে।

হাবিবুর মোল্যার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে হাসিবুর মোল্যা চাঁদা দাবির সত্যতা অস্বীকার করে বলেছেন, তারা ওয়ারিশ হিসাবে জমির একটি অংশ দাবি করেন। তাই এই নির্মান কাজ ঠেকাতে তার ভায়রা হাবিবুর এস আই আসাদুজ্জামানকে ফোনে ডেকে নেন এবং ১ হাজার টাকার বিনিময়ে পুলিশ কাজটি বন্ধ করেছেন বলে জানান তিনি।

নড়াগাতি থানার এস আই আসাদুজ্জামন বীর নিবাসের কাজ বন্ধ করার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, জমির মালিকানা নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে তাই তিনি কাজ বন্ধ করে থানায় মিমাংশার জন্য যেতে বলেছিলেন। তবে কাজটি বন্ধ করতে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কোন নির্দেশনা ছিল না বলে জানান তিনি। মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সাথে আশালীন আচরনের অভিযোগ অস্বীকার করে এস আই আসাদুজ্জামন জানান, এ ধরণের কোন আচরণ করা হয়নি।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মাকলুকার চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, যথাযথ কতৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে একটি বীর নিবাসের কাজ বন্ধ করা ও একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীও পরিবারের লোকজনের সাথে আশোভন আচরন খুবই দু:খ জনক। তিনি এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।

নড়াগাতি থানার ওসি সুকান্ত সাহা বলেছেন, ঘটনার বিষয়ে তিনি আগে কিছু জানতেন না। পরবর্তীতে ইউএনওর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন।

কালিয়ার ইউএনও রুনু সাহা অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন,  বিষয়টিতে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।